‘যে এলাকার মানুষ দূর্ভোগে সে এলাকার এমপি থাকার আমার দরকার নেই’

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান ডিএনপি বাধ প্রসঙ্গে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের প্রতি জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার আলাদা একটা টান রয়েছে, কারণ এখানে আওয়ামীলীগের জন্ম। জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার পর প্রথম দিনেই সংসদে এ বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম। এই কাজটি পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের কাজ নয়। কোন মন্ত্রনালয় সাহস করে এ কাজটি নিতে চায়নি। আমি বলতে বলতে একপর্যায়ে তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল হককে বলি ২০ লাখ মানুষের দুর্ভোগ লাগব করতে না পারলে হয় আমি রিজাইন করব না হয় আপনাকে রিজাইন করতে হবে। যে এলাকার মানুষ দুর্ভোগে থাকে সে এলাকার এমপি থাকার আমার দরকার নেই। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর ইশারায় এ কাজ হবে বলে তিনি আশ^স্থ করেন। আমার স্বপ্ন এটা ছোট খাল হবে, পানি নিস্কাশন হবে তা না।

শামীম ওসমান আরো বলেন, আমরা প্রাচ্যের ডান্ডি, আমরা মোট রাজস্বের ২৫ ভাগ দিয়ে থাকি, ৭৫ ভাগ গার্মেন্টস ও নীট সেক্টরে এক্সপোর্ট করে থাকি। এই নারায়ণগঞ্জ অনেক অবদান রাখছে। সেনাবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যেভাবে কাজটি করছেন এবং যেভাবে প্রকল্পটি নিয়ে চিন্তা করছেন আমার মনে হচ্ছে তারাই নারায়ণগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্ধা। আশা করি আমি না থাকলেও তারা প্রকল্পটি সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করবে।

নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমান সম্পর্কে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রকল্পটি ১৯৬২-১৯৬৮ সালে গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে যখন নগরায়ন শুরু হয় তখন লোকজন অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরী করে, অবৈধভাবে ডিএনডি ও কৃষিজ জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা করায় অত্র এলাকায় জলাবদ্ধতা শুরু হয়। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের উদ্যোগ ও চিন্তাধারায় এ প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু করা হয়। নারায়ণগঞ্জবাসী ভাগ্যবান শামীম ওসমানের মত একজন এমপি পেয়ে। যিনি সর্বক্ষণ জনগণের কথা চিন্তা করেন। ২০ লাখ লোকের জলাবদ্ধতার দূর্ভোগ লাগবের জন্য এ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৯ই ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। যার ব্যয় ধরা হয় ৫৫৮ কোটি টাকা।

ডিএনপি বাধ প্রকল্প নিয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও একনেকের যারা সদস্য রয়েছেন তারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রকল্পের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। তারা জানেন, এ প্রকল্পের সাথে ২০ লাখ লোকের ভাগ্য জড়িত রয়েছে। ২০ লাখ লোক যাতে ভালভাবে বসবাস করতে পারে, যাতে সুন্দর একটা পরিবেশে বসবাস করতে পারে এবং যে স্বপ্ন আমরা দেখছি ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে সমৃদ্ধশালী দেশে পৌছাবো। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এটি একটি প্রকল্প। তাই অবশ্যই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পটির মেয়াদ আরো একবছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

৮ মার্চ রবিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকায় নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের পাম্প স্থাপনের শুভ সূচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, পরবর্তীতে দেখা যায় প্রকল্পের ব্যয় আরো বেড়ে গেছে। কারণ এই প্রকল্পের ভিতরে অবৈধ স্থাপনা, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, গ্যাস লাইন, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন রয়েছে। যা সড়াতে অতিরিক্ত ব্যয় বেড়েছে। এখন ধারনা করা হচ্ছে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ১৩ শত কোটি টাকা লাগবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ২০ লাখ মানুষের জলাবদ্ধতার দূর্ভোগ লাগব হবে।

এসময় মন্ত্রী এলাকাবাসীর কাছে আবেদন করে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে কিন্তু কাজ করতে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হলে এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই আপনাদের কাছে আমার আহ্বান আপনারা সহযোগিতা করেন। হাতিরঝিলের চেয়ে অনেক বড় প্রকল্প এখানে হবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যে খালগুলো খনন ও পরিস্কার করা হয়েছে তা আবার ময়লা পানি ও আবর্জনায় ভরে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত তিন বার এ কাজটি করা হয়েছে। এতে ব্যয় আরো বেড়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এটি বাস্তবায়নে আপনাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চীফ মেজর জেনারেল ইবনে ফজল শায়েখুজ্জামান, ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনষ্ট্রাকশন বিগ্রেডের ডিজি বিগ্রেডিয়ার এফএম জাহিদ হোসেন, ১৯ ইসিবি অধিনায়ক লে: কর্ণেল আহসানুল তাকদ্বীম চৌধুরী, প্রকল্প পরিচালক লে: কর্ণেল মাসফিকুল আলম ভুঁইয়া ও প্রজেক্ট অফিসার মেজর সৈয়দ মোস্তাকিম হায়দার প্রমূখ।