সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জে গঠনতন্ত্র বহির্ভূত সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ড বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এলাকা নিয়ে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করায় আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন বিএনপির দুই নেতা যাদের মধ্যে একজন গোলজার হোসেন। তিনি মহানগর বিএনপির কমিটির কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদনও করেছিলেন।
মহানগর কমিটির নেতারা দাবি করেছিলেন- গোলজার হোসেন বিএনপির কেউ নন। তিনি মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খানের কর্মী। কিন্তু খোজ নিয়ে জানা গেছে গোলজার হোসেন মহানগর বিএনপির কমিটির সভাপতি সাবেক এমপি আবুল কালামের ঘনিষ্ঠজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবুুল কালাম ও গোলজার হোসেন কক্সবাজারে ভ্রমনের ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। এরপর গোমর ফাঁস হয়ে যায়।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন- মুলত সাখাওয়াতের উপর দায় চাঁপাতেই গোলজার হোসেনকে সাখাওয়াতের কর্মী হিসেবে দািব করা হয়। গোলজার হোসেন আবুল কালামের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবত রাজনীতি করছেন। জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার যখন সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির কমিটি গঠন করেন তখন থেকে গোলজার হোসেন আবুল কালামের পক্ষে জোড়ালো ভুমিকা রাখেন। আবুল কালামের আমলেই গোলজার হোসেনকে ১০নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি করা হয়। ফেসবুকে একটি ছবিতে দেখা যায় মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম ও সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম মজনুর সঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণে গিয়েছেন। তবে ছবিটি সাম্প্রতিকালে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লেও ছবিটা অনেক দিন আগে। এতেই প্রমানিত হয় গোলজার হোসেন আবুল কালামের ঘনিষ্ঠজন।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর আওতাধীন মুল এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ। যেখানে সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড রয়েছে। আর মহানগরীর মুল এলাকাটি জেলা বিএনপির কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। মুলত আবুল কালামের আসন ভিত্তিক নির্বাচনের সুুবিধার্থে এভাবে কমিটি গঠন করে নিয়ে আসেন। কিন্তু বিএনপির গঠনতন্ত্রে আসনভিত্তিক কমিটি গঠনের কোন নিয়ম রাখা হয়নি। যে কারনে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক শীর্ষ নেতা কমিটি গঠনের পর বলেছিলেন, মহানগরীর মাথা কেটে জেলা বিএনপির লেজ বানানো হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকাকে। গঠনতন্ত্রের মহানগরীর কোন ওয়ার্ড কমিটি যা জেলা বিএনপির ইউনিয়ন কমিটির সমমর্যাদাপূর্ণ। কিন্তু সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওয়ার্ডের কোন সভাপতির পদমর্যাদা সেই হিসেবে অনেকটা নিচে নেমে যায়। যে কারনে মামলা দায়ের করেছেন গোলজার হোসেন। ইতিমধ্যে তিনি মহানগর বিএনপির কমিটির সকল কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদনও করেছেন।
জানাগেছে, ওই ঘটনায় দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ স্থানীয় আরও ৪ নেতার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন বিএনপির দুই নেতা। মামলায় তারা অভিযোগ করেন-নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এলাকা অর্থাৎ মহানগরীর ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড এলাকা থেকে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কোন নেতাকেই রাখা হয়নি।
এই মামলায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে মোকাবেলা বিবাদী এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও সেক্রেটারি এটিএম কামালকে মুল বিবাদী করা হয়।
১৩ নভেম্বর বুধবার রাতে আদালত থেকে এ সংক্রান্ত নোটিশ বিবাদীদের হাতে পৌঁছানো হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ১০নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলজার খান ও একই ওয়ার্ডের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক (সাবেক পৌর এলাকা) বিএনপি নেতা নূরে আলম শিকদার বাদী হয়ে সিনিয়র সহকারি জজ শিউলী রানী দাসের আদালতে মামলাটি করেন।
এরপর একইদিন শুনানি শেষে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে কেন কমিটি অবৈধ হবে না জানিয়ে বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন আদালত। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সীমানা ও গঠনতন্ত্র মানা হয়নি বলেও অভিযোগ তুলেন বিএনপির ওই দুই নেতা যারা মামলার বাদী।
মামলার বাদী গোলজার হোসেন খান অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটিতে অল্প ক’জন নেতা স্থান পেলেও মহানগরের কমিটিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোর্রেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড পর্যন্ত ১০টি ওয়ার্ডের কোনো নেতাই পদ পদবি পাননি। এই ১০টি ওয়ার্ডের মূল দলের নেতাকর্মীরা দলীয় পদ পদবির ক্ষেত্রে অবহেলার শিকার হচ্ছেন। দলের জন্য প্রাণপন কাজ করলেও দলের নেতারা তাদের কোনো পরিচয় দিচ্ছেন না। আমাদেরকে পদ পদবি যেন দেয়া হয় সেজন্যই এ মামলা। আমরা তো জাগোদল থেকেই যুক্ত বিএনপির সঙ্গে।
অন্যদিকে জানাগেছে, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আবুল কালামকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সেক্রেটারি করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর আংশিক কমিটি গঠন করা হয় এবং একইদিন কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে সভাপতি ও অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সেক্রেটারি করে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এরপর চলতি বছরের ২৩ মার্চ ২০৫ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়াও গত ৩০ অক্টোবর ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহারগর বিএনিপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। দুটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটি জেলা বিএনপির সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত রাখা হয়। অথচ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড এলাকা।
এদিকে এ নিয়ে বিএনপির অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের মধ্যেও বিরোধ সৃষ্টি হয়ে যায়। ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর বর্তমান মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক মুছা সিদ্ধিরগঞ্জে একটি অনুষ্ঠান করতে গেলে যুবদলের অপর অংশের নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হন। তারা দাবি করেন- সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকাটি জেলা যুবদলের আওতাধীন। এ নিয়ে জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সহ বেশকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন মহানগর যুবদলের নেতা মঞ্জুরুল হক মুছা। ২০ নভেম্বর তৎকালীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি যেভাবে হয়েছে একইভাবে অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন করতে হবে।
কিন্তু রিজভীর এই নির্দেশনা মানেনি নারায়ণগঞ্জ যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিকদল। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার নেতাদের রেখেই মহানগর যুবদলের কমিটি গঠন করা হয়। একইভাবে মহানগর ছাত্রদল ও শ্রমিকদলের কমিটিও গঠন করা হয়। যেখানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা থেকে মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু, মহানগর ছাত্রদলের সেক্রেটারি মমিনুর রহমান বাবু ও মহানগর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক এসএম আসলামকে রাখা হয়। অথচ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দশটি ওয়ার্ড জেলা বিএনপিতে রাখা হয় যেখানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহামুদ জেলা বিএনপির সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পান। তবে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে রিজভীর নির্দেশনা মানা হয়।