সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
২০১২ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি মামুন মাহামুদ ও সেক্রেটারি আশরাফুল হক রিপনের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে তাৎক্ষনিক মোশারফ হোসেনকে সভাপতি ও শাহআলম মুকুলকে সেক্রেটারি করে জেলা যুবদলের কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় যুবদল। কমিটি গঠনের আগেই শহরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ বাধিয়ে দেন মোশারফ হোসেন। এ নিয়ে মামলা পর্যন্ত গড়ায়। মোশারফ-মুকুলের ওই কমিটি জেলার সকল ইউনিট কমিটিগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জেলা যুবদলের নেতাকর্মীরা টানা বছর ব্যাপী মোশারফ হোসেন ও শাহআলম মুকুলের বিরুদ্ধে জুতা ঝাড়ু মিছিল করেছিলেন।
ওই সময় সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের সভাপতি পদে ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম টিটু। তখন সোনারগাঁও উপজেলা, পৌরসভা সহ প্রতিটি ইউনিয়ন এলাকায় জুতা ঝাড়ু মিছিল করেন যুবদলের নেতাকর্মীরা। তারপর উপজেলা যুবদলের নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে সোনারগাঁয়ে যুবদলের রাজনীতির বারোটা বাজিয়েছেন মোশারফ হোসেন। এবার কেন্দ্রীয় যুবদলের ঢাকা বিভাগীয় সহ-সম্পাদক পদে অধিষ্ট হয়ে হয়ে রাজপথে আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় অযোগ্যদের হাতে কমিটির নেতৃত্ব তুলে দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে।
অভিযোগ ওঠেছে, সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের বর্তমান সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল ও তার অনুগতদের হাতে আহ্বায়ক কমিটি তুলে দেয়ার চেষ্টা করছেন মোশারফ হোসেন। আহ্বায়ক কমিটি তাদের মত করে পরিকল্পিতভাবে সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে অধিষ্ট করবেন তাদের অনুগতদের। এতে আবারো রাজপথের সক্রিয় ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন। ফলে আতংকিত সোনারগাঁয়ের যুবদলের রাজপথের সক্রিয় নেতাকর্মীরা।
যুবদলের নেতাকর্মীরা বলছেন-মোশারফ হোসেনের কালো থাবায় আমরা আবারো আতংকিত। কারন তার ইন্দনে হয়তো আবারো রাজপথের নেতাকর্মীরা নেতৃত্ববঞ্চিত হবে। আমরা চাই কেন্দ্রীয় যুবদলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যের বাস্তবায়ন। সোনারগাঁয়ের যুবদলের নেতাকর্মীরা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তার কোন কর্র্তত্ব দেখতে চায়না। এখানে ত্যাগী নির্যাতিত সক্রিয় নেতাদের হাতে সোনারগাঁয়ের যুবদলের নেতৃত্ব তুলে দেয়া হোক। ত্যাগীরা বঞ্চিত হলে, ‘দলের নেত্রী এখন কারাগারে, এমন সময়ে আমরা আবারো জুতা ঝাড়ু হাতে নিয়ে কারো বিরুদ্ধে মিছিল করতে চাই না। কারো কাছ থেকে অতীতের মত বিশেষ সুবিধা নিয়ে কমিটির নেতৃত্ব তুলে দেয়ার চেষ্টা করা হলে আমরা আবারো জুতা ঝাড়ু হাতে মিছিল করতে বাধ্য হবো।’
কেন্দ্রীয় যুবদলের পদে থাকায় সোনারগাঁয়ে তিনি রহস্যজনক কারনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। মুলত তার দেয়া কমিটির নেতাদের হাতেই সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের নেতৃত্ব তুলে দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু তার দেয়া কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলকে সর্বশেষ দলীয় কোন কর্মসূচিতে দেখা গেছে সেটা যুবদলের নেতাকর্মীরা বলতেও পারছেন না। দলের আন্দোলন সংগ্রামতো দুরের কথা পুলিশি বাধাবিহীন কোন কর্মসূচিতেও দেখা যায়নি জাকির হোসেন বাবুলকে। ওই কমিটির সেক্রেটারি আবদুর রউফ দীর্ঘদিন প্যারালাইসড রোগে আক্রান্ত। সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে ইয়াসিন নোবেলকে জোড়ালো ভুমিকায় না থাকলেও মাঝে মাঝে রাজপথে দেখা যায়।
এদিকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি দলের সাথে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের অন্তর্ভুক্ত সোনারগাঁ উপজেলা ও পৌর যুবদলের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়। যার ব্যাপক আয়োজনে মুখ্য ভুমিকা পালন করেছেন জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান স্বপন ও সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আশরাফ ভূঁইয়া। বিপুল পরিমান নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটিয়েছেন তারা। যেখানে যুবদলের সভাপতি প্রার্থী আশরাফ প্রধানের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মত। তবে দীর্ঘদিন যুবদলের রাজনীতিতে না থেকেও সেখানে বক্তব্য রেখেছেন জাকির হোসেন বাবুল। এমনকি গত বছরের ৩ মে জাতীয়পার্টির এমপি খোকার হাতে ফুল দিয়ে জাতীয়পার্টিতে যোগদানকারী তৎকালীন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আতাউর রহমানও ওই কর্মীসভায় বক্তব্য রেখেছেন! মোশারফের দেয়া কমিটির বেশির ভাগ নেতাকর্মী যুবদলের রাজনীতিতেও নাই, কেউ কেউ জাতীয়পার্টিতে যোগদান করেছেন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বেহাকৈর এলাকায় এই সভার আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল। নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের সঞ্চালনায় এবং সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শহিদুর রহমান স্বপনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়োজিত কর্মীসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, সহ-সম্পাদক শাহ্ আলম চৌধুরী, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সম্পাদক মোশারফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর তাহের বাবু ও ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ। এ ছাড়াও এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা, উপজেলা ও পৌর এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের যুবদলের নেতাকর্মীরা খন্ডখন্ড মিছিল নিয়ে কর্মী সভায় উপস্থিত হোন।
কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মজিবুর রহমান বলেছিনে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মধ্য দিয়ে আমাদের হারানো গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই লক্ষ্যেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা ঢাকা বিভাগের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠনের জন্যে আমরা কাজ করছি।
তিনি আরও বলেছিলেন, বিগত সময়ে যারা রাজপথে থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে হামলা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেস সেইসব নেতাকর্মীদের নিয়ে যুবদলের কমিটি গঠন করা হবে। তারেক রহমানের নির্দেশ কোন ভাইয়ের কমিটি হবেনা। যুবদলে কোন ভাইয়ের জায়গা নেই। যাদের ত্যাগ ও নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা আছে সেইসব সাবেক ছাত্রনেতা ও যুবদল নেতাদের সমন্বয়ে সোনারগাঁও উপজেলা ও পৌর যুবদলের কমিটি গঠন করা হবে।
সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্য তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্য ও সম্মান আছে। আর যারা সোনারগাঁও ঐতিহ্য ও সম্মান রক্ষা করে যুবদলের নেতৃত্ব দিতে পারবে তাদের হাতেই সোনারগাঁও উপজেলা ও পৌর কমিটি নেতৃত্ব দেওয়া হবে। এখানে কোন গ্রুপিং বা লবিং করার সুযোগ নেই। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যোগ্যদের হাতেই কমিটি তুলে দেওয়া হবে।