সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বয়সের ভারে রাজনীতির বিদায় বেলায় এসে বিতর্কে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়লেন বিএনপির সাবেক এমপি আবুল কালাম ও এটিএম কামাল। তারা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এলাকা নিয়ে গঠিত কথিত মহানগর বিএনপির কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি ছিলেন। বিএনপির গঠনতন্ত্র বহির্র্ভূত কমিটি গঠন করায় এই কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত। মহানগরীর ১০নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপকি গোলজার খানের দায়েরকৃত মামলায় কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন করলে আদালত কথিত কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করেন।
জানাগেছে, এই কমিটি মাত্র ৪৫ দিনের জন্য গঠিত হয়েছিল। এর আগেই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে পূণরায় কমিটি গঠন করা হলে মহানগর বিএনপির কমিটিতে থাকতে পারছেন না কালাম ও এটিএম কামাল। কারন ইতিমধ্যে কেন্দ্র থেকে সেই নির্দেশনা রয়েছে যে, বিএনপি ও এর কোন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনে সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে একাধিকবার থাকতে পারবেন না। ফলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা নতুনভাবে চিন্তা করছেন। এক্ষেত্রে ভবিষৎে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে সাখাওয়াত হোসেন খান ও সেক্রেটারি পদে মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের সম্ভাবনা বাড়ছে। সাখাওয়াত সভাপতি ও খোরশেদকে সেক্রেটারি করে মহানগর বিএনপির কমিটি হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
জানাগেছে, বিএনপির গঠনতন্ত্র বহির্ভূত কমিটি গঠন করায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কথিত কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত। মামলার বাদী গোলজার খানের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাদী ও বিবাদী পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বিরোধীয় কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করেন। বিরোধীয় কমিটির বিষয়ে হওয়া মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই কমিটির সকল কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। আদেশে বলা হয় মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিরোধীয় কমিটির সকল কার্যক্রম বাদী ও বিবাদীকে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার জন্য। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন নিয়ে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করায় বিএনপির গঠনতন্ত্রের কোথাও আসন ভিত্তিক কমিটি গঠনের নিয়ম বিবাদী পক্ষ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি।
আদালত সূত্রে জানাগেছে, বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৪ এর (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা/থানা, পৌরসভা, মহানগর, জেলা- এই শব্দগুলো বাংলাদেশ সরকার/ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দেওয়া অর্থই বুঝাবে।’ অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত এসব এলাকা নিয়েই বিএনপির কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে মহানগরীর মুল এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড পর্যন্ত এলাকা জেলা বিএনপির সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যেখানে মহানগর কমিটিতে রাখা হয়নি। আর সিটি কর্পোরেশন গঠন করে সরকার এবং এখানে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করেন। ফলে মহানগর বিএনপির কমিটি সুস্পষ্টভাবে দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভুত কমিটি গঠন করা হয়েছে মর্মে বাদী পক্ষের আইনজীবী আদালতে উপস্থাপন করেন।
২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র সহকারি জজ শিউলী রানী দাসের আদালতে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আদালত। শুনানিতে বিবাদী পক্ষ স্থগিতের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান। এর আগে আদালতে মামলার বাদী গোলজার হোসেন শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করায় কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন করেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
জানাগেছে, এর আগে গত ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর ১০নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলজার খান ও একই ওয়ার্ডের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক (সাবেক পৌর এলাকা) বিএনপি নেতা নূরে আলম শিকদার বাদী হয়ে ওই আদালতে মামলাটি করেন। মামলার শুনানি শেষে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে কেন কমিটি অবৈধ হবে না জানিয়ে বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন আদালত। পরদিন ১৩ নভেম্বর বুধবার আদালত থেকে এ সংক্রান্ত নোটিশ বিবাদীদের হাতে পৌঁছানো হয়। এ বিষয়ে আদালতে বিবাদীরা জবাব দেন।
এরপর গত ১৯ নভেম্বর বিরোধীয় কমিটির বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালতের কাছে কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন করেন বাদী গোলজার খান। ওই আবেদনের বিষয়ে ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে আদালতে কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার আদেশ দেন।
জানাগেছে, দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করায় মামলায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে মোকাবেলা বিবাদী এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও সেক্রেটারি এটিএম কামালকে মুল বিবাদী করা হয়। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সীমানা ও গঠনতন্ত্র মানা হয়নি বলেও অভিযোগ করে ওই মামলা করা হয়।
মামলা দায়েরের পর বাদী গোলজার খান অভিযোগ করেছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটিতে অল্প ক’জন নেতা স্থান পেলেও মহানগরের কমিটিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোর্রেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড পর্যন্ত ১০টি ওয়ার্ডের কোনো নেতাই পদ পদবি পাননি। এই ১০টি ওয়ার্ডের মূল দলের নেতাকর্মীরা দলীয় পদ পদবির ক্ষেত্রে অবহেলার শিকার হচ্ছেন। দলের জন্য প্রাণপন কাজ করলেও দলের নেতারা তাদের কোনো পরিচয় দিচ্ছেন না। আমাদেরকে পদ পদবি যেন দেয়া হয় সেজন্যই এ মামলা। আমরা তো জাগোদল থেকেই যুক্ত বিএনপির সঙ্গে।
অন্যদিকে আরও জানাগেছে, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আবুল কালামকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সেক্রেটারি করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর আংশিক কমিটি গঠন করা হয় এবং একইদিন কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে সভাপতি ও অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সেক্রেটারি করে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটি গঠনে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মুল এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ডকে জেলা বিএনপির সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। যেখানে সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড রয়েছে। জেলা বিএনপির আওতাধীন এলাকা বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন, সদর মডেল থানার আরও দুটি ইউনিয়নকে মহানগর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই সময় স্থানীয় নেতারা দাবি করেছেন- জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনভিত্তিক সুবিধার বিষয়টি হিসেবে করেই দুটি কমিটি গঠন করা হয়।
অন্যদিকে এমন কমিটি নিয়ে বিএনপির অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের মধ্যেও বিরোধ সৃষ্টি হয়ে যায়। ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর বর্তমান মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক মুছা সিদ্ধিরগঞ্জে একটি অনুষ্ঠান করতে গেলে যুবদলের অপর অংশের নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হন। তারা দাবি করেন- সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকাটি জেলা যুবদলের আওতাধীন। এ নিয়ে জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সহ বেশকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন মহানগর যুবদলের নেতা মঞ্জুরুল হক মুছা। ২০ নভেম্বর তৎকালীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি যেভাবে হয়েছে একইভাবে অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন করতে হবে।
কিন্তু রিজভীর এই নির্দেশনা মানেনি নারায়ণগঞ্জ যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিকদল। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার নেতাদের রেখেই মহানগর যুবদলের কমিটি গঠন করা হয়। একইভাবে মহানগর ছাত্রদল ও শ্রমিকদলের কমিটিও গঠন করা হয়। যেখানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা থেকে মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু, মহানগর ছাত্রদলের সেক্রেটারি মমিনুর রহমান বাবু ও মহানগর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক এসএম আসলামকে রাখা হয়। অথচ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দশটি ওয়ার্ড জেলা বিএনপিতে রাখা হয় যেখানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহামুদ জেলা বিএনপির সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পান। আবার জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে রিজভীর নির্দেশনা মানা হয়।
এদিকে চলতি বছরের ২৩ মার্চ ২০৫ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়াও গত ৩০ অক্টোবর ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহারগর বিএনিপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। দুটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটি জেলা বিএনপির সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত রাখা হয়। অথচ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড এলাকা।