দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
নির্যাতিত নসিমন চালকের দয়ায় মামলার হাত থেকে ছাড় পেলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান ভূইয়া। ওই চালক মানবিক কারনে বৃদ্ধ সাদেকুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করতে অনীহা প্রকাশ করায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কাছে মুচলেকার মাধ্যমে তাকে মঙ্গলবার বিকেলে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে ছাড়া পাওয়ার পর মেয়র সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন বিষয়টি নিয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন তিনি মারধর করেছেন। কিন্তু কেন মারধর করেছেন ফেসবুকে প্রকাশিত ওই ভিডিওতে দেখানো হয়নি।
জানাগেছে, মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নির্যাতিত চালক জামালের বাবা ও বড় ভাই গিয়ে মেয়রের উপর তাদের কোন অভিযোগ নেই দাবি করলে তারা জিম্মা নামায় সই করে ছাড়িয়ে আনেন পৌর মেয়র সাদেকুর রহমানকে। মেয়র সাদেকুর রহমান বাংলাদেশ ক্যামিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতির পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে মঙ্গলবার গভীর রাতে সোনারগাঁও পৌরসভার মেয়র সাদেকুর রহমানের বাসা ভবন গোয়ালদি এলাকা থেকে আটক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে মেয়র সাদেকুর রহমানকে নেয়া হয় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। সেখানে সাদেকুর রহমানকে ব্যাপক জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়। পরে নির্যাতিত জামালের বাবা খবিরউদ্দিন ও ভাই কামাল হোসেনকে ডেকে নেয়া হয় নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। তাদের সাথে কথা বলেন পুলিশের উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা। সেখানে জামালের বাবা ও ভাই বলেন, যা হওয়ার হয়ে গেছে তা নিয়ে এখন দুঃখ করে কি লাভ। মেয়র মুরুবী মানুষ তিনি নানান রোগে অসুস্থ উনার উপর আমাদের অভিযোগ নেই। আমরা তার বিরুদ্ধে কোন আইনি পদক্ষেপ নেবনা। তাদের বক্তব্য শোনার পর মেয়রকে মানবিক দিক বিবেচনা করে একজনের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোরশেদ আলম জানান, গত শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের সামনে সোনারগাঁও পৌরসভার মেয়র সাদেকুর রহমান তার গাড়ীতে বাঁশের আঁচড় লেগেছে এ অভিযোগে নসিমন চালক জামাল ও ছোট ভাগিনা নির্যাতন বেদম পিটিয়ে আহত করেন। আহত জামাল ও তার ভাগিনাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে স্থানীয়রা।
এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর মঙ্গলবার গভীর রাতে পৌর মেয়র সাদেকুর রহমানকে আটক করে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশ। সেখান থেকে সকালে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। পরে নির্যাতিত জামালের বাবা ও ভাইকে ডাকা হয় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। সেখানে তারা জানান, নির্যাতিত মেয়রের উপর তাদের কোন ক্ষোভ ও কোন অভিযোগ নেই এবং তারা মেয়রের বিরুদ্ধে কোন আইনি পদক্ষেপ ও নিবেন না। পরে মেয়রকে বয়স ও শারীরিক দিকে চিন্তা করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় মানবিক কারনে মুচলেখা দিয়ে একজনের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এনামুল হক জানান, ‘যাদের মারধর করা হয়েছিল তারা কোনো মামলা বা আইনগত ব্যবস্থা নেননি। উপরন্তু তারা আপোস করেছেন। সেই কারণেই মুচলেকায় সাদেকুর রহমানকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া তার শারীরিক অবস্থারও অবনতি ঘটেছিল।’
মেয়র সাদেকুর রহমানকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ সুপারের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ জানান, পৌর মেয়র সাদেকুর ৮০ বছরের বয়স্ক লোক, বর্তমানে তিনি অসুস্থ। তাই তাঁকে মেডিকেল গ্রাউন্ডে শর্তসাপেক্ষে জিম্মা প্রদান করা হয়েছে।