সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
সম্প্রতি রেলওয়ে কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া থান কাপড় ব্যবসায়ীদের পূর্নবাসনের জন্য রেলমন্ত্রী সহ প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন রাখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। সেই লক্ষ্যে তিনি নেতৃবৃন্দদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রস্তুত করে তা নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্র্রির কাছে জমা দেওয়ার আহবান রেখেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ১২ নভেম্বর দুপুর ১১টায় নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের সম্মেলন কক্ষে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ থান কাপড় ব্যবসায়ীরা সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সাথে আলোচনায় বসেন। উক্ত আলোচনায় এমপি সেলিম ওসমান তাদেরকে এমন আশ্বাস প্রদান করেন। উক্ত আলোচনা সভায় প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করেন, তাঁর দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে রেলওয়ে থেকে জমি লিজ নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু ২০১৩ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন চলতি বছর পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করেছেন, তারা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন, অনেকে আবার ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। রেলওয়ের জমির উপর অত্যন্ত ৫ হাজার দোকানপাট রয়েছে। এমতাবস্থায় রেলওয়ে কর্তপক্ষ তাদের নোটিশ করে ছিলেন রেললাইনের পাশ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত তারা স্থাপনা উচ্ছেদ করে তাদের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করবেন।
পরবর্তীতে রেলমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জে পরিদর্শন করে বলে গিয়ে ছিলেন লাইনের উভয় পাশ থেকে ৪৫ ফুট জায়গায় স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। কিন্তু এখন রেলওয়ে বলছে তারা পুরো জমিই দখলে নিবে। ইতোমধ্যে প্রায় ২ হাজার দোকানপাট উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িক ও আর্থিক ভাবে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অপরদিকে উক্ত সেক্টর থেকে যে বিশাল পরিমান আর্থিক লেনদেন সংগঠিত হতো তার পরিমান প্রায় কয়েক শতকোটি টাকা। যা দেশের অর্থনীতির উপরেও প্রভাব ফেলবে।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। পাশাপাশি আমি এই এলাকার সংসদ সদস্য। ব্যবসায়ীদের এভাবে উচ্ছেদ করার বিষয়টি একজন ব্যবসায়ী নেতা ও সংসদ সদস্য হিসেবে অবশ্যই আমাকে অবহিত করার প্রয়োজন ছিল। আর উচ্ছেদ হওয়া ওই সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার আওতাধীন। সিটি কর্পোরেশন থেকে ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের অনেক দায় দায়িত্ব ছিল বলে আমি মনে করি। যদি সিটি কর্পোরশন গত কয়েক মাসের মধ্যে উচ্চ আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও শহরের বিনোদন সুপার মার্কেট, রহমত উল্লাহ মুসলিম ইন্সস্টিটিউট এবং হাজীগঞ্জ কেল্লা এলাকার ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দিয়ে তাদের পথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে বার বার বলছেন পূর্নবাসন না করে কোন উচ্ছেদ নয় সেখানে এভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দিয়ে ব্যবসায়ীদের পথে বসানো হয়েছে, হাজার হাজার শ্রমিকদের বেকার করে দেওয়া হয়েছে। যা কোন অবস্থায় কাম্য নয়।
থান কাপড় ব্যবসায়ীদের প্রতি তিনি আহবান রেখে বলেন, আপনারা ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের একটি তালিক প্রস্তুত করেন। যারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা করছেন তাদের একটি তালিকা। যারা শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন কিন্তু কোন ব্যাংল লোন নেই তাদের একটি তালিকা এবং যাদের কোন বৈধ কাগজপত্র কিছুই নাই তাদের একটি পৃথক তালিকা তৈরি করে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এর কাছে জমা দেন। আমি সেই তালিকা নিয়ে রেলমন্ত্রীর কাছে যাবো। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো। তাদের কাছে এসকল ব্যবসায়ীদের পূর্নবাসনের অনুরোধ করবো। প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন সরকারী ভাবে জমিও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনে আমরা তাদেরকে সেখানে পুর্নবাসনের অনুরোধ রাখবো।
উক্ত আলোচনা সভায় ব্যবসায়ীদের নেতাদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এম সোলায়মান, বাংলাদেশে হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল, সহ সভাপতি কবির হোসেন, সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান বদু, ১৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির সহ প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।