সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদারদের কবল থেকে বাংলার স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল এদেশের মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীনতার স্বাদ এদেশের মানুষের ভাগ্যে জুটেনি। বাকশালী শাসন কায়েম করে এদেশের মানুষের সকল অধিকার হরণ করা হয়েছিল। তখন সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশে গণতন্ত্র পুণ:প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজ সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিন মহান ৭ নভেম্বর। এদিনের শপথ হোক স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে বাংলার গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশের মানুষের হারানো অধিকার ফিরিয়ে দেয়া।
৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়ার অনুষ্ঠানে প্রধাণ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব মার্কেটের তৃতীয় তলায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এই আইনজীবী নেতা আরো বলেন, যুগে যুগে বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচারী সরকারের কবল থেকে দেশ মাতৃকাকে রক্ষা করেছে। এবারেও স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনা করে গণতন্ত্রের বিজয় ছিনিয়ে আনা হবে। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতে বিচার বিভাগের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। কারাগারে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে ৭৫ বছরের একজন বৃদ্ধাকে তিলে তিলে মেরে ফেলতে চাইছে শেখ হাসিনার জালিম সরকার। তাই আর দেরি করার সময় নেই, বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে এখনই আমাদের সবাইকে ঝাঁপিয়ে পরতে হবে। রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই বাংলাদেশের মানুষ তাদের হারানো অধিকার আবারো ফিরে পাবে। সে আন্দোলনে সবাইকে শরিক হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গণের একজন বীর যোদ্ধা যিনি দেশ মাতার টানে নিজর জীবন বাজি রেখে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন সে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা তার শেষ ইচ্ছাটিও পূলণ করে যেতে পারেননি, পারেননি যে দেশকে যুদ্ধ করে মুক্ত করলেন সে দেশের মাটিতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য এরচেয়ে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে! মরহুম সাদেক হোসেন খোকা অভিবক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, মন্ত্রী ও এমপি ছিলেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি বর্তমান প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে ঢাকা থেকে এমপি নির্বাচিত হন। অথচ এই অবৈধ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে তাকে দেশের বাইরেই প্রাণ দিতে হলো। আমরা আজকে মহান এই নেতাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেনো তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন।
সাখাওয়াত বলেন, কয়েকদিন আগেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মান নিতে অসম্মতি জানিয়ে গেছেন। বেঁচে থেকে যে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্মান তিনি পাননি, মৃত্যুর পর তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে এ পৃথিবী ত্যাগ করেছেন। মুখে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বললেও এ সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও অবহেলা আর অসম্মান করছে।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে ইঙ্গিত করে সাগর প্রধান বলেন, আপনি সিদ্ধিরগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। আমি গাজী ইসমাইলের কবর জিয়ারত করে নেতাকর্মীদের নিয়ে দোয়া মাহফিল করেছি। আপনি সিদ্ধিরগঞ্জের অনুষ্ঠানে নানা মন্তব্য করেছেন। আপনাকে বলতে চাই আপনি আমাদের চোখ রাঙাবেন না। চোখ রাঙাবেন আপনার বাড়ির কর্মচারীদের সাথে, আমাদের সাথে না।
সাগর প্রধান আরও বলেন, যারা ৫ লাখ টাকা কমিটি বানিজ্যের অভিযোগ তুলেছিল তাকেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আরও অনেকেই অর্থের অভিযোগ তুলেছিল। আমরা এসব বলতে চাই না। বললে অনেক কিছুই বলা যায়। সুতরা আমাদের নিয়ে কটুক্তি করবেন না।
তিনি বলেন, আমরা চাইনি মহানগর যুবদলের ব্যানারে আলাদা কর্মসূচি পালন করতে। আমরা বাধ্য হয়েছি। দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আপনারা কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। আমরা পেরেছি। যুবদলের নেতাকর্মীদের অধিকার আদায়ে প্রতিবাদ করেছি। আমরা বলেছিলাম শীর্ষ যে কজন নেতা রয়েছেন তাদের সাথে কথা বলে সকলের কাছ থেকে দু চারজন করে নাম নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হোক। কিন্তু সেটা তারা মানেনি। আজকে মহানগরীর যুবদলের রাজনীতিতে জড়িত তাদেরকেও মহানগর যুবদলে রাখা হয়নি। তারা বাধ্য হয়ে জেলা যুবদলে গিয়েছে। যেমন পারভেজ মল্লিক মহানগরীতে রাজনীতি করলেও তাকে রাখা হয়নি। পারভেজ মল্লিক জেলা যুবদলে গিয়েছে। পারভেজ মল্লিক তার অনুগামী নয় তাই তাকে রাখা হয়নি। আমি এসবের প্রতিবাদ করেছি।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক জাহিদ হাসান, জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি পারভেজ মল্লিক, মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মুসা, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সুমন ভূইয়া, তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, সহ-তথ্য ও যোদাযোগ বিষয়ক সম্পাদক সজিব খন্দকার, সহ-যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক নবু হোসেন, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সুমন প্রধান, সদস্য বাদশা, হুমায়ুন কবীর, জাকির হোসেন, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান রাজ, মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো: শাকিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক তারেক প্রধান, সদস্য সানাউল্লহ, রোমান, মেহেদী, হাসান, থানা যুবদল নেতা হেলালউদ্দিন, শাওন, আবদুর রব প্রধান প্রমূখ।
আলোচনা সভা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ্যতা কামনায় এবং সদ্য প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।