সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নানের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। তবে তার কমিটিতেই মান্নান সেক্রেটারি পদেও রয়েছেন। এর আগে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন মান্নান। দুটি নির্বাচনেই মান্নানের পক্ষে ভোট প্রার্থনায় নেমেছিলেন জাফর। মান্নানকে সেক্রেটারি ও খন্দকার আবু জাফরকে সভাপতি পদে থেকে সোনারগাঁও বিএনপির কমিটি নিয়ে এত বছর আপত্তি করেননি জাফর।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসন থেকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পান খন্দকার আবু জাফর ও আজহারুল ইসলাম মান্নান। দুজনকেই মনোনয়ন দাখিলের নির্দেশ থাকলেও জাফর দাখিল করেননি। ওই সময় তিনি মিডিয়াতে বলেছিলেন, যে মান্নান নমিনেশন শব্দটি উচ্চারণ করতে পারেনা তার ড্যামী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করার ইচ্ছা আমার নাই। তাই মনোনয়ন দাখিল করিনি। কারন আমি জানি চূড়ান্তভাবে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হবে না।’
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই বলে বিরুপ মন্তব্য করেছেন সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপি সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের একটি অনলাইন মিডিয়াতে খন্দকার আবু জাফর বলেছেন, ‘মান্নান নামটি যদি বাংলায় বানান করে মান্নান পড়তে পারে তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দিব। তার মত ব্যক্তিকে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব দেয়া হলে দলের পায়ে কুড়াল মারার সমান।’
অন্যদিকে আজহারুল ইসলাম মান্নানকে নিয়ে এমন বিরুপ মন্তব্য করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সোনারগাঁয়ের হাজার হাজার বিএনপির নেতাকর্মী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খন্দকার আবু জাফরের এমন মন্তব্যের তুমুল সমালোচনা করছেন নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের দাবি- যখন নেতাকর্মীরা মামলায় হামলায় নির্যাতিত হয় তখন কোন শিক্ষিত নেতাদের দেখা যায়না। নেতাকর্মীরা মরে গেলেও মান্নান ছাড়া কর্মীদের পাশে দাড়ানোর মত কোন নেতা চোখে দেখা যায়না।
নেতাকর্মীদের আরও দাবি- যখন নেতাকর্মীরা মামলায় আসামি হয়ে পলাতক হয়ে আত্মাগোপনে ঘুরেন তখন নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করেছেন মান্নান। নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত পারিবারিক সমস্যার সমাধানেও এগিয়ে আসেন মান্নান। মান্নান বিএনপির রাজনীতিতে এতে দলকে দিয়েছেন বেশি। দল থেকে সম্মান পেয়েছেন কম। যেখানে সোনারগাঁয়ের বিএনপির নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসা মান্নান সেখানে মান্নান অশিক্ষিত হওয়ায় তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় খন্দকার আবু জাফরের নেতাকর্মীদের তুমুল সমালোচনায় পড়েছেন।
নেতাকর্মীদের দাবি- মান্নান অশিক্ষিত হলেও তিনিই রাজপথে আন্দোলন করেন, রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে মামলায় আসামি হওয়া নেতাকর্মীদের জামিন করান, নেতাকর্মীদের খোজখবর নেন, নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত পারিবারিক সমস্যার সমাধান করেন, বিপদেও পাশে থাকেন, দলের হয়ে রাজপথে সক্রিয় থাকেন। কিন্তু দলের বিপদের সময় আবু জাফরের মত শিক্ষিত নেতারা রাজপথের নেতাকর্মীদের কোন খোঁজখবরও রাখেন না। তাহলে শিক্ষিত নেতার চেয়ে মান্নানের মত অশিক্ষিত নেতাই বিএনপির জন্য যোগ্য বলে নেতাকর্মীদের দাবি। বিএনপির নেতাকর্মীদের কর্মী দাবি করেছেন- নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে এমন অশিক্ষিত মান্নানের হাজারো প্রয়োজন। তাহলে বিএনপি আরো শক্তিশালী হবে। কারন মান্নান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও সমস্যা নেই, কারন তিনি তো বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য স্কুল খুলে লেখাপড়া করাবেন না।
তবে খন্দকার আবু জাফরের এমন মন্তব্যের পর আরেকটি অনলাইনে আজহারুল ইসলাম মান্নান মন্তব্য করেছেন, ‘খন্দকার আবু জাফর আরো উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার জন্য দোয়া করি।’ মান্নান বলেন, ‘জাফর জাফরের শিক্ষিত লইয়া থাকুক, আমি আমার অশিক্ষিত লইয়া থাকি।’
আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, জাফর আমাকে অশিক্ষিত বলে যদি সুখ পায় তাহলে বলুক। উনায় তো উচ্চ শিক্ষিত, ওনার উচ্চ শিক্ষিত নিয়ে উনি থাকুক আর আমি আমার মুর্খ নিয়ে বসে থাকি।
এ সময় তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি মূর্খ যদি হয়ে থাকি তাহলে আমার ফাইলে কি সই কে করে দিয়ে গেছে? জাফরে? আমার লেখাপড়া কম কিন্তু মূর্খ না তো। আমি ছোট বেলায় দুষ্ট ছিলাম সেই দুষ্টমির জন্য খালি মেট্রিক পরীক্ষাটা দেই নাই। আমি কি অশিক্ষিত? উনি তো উচ্চ শিক্ষিত।
মান্নান আরও বলেন, আমি দলের জন্য জীবন দিয়া আন্দোলন করলাম। শিক্ষার তো কোন বয়স লাগেনা, দেখি বৃদ্ধ বয়সেও কত লোক মেট্রিক পরীক্ষা দেয়। তাই আমি দোয়া করি বৃদ্ধ বয়সে উচ্চ শিক্ষার সাথে উনি সামনে দিয়া আরো উচ্চ শিক্ষিত হোক। আমি মুর্খ সব ঠিক আছে, আমি মূর্খ থাকতে চাই। আমি মুর্খ থেকে যেন সোনারগাঁয়ের মা-বোন সহ সকল শ্রেণির মানুষকে নিয়ে চলতে পারি, সেজন্য সবাই দোয়া করবেন।
এখানে উল্ল্যেখযে, এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম। তিনি ১/১১ এর সময় প্রকাশ্যে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সংস্কারবাদীদের মধ্যে ছিলেন তিনি অন্যতম। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজপথের কোন আন্দোলন সংগ্রামে তিনি ভুমিকা রাখেননি। মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের পাশেও দাড়াননি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের সময় বিভিন্ন এলাকায় গাড়িবহর নিয়ে শোডাউনই ছিল তার একমাত্র রাজনৈতিক কর্মকান্ড। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর তিনি আর তাও করেননি। মামলা হামলায় নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে কেবল ছিলেন এবং আছেন মান্নান। সেই মান্নানকে সোনারগাঁয়ে আসনে মনোনযন ঠেকাতে সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দীনকে নিয়ে সোনারগাঁয়ে শোডাউন করেছিলেন খন্দকার আবু জাফর। মান্নানের সমালোচনা করা ছাড়া খন্দকার আবু জাফরের আর কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ড নেই। বছরের বেশির ভাগ সময় তিনি কাটান আমেরিকায়। আবার রেজাউল করিমের অধ্যাপক পদবী নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিলুপ্ত কমিটির সেক্রেটারি মামুন মাহামুদও অধ্যাপক। কিন্তু এই দুই অধ্যাপকের ভুমিকা দেখে নেতাকর্মীরা বলছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে কোন অধ্যাপক নয়, মান্নানের মত নেতাকেই দরকার।