সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডকম:
এখনকার তরুণরা রাত-দিন স্মার্টফোনে মজে থাকে। এতে শিক্ষা, জ্ঞান ও গবেষণার প্রতি তাদের মনোযোগ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এটাকে ভয়ংকর হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা তরুণদের স্মার্টফোনে মজে না থেকে বাস্তবে মানবিক হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
শুক্রবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) অডিটোরিয়ামে তরুণদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘ন্যাশনাল লিডারশিপ কার্নিভাল ২০১৯’ এর আয়োজন করে ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশ। সহযোগিতায় ছিল ইউকে এইড এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। কার্নিভালের মিডিয়া পার্টনার দৈনিক ঢাকা টাইমস।
দেশের মোট ৭২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থেকে আসা ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশের প্রায় ৪০০ জন তরুণ সদস্যকে নিয়ে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত চলে এই অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত লেখক ও শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি ছেলেমেয়েদের পড়াই, আমি জানি। চোখের সামনে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ প্রতিদিন কমছে। আস্তে আস্তে কমতে-কমতে এখন কমে গেছে। ওদের আগের মতো মনোযোগ নেই। তার কারণ স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকে, সেখানে লাইক দেয়, কিছু লিখে না। খালি আঙ্গুল দিয়ে একটা ঠোকা মারে, এটা কিন্তু মানুষের জন্য না।’
জাফর ইকবাল বলেন, ‘কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের হেড ছিলাম। ওখানকার অ্যাপালাই সাইন্সের আমি ডিন ছিলাম। আমার গাইডেন্সে অসংখ্য কাজ হয়েছে আমাদের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।’ এরপর তরুণদের উদ্দেশে তার ব্যবহার করা বাটযুক্ত সাধারণ ফোনটি দেখান। পরে বলেন, ‘এটাতে কিন্তু আমার কাজ কাজ চলে যায়। আমার যখন দরকার হয় তখন আমি ল্যাপটপ ওপেন করি, তথ্য নিই। আমার সময় নষ্ট হয় না। আমার দিন চলে গেলে তোমরাও তোমাদের দিন চালাতে পারবে।’
বিশিষ্ট এই বিজ্ঞান লেখক বলেন, ‘সাইন্স ভালো, কিন্তু প্রযুক্তির ভালো মন্দ আছে। তুমি টেকনোলজি ব্যবহার করবে টেকনলজি যেন তোমাকে ব্যবহার না করতে পারে। আমার প্রয়োজনে টেকনোলজি ব্যবহার করবো। আমি ফেসবুক ব্যবহার করবো। কিন্তু আমার ইচ্ছে করছে না তারপরও আমাকে ফেসবুক টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি ফেসবুকে থাকছি।’
এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘যন্ত্র যতই হোক তারা কিন্তু মানুষ না। মানুষ যেগুলো পারে তারা পারে না। তারা প্রসেস করতে পারে। অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু মানুষের কাজ করতে পারে না। মানুষ চোখের ইশারায় অনেক কিছু বোঝাতে পারে যেটা যন্ত্র পারবে না। তাই তোমরা একটা ছোট চারকোণা স্কিন নিয়ে থেকো না।’
বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক, ডিএফআইডির বাংলাদেশ প্রতিনিধি যুদিথ হারবার্টসন, বাংলাদেশ পুলিশের অ্যাডিশনাল ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল হায়দার আলী খান, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সাংগঠনিক সম্পাদক দীপক কুমার বণিক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহিন আনাম, ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশের সভাপতি আরিফিন রাহমান হিমেল ও সাধারণ সম্পাদক সানজিদা জামান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আলোচনায় বিভিন্ন পর্যায়ে আরও বক্তব্য দেন এমসিসিআইর সভাপতি নিহাদ কবীর, অভিনেতা জাহিদ হাসান, প্রীত রেজা, আরিফ আর হোসাইন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, রেজওয়ানুল করিম এবং শহরিয়ার মান্নান।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতালের সিওও ডা. এ কে এম ইকরামুল হুসাইন, স্মার্ট টেকনোলজিস বিডির ডিরেক্টর মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন।
অনুষ্ঠানে সামাজিক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশের সাতটি সংগঠনকে ইয়ুথ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া কার্নিভালের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল- সমাজ পরিবর্তনের ধারণা বিষয়ক ‘ কমিউনিটি চেঞ্জ মেকার কম্পিটিশন’ তোমার চোখে তারুণ্য আলোকচিত্র প্রদর্শনী’ এবং ইয়ুথ অলিম্পিয়াড।