সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বাংলাদেশের ধর্মীয় তীর্থস্থান ভ্রমণে এসে খোদ রাজধানীতে সর্বস্ব খোয়া যায় ভারতীয় চার নাগরিকের। সরলতার সুযোগে কৌশলে পর্যটকদের পাসপোর্ট, সব জরুরি কাগজপত্র সহ ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে পালিয়ে যান এক সিএনজি চালক।
অপ্রত্যাশিত এ ঘটনায় অনেকটাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন প্রবীণ এ চার পর্যটক। কোনো উপায় না দেখে দ্বারস্থ হলেন পুলিশের। ঘটনার বিস্তারিত শোনার পর তাৎক্ষণিক অভিযানে নামে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের একাধিক টিম। যে টিমে ছিলেন নারায়ণগঞ্জের সন্তান পুলিশ পরিদর্শক সুজিত কুমার সাহা।
শুধুমাত্র ভিকটিমদের বিবরণের ওপর ভিত্তি করে টানা আট ঘণ্টার প্রচেষ্টায় সবকিছু উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। অভিযান সংশ্লিষ্টদের মতে, এ ঘটনাটি ‘শূন্য থেকে সব উদ্ধার’।
এদিকে তাৎক্ষণিক তৎপরতায় দ্রুততম সময়ে সবকিছু ফিরে পেয়ে পুলিশকে প্রশংসার জোয়ারে ভাসিয়েছেন ওই চার পর্যটক। ১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওয়ারী থানার অভয়দাস লেন এলাকায় সবকিছু খোয়া যায় ভারতীয় ওই চার পর্যটকের।
অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া ওয়ারী থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) সুজিত কুমার সাহা বলেন, দুপুর ১২টার দিকে ভারতীয় চার প্রবীণ নাগরিক থানায় এসে ঘটনার বর্ণনা দেন। তাদের মৌখিক বিবরণের ওপর ভিত্তি করেই পুলিশের একাধিক টিম তাৎক্ষণিক অভিযানে নামে। অবশেষে দিনগত রাত ৮টার দিকে রাজধানীর ধোলাইপাড় এলাকার একটি বাসা থেকে তাদের সব মালামাল উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার বর্ণনায় তিনি জানান, গত ৫ ফেব্রুয়ারি মাঘী পূর্ণিমার উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশের মাদারীপুরের বাজিতপুর প্রণব মঠে আসেন ভারতীয় চার প্রবীণ নাগরিক। এদের মধ্যে দু’জন নারী ও দু’জন পুরুষ। মঙ্গলবার বিভিন্ন মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার জন্য তারা মাদারীপুর থেকে বাসযোগে ঢাকায় আসেন। সায়েদাবাদ নেমে ভারতে ফেরার ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য প্রথমে তারা কমলাপুর রেলস্টেশনে যান।
কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মৈত্রী এক্সপ্রেসের চারটি টিকিট কেটে সকাল পৌনে ১১টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে স্বামীবাগ লোকনাথ ব্রহ্মচারীর মন্দিরে রওনা দেন। তারা হালকা নাস্তা করবেন বলে ভাড়াকৃত সিএনজিচালককে একটি খাবারের দোকানের সামনে থামানোর জন্য অনুরোধ করেন। সে অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওয়ারী থানার অভয়দাস লেনের একটি খাবারের দোকানের সামনে অটোরিকশা থামান চালক।
চার পর্যটকের সবাই অটোরিকশা থেকে নামেন এবং চালককেও তাদের সঙ্গে নাস্তা করতে যাওয়ার অনুরোধ করেন। সিএনজিচালক যাত্রীদের সঙ্গে না গিয়ে তাদের নাস্তা করে আসতে বলেন। যাত্রীরা নাস্তা খেয়ে বাইরে এসে আর অটোরিকশা ও চালক খুঁজে পাননি। আশপাশে খোঁজাখুজি করে বুঝতে পারেন, অটোরিকশাচালক যাবতীয় মালামাল চুরি করে পালিয়েছেন।
তাদের চুরি যাওয়া মালামালের মধ্যে ছিল দু’টি ট্রলি ব্যাগ, কাঁধে ও হাতে ঝুলানো চারটি ব্যাগ ও মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ দু’টি। যার মধ্যে কাপড় ছাড়াও ভারতীয় সাত হাজার রুপি, বাংলাদেশি সাড়ে তিন হাজার টাকা, চারজনের পাসপোর্ট, সবার ভারতীয় আধার কার্ড, প্যানকার্ড, ভোটার কার্ড ও কলকাতাগামী ট্রেনের চারটি টিকিট। পরে স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে তারা ওয়ারী থানায় যান।
পরিদর্শক সুজিত কুমার সাহা বলেন, ঘটনার বিবরণ শুনে নিজেই দায়িত্ব নেই। তাৎক্ষণিক এক সার্জেন্টের মাধ্যমে সিএনজির মালিকানা সংক্রান্ত কিছু তথ্য সংগ্রহ করি। এরমধ্যে ওয়ারলেসে ডিএমপির সব থানায় মেসেজটি পাঠিয়ে এ ধরনের কোনো অটোরিকশা পেলে আটক করে ওয়ারী থানাকে জানানোর অনুরোধ করি।
প্রাপ্ত তথ্যাবলীর মধ্যে একটি ফোন নম্বর পেলেও বন্ধ পাওয়া যায়। আরেকটি ফোন নম্বর জোগাড় করে যোগাযোগ করে জানা যায়, বর্ণিত অটোরিকশাটি ঠেঙ্গামারা সমাজকল্যাণ সংস্থা থেকে লোন নিয়ে কেনা। ঠেঙ্গামারা সমাজকল্যাণ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় অপর নম্বরটিতে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত রাখি।
এক সময় যোগাযোগ সম্ভব হলে সিএনজির মালিকের বিষয়ে তথ্য পাই এবং চালক হাবিব হাওলাদার নামে একজন বলে জানা যায়। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যাত্রাবাড়ী থানা থেকে একটি টিম সিএনজি মালিকের কাছে পাঠানোর অনুরোধ করি। যাত্রাবাড়ী থানার টিম তাৎক্ষণিক অটোরিকশার মালিকের কাছে পৌঁছে বেশ কিছু তথ্য জানান।
এরপর ওয়ারী বিভাগের ডিসির সঙ্গে আলোচনা করে ওয়ারী ও যাত্রাবাড়ী থানার দু’টি টিম যৌথভাবে ‘ঢাকা মেট্রো থ-১৪-৬৮৯০’ এর চালকের নাম-ঠিকানা শনাক্ত করে অভিযান পরিচালনা করে। অবশেষে ধোলাইপাড়ে ওই অটোরিকশাচালকের বাসা থেকে সব মালামাল উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে যেখানেই যোগাযোগ করেছি, সবদিক থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। সবার চেষ্টায় দ্রুততম সময়ে চুরি যাওয়া মালামালগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে চালক হাবিব হাওলাদার বাসায় মালামালগুলো রেখেই পালিয়ে গেছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।