সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে নবীগঞ্জ গালর্স স্কুলে নির্মাণাধীন নাসরিন ওসমান ভবনের প্রথম তলার ছাদ ঢালাই এবং সরকারী অর্থায়নে আরো একটি ৬ তলা ভবনের নির্মাণের কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুর ১২টায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান ওই দুটি কাজের উদ্বোধন করেন।
এ সময় তিনি তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে নির্মাণাধীন নাসরিন ওসমান ভবনটি যদি এলাকাবাসী ও পরিচালনা কমিটির সহযোগীতা পাওয়া যায় তাহলে ২০২০ সালে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে জানান এমপি।
অপরদিকে সরকারী অর্থায়নে শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হতে যাওয়া ভবনটি আগামী মার্চ মাসের মধ্যে প্রথম তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।
ভিত্তিপ্রস্থর উদ্বোধন শেষে আলোচনা সভায় তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ৮ম, ৯ম, ও ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাথে স্কুলে তাদের বর্তমান সমস্যা এবং ভবষ্যিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের প্রয়োজনীতার কথা জানতে চেয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।
নবীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
তিনি বলেন, চারপাশ থেকে আমার কাছে অনেক অভিযোগ আসে। অনেকেই আগ্রহ দিয়ে স্কুলের কমিটিতে আসে। পরে দেখা যায় স্কুলে আসে শুধু মিটিং করতে আর স্কুলের টাকা ব্যয় করে মিটিংয়ে খাওয়া দাওয়া করা হয়। অনেক এলাকায় কমিটির লোকজন মালামাল স্লাপাই দিতে চেয়ে ঠিকাদারকে চাপ দিয়ে থাকে যার ফলে অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজ আটকে আছে। কোথাও আবার শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ের নামে টাকা নেওয়া হচ্ছে। এসব কর্মকান্ড সবাইকে বন্ধ করতে হবে। শুধু বড় বড় ভবন বানালেই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের উন্নয়ন হবে না। সেগুলো সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে হবে। আর এজন্য স্কুল পরিচালনা কমিটি গুলোতে সুশিক্ষিত ব্যক্তিদের এগিয়ে এসে দায়িত্ব নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের মেধা বিকাশে খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। সেই সাথে তাদেরকে হাসিখুশি রাখতে বিনোদন মূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। স্কুল পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দরাই সেটা ব্যবস্থা করতে পারেন এরজন্য স্কুলের ফান্ড থেকে ব্যয় করার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়না। স্কুলের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যাপারে উদ্বুত্ত করতে হবে। প্রয়োজনে স্কুলগুলো কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এজন্য সরকারীভাবে যা সহযোগীতার প্রয়োজন আমার কাছে আবেদন করলে আমি সেটা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করবো। স্কুলে পরিচালনা পর্ষদের মিটিংয়ে কমিটির নেতৃবৃন্দরাই নিজ খরচে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। অথবা খাওয়া দাওয়ার সময়ে কমিটির কোন সভার আয়োজন করবেন না।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার মানেই দেশের উন্নয়ন। এই সরকার জনগনের উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার যতদিন থাকবে ততদিনই দেশের এবং দেশের মানুষের উন্নয়ন হবে। এই বছরটিকে সরকার মুজিববর্ষ ঘোষণা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী মুজিবর্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বছর ভরেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে। সেটা বঙ্গবন্ধুর উপর রচনা, চিত্রাঙ্গন সহ বিভিন্ন ইভেন্টে প্রতিযোগীতা হতে পারে। আমি প্রতিটি স্কুলের পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি অনুরোধ রাখবো বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকী মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে আপনারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে এই সকল প্রতোযোগীতার আয়োজন করেন। এতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানবে শিখবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারন করে ভবিষ্যতে তারাই দেশ গড়ার দায়িত্ব নিবে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, উপজেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্বার্হী প্রকৌশলী বদরুল আলম, নবীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সায়মা খানম, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ প্রমূখ।
এখানে উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের আওতাধীন বন্দর উপজেলায় বর্তমানে সরকারীভাবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় মোট ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। যার মধ্যে ১৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজ নির্মাণাধীন রয়েছে। বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
উন্নয়ন চলমান কাজের ১৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ঢাকেশ্বরী মিলস স্কুল এন্ড কলেজ, হাজী আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়, মিরকুন্ডি উচ্চ বিদ্যালয়, মালিকাগ কেরামতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, কালগাছিয়া গালর্স হাইস্কুল, লক্ষণখোলা ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, মদনপুর রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী সিরা উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, সিকদার আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়, নবীগঞ্জ গালর্স হাইস্কুল, সোনাকান্দা উচ্চ বিদ্যালয়, মদনপুর রিয়াজুল উলুম আলিম মাদ্রাসা, নুরুন আলানূর এছ: হো: দালিখ মাদ্রাসা, মুছাপুর দারুল ইস: দাখিল মাদ্রাসা, শামসুজ্জোহা এমবি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, বিশ্বনবী(স:) ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা, মিরকুন্ডি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী কদম রসুল কলেজ, বন্দর গালর্স স্কুল এন্ড কলেজ। আর অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কুড়িপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, বিএম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়াও নতুন করে আরো ১০টি স্কুলের উন্নয়নের জন্য চাহিদাপ্রত প্রেরণ করা হয়েছে যেগুলো অনুমদোনের অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রসঙ্গত বন্দরে নবীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনটি এমপি সেলিম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নির্মিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে এমপি সেলিম ওসমান তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নবীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেছেন। যা দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলটি স্থানান্তরের লক্ষ্যে নতুন করে ৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করে সেখানে ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেন।