স্বামীরা কারাগারে, মাদক ব্যবসায় পরিচালনায় স্ত্রীরা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১১) এর অভিযানে ৩ মাদক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে ৮ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। রাজধানীর সায়েদাবাদ ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে এ তথ্য জানান র‌্যাবের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দীন চৌধুরী এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, গোপনসূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৭ নভে¤¦র বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত র‌্যাব-১১, সিপিএসসির মাদক বিরোধী পৃথক অভিযানে ডিএমপির ঢাকার সায়েদাবাদ ও নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় এলাকা হতে ৮ হাজার পিস ইয়াবা সহ ৩জন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- খাইরুল আমিন, ফারজানা আক্তার ওরফে সুমি ও আনোয়ারা।

তিনি আরও জানান, কক্সবাজারের একজন ইয়াবা পাচারকারী দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিতভাবে অভিনব কৌশলে বাসযোগে ইয়াবা পাচার করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ নভে¤¦র উক্ত ইয়াবা পাচারকারী একই কৌশলে কক্সবাজার হতে বাসযোগে ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে আসছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল সকাল ১০টার সময় নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাফি ফিলিং স্টেশনের সামনে পাকা রাস্তার উপর চেকপোষ্ট স্থাপন করে। চেকপোষ্টে গাড়ী থামিয়ে তল্লাসীকালে কক্সবাজার হতে ঢাকাগামী প্রেসিডেন্ট ট্রাভেলস স্লিপিং কোচ থেকে নেমে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সন্দিগ্ধ হিসেবে খাইরুল আমিনকে আটক করা হয়।

আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খাইরুল আমিন কথা ও আচরণে অসংলগ্নতা ও অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পেলেও ইয়াবা পাচারের বিষয়ে সে অস্বীকার করে। অতঃপর নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে গ্রেপ্তারকৃত খাইরুল আমিন স্বীকার করে যে উক্ত বাসে তার সিটের কেবিনের পাশের গ্লাস সংলগ্ন বাসের ফ্রেমের সাথে সাথে স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো চু¤¦ক দ্বারা ইয়াবা ট্যাবলেট আটকানো আছে।

অতঃপর তার দেয়া তথ্য মতে অভিযান পরিচালনা করে ডিএমপির সায়েদাবাদ এলাকা হতে উক্ত বাসে তার সিটের কেবিনের বাম পাশের গ্লাস সংলগ্ন বাসের ফ্রেমের সাথে চু¤¦ক দিয়ে আটকানো ও স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো ৩টি পোটলা পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে উক্ত পোটলাগুলো খুললে ৩০টি পলিপ্যাকে রক্ষিত ৬ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে খাইরুল আমিন হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে তিনটার দিকে নারায়ণগঞ্জের দক্ষিণ সানারপাড় এলাকায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসায়ী ফারজানা আক্তার ওরফে সুমিকে গ্রেপ্তার করা হয় ও তার বাসা থেকে ১২’শ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয় এবং ৪টার দিকে পূর্ব সানারপাড় এলাকায় পৃথক আরেকটি অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসায়ী আনোয়ারাকে গ্রেপ্তার করা হয় ও তার বাসা থেকে ৮’শ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। সর্বমোট ৩টি স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ৮ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত খাইরুল আমিনের বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ এলাকায়। সে দীর্ঘদিন যাবৎ অভিনব কৌশলে কক্সবাজারের টেকনাফ হতে বাসযোগে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় অভিনব পন্থায় নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার ও সরবরাহ করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় ২০১৫ সালে একটি হত্যা মামলা এবং ডিএমপি’র মতিঝিল থানায় ২০১৬ সালে মাদক আইনে একটি মামলা রয়েছে। প্রায় তিন বছর জেলে থাকার পর বছর খানেক পূর্বে জামিনে এসেছে। পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তারকৃত আসামী ফারজানা আক্তার ওরফে সুমির স্বামী-জাবেদের বাড়ি চট্টগ্রাম শহরে। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের নামে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ও মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। ফারজানার স্বামী প্রায় ৩বছর ধরে উক্ত মামলায় জেল হাজতে আছে। সুমিও উক্ত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলার পলাতক আসামি। গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামি আনোয়ারা স্বামী-এনামুল হক জিয়ার বাড়ি কক্সবাজার জেলার। তারাও স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চিহ্নিত মাদক পাচারকারী। তাদের নামেও মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আনোয়ারার স্বামী এনামুল হক জিয়া ও বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরো স্বীকার করে যে, তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ব্যবসা করে আসছে। তাদের একমাত্র পেশা ছিল মাদক ব্যবসা।