সরকারি দলের মঞ্চে আজাদ ও মুকুল, ৫বার বরখাস্ত মান্নান!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর

অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি। এর আগের কমিটিতেও তিনি ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। আতাউর রহমান মুকুল মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি। এর আগে তিনি বন্দর থানা বিএনপির বিদ্রোহী কমিটির সভাপতি হয়েও দলের সমর্থন পেয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হোন। আজহারুল ইসলাম মান্নান কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি। আওয়ামীলীগ সরকার আমলে তিনজনই তিনটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। যেখানে ৫বার বরখাস্ত হয়েছিলেন মান্নান। সরকারি দলের সঙ্গে প্রকাশ্যে সভা সমাবেশে উপস্থিত হওয়া তো দুরের কথা তবুও সরকারি দলের সঙ্গে কোন ধরণের গোপন আতাত করেননি মান্নান। কিন্তু আজাদ বিশ্বাস ও আতাউর রহমান মুকুল নিজেদের চেয়ার বাঁচাতে সরকারি দলের সভা সমাবেশে অনেকটা সরকারি দলের হয়ে কাজ করেছেন। যার মধ্যে এখনও আজাদ বিশ্বাস তার চেয়ার টিকিয়ে রেখেছেন।

প্রায় দশ বছরের বেশি সময় ধরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস। এরি সময়ের মাঝে টানা দুইবার বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আতাউর রহমান মুকুল। তারা দুজনই সরকারি দলের বিভিন্ন সভা সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন। জাতীয়পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদের সমাবেশে গিয়ে বক্তব্য মুকুল বলেছিলেন, আমি সব সময় সেলিম ওসমানের পাশে থাকবো।’ মুকুল গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ধানের শীষের বিরোধীতা করে প্রকাশ্যে লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করেছিলেন শুধুমাত্র তার বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানশিপ টিকিয়ে রাখার জন্য। যদিও শেষতক তিনি গত নির্বাচনে আবারো চেয়ারম্যান হতে পারেননি। একই কায়দায় প্রকাশ্যে সরকারি দলের এমপি ও আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সক্রিয় ছিলেন আজাদ বিশ্বাস। কিন্তু তাদের চেয়ে ভিন্ন ছিলেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। মান্নান সরকারি দলের সঙ্গে কোন ধরনের আতাত করেননি। প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ কিংবা স্থানীয় জাতীয় পার্টির এমপির সঙ্গে তাকে কোন বাহিরের সভা সমাবেশে দেখা যায়নি। যে কারনে তিনি ৫বার রবখাস্তও হয়েছিলেন।

জানাগেছে, মান্নানের চেয়ারম্যানের আমলে ৫টি বছর সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ারটি ছিল বেশ আলোচনায়। কারন ওই সময়কার চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। গত জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চেয়ারম্যান পদ অব্যাহতি নেন মান্নান। তাকে বরখাস্ত করা হলেই দুই ভাইস চেয়ারম্যান সেই চেয়ার টানাটানিতে ছিলেন ব্যস্ত। এ নিয়ে বেশ বিতর্ক ও সমালোচনাও হয়েছে। একজন আরেকজনের স্থানীয় মন্ত্রনালয়ে বিরুদ্ধে আপিল রিটের ঘটনাও ঘটিয়েছেন। মান্নানকে বরখাস্তের একজনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে বসানো হলে আরেকজন সেটা বাতিল করে নিজের নামে দায়িত্ব নিয়ে আসেন। এমনকি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দরজা তালা লাগানোর মত ঘটনা ঘটান দুই ভাইস চেয়ারম্যান।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হলেও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেই পারেননি মান্নান। সারা বছর ছিলেন দলীয় আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে। মামলায় আসামি হয়ে কারাভোগও করেছেন তিনি একাধিকবার। ডজন ডজন মামলায় আসামি হয়েছেন তিনি। আসামি হয়ে মাসের পর মাস ছিলেন আত্মগোপনে। আতাউর রহমান মুকুল ও আজাদ বিশ্বাসের মত ভুমিকা দেখেই নেতাকর্মীরা বলছেন- মান্নান দলের প্রতি কমিডেট। একজন আদর্শিক নেতা। চেয়ারের চেয়ে তিনি দলকেই বড় করে দেখেছেন। তাই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আজহারুল ইসলাম মান্নানকে রাখা হলে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি দালালমুক্ত হবে। কোন আতাতকারী সরকারি দলের দালাল বিএনপির কমিটিতে স্থান পাবে না এটা মান্নানের অতীত ভুমিকায় প্রমানিত।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলোর নির্বাচনের সময় মনোনয়ন নিয়ে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকারের বাসায় এক সভায় উপস্থিত ছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ওই অনুষ্ঠানে জেলা মহিলা দলের নেত্রী রহিমা শরীফ মায়া তার বক্তব্যে আজাদ বিশ্বাসকে দেখিয়ে বলেছিলেন, এই আজাদ বিশ্বাস আওয়ামীলীগের দালাল, শামীম ওসমানের দালাল।’