সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত ২৯ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়া বালুর মাঠ এলাকায় ব্লু পিয়ার নামের রেস্তোরাটির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথমে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে রেস্তোরাটির উদ্বোধন করা হলেও বর্তমানে ভেতরে চলছে মদ বিয়ার বিক্রি।
কিন্তু এমন একটি স্থানে মদ বিক্রি চললেও নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধি ও সমাজপতিরা চুপসে রয়েছেন রহস্যজনক কারনে। রেস্তোরাটি উদ্বোধনের পূর্ব থেকেই এখানে মদ বিক্রি হবে- এমন বিষয়টি মিডিয়াতে প্রকাশিত হলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে। অথচ সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। যদিও সিটি কর্পোরেশনের দাবি- তারা রেস্তোরার ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে, মদ বিক্রির নয়। তবে সচেতন নাগরিকদের দাবি- যেহেতু দীর্ঘদিন যাবত মিডিয়াতে প্রচারিত হচ্ছে সেখানে চলছে মদ বিক্রি, সেই বিষয়টি সিটি কর্পোরেশন তদারকি করছেনা। ফলে এটাই সিটি কর্পোরেশনের রহস্যজনক ভুমিকা।
এদিকে আরও কঠোর সমালোচনা এ কারনেই নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাচীন নূর মসজিদের কয়েক গজ পেছনেই এই বারটি দেয়া হয়েছে। উদ্বোধনের দিন প্রতিষ্ঠানটির মালিক এটা শুধুমাত্র রেস্তোরা হিসেবে চলবে দাবি করলেও তার কয়েকদিনের মাথায় সেখানে বার চালু করা হয়েছে। সেখানে মদ বিক্রি হবে তা উদ্বোধনের দিনেই বুঝা যায়। কারন ওইদিন দোয়া মাহফিল করে উদ্বোধন করা হলেও তার পরেই শুরু হয় ডিজে গান ও নাচ। এখন চলছে মদ বিক্রি। উদ্বোধনের দিন বিশেষ পেশার ব্যক্তিদের ম্যানেজ করতেও কাজ করেছিলেন প্রতিষ্ঠানের মালিক। যা নারায়ণগঞ্জের আর কোন রেস্তোরার মালিক বিশেষ পেশার ব্যক্তিদের এতটা কদর করেনি। সুতরাং সেদিনই প্রমানিত হয় এখানে মদই বিক্রি হবে।
অভিযোগে রয়েছে, প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক রেস্টুরেন্টের ট্রেড লাইসেন্স নিলেও ইতিমধ্যে মদের বার চালু করা হয়েছে। এদিকে, ঐতিহ্যবাহী নূর সমজিদ ও নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের পাশে মদের বার গড়ে উঠায় এনিয়ে শহরময় চলছে নানা সমালোচনা। আর এই মদের বার চালু করার নেপথ্যে বিশেষ পেশার কতিপয় সদস্যরা জড়িত বলেও জানাগেছে।
আরো অভিযোগ রয়েছে, নারায়ণগঞ্জের কিছু নেতা, প্রশাসন, মসজিদ কমিটির লোকজন এবং বিশেষ পেশার কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করা হয়েছে। মদের বারে যুবকদের আড্ডা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জুয়ার আসরও চলছে। এমনকি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক মদ সেবনের লাইসেন্স ছাড়াও সকলের কাছে মদ বিক্রি চলছে।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম মিডিয়াতে বলেছেন, গত ২৯ জানুয়ারী ব্লু পেয়ার রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনের কথা শুনেছি। তারা ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বারের লাইসেন্স নিয়েছে। তারপরও আমরা বলেছি, যেহেতু এটা নিয়ে শহরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে তাই চালু করার আগে আমাদের জানাতে বলেছিলাম। পাশাপাশি লাইসেন্স ছাড়া কারো কাছে মদ বিক্রি করা হয় সেটার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিবো। শুধুমাত্র বিদেশী নাগরিকদের মদ সেবনের লাইসেন্স প্রয়োজন হয় না। সেক্ষেত্রে যদি যুবকদের কাছে মদ বিক্রি করা হয় সেটার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিবো। একই সাথে যদি জুয়া খেলা হয় সেটাও আমরা দেখবো।
অন্যদিকে মদের বার বন্ধের দাবীতে প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছিল ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরা। পাশাপাশি ধর্মীয় সংগঠনের নেতারাও শক্ত অবস্থানে ছিলেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি সহ সাংবাদিক মহলও মদের বারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু এতো কিছুর পরও শেষ পর্যন্ত মদের বার চালু হওয়ায় অবাক হয়েছেন শহরবাসী।