সোনারগাঁ যুবদলের কমিটি: মামলা না খেয়েও নেতা, ১৮ মামলার আসামি তার কর্মী!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের অন্তর্ভুক্ত সোনারগাঁয়ে যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই দিন কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছিলেন, ত্যাগীদের মুল্যায়ন করা হবে। একই সূর তুলেছিলেন জেলা যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারিও। কিন্তু তার প্রতিফলন পুরোপুুরি উল্টো করে দেখালো জেলা যুবদলের শীর্ষ দুই নেতা।

গত ৭ মার্চ সোনারগাঁও উপজেলা ও পৌর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে যেখানে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৮টি মামলার আসামি হয়েছিলেন নূরে ইয়াসিন নোবেল। তিনি আওয়ামীলীগ সরকার আমলে জেল খেটেছেন দুইবার। বছরের পর বছর মামলায় আসামি হয়ে থেকেছেন আত্মগোপনে। তাকে যেখানে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে সেখানে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে আশরাফ ভূঁইয়াকে। এই আশরাফ ভুইয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলাও নেই। জেল খাটার তো প্রশ্নই ওঠেনা।

আশরাফ ভূ্ইঁয়া মামলা না খেয়েও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আর নূরে ইয়াসিন নোবেল ১৮মামলার আসামি হয়ে তার নিচে যুগ্ম আহ্বায়ক। যুবদলের রাজনীতিতে ছিলেন না আশরাফ ভূঁইয়া অথচ নোবেলের নেতা এখন আশরাফ ভূঁইয়া। তবে এমন বিষয়টি খোদ ভাগ্য হিসেবে দাবি করেছেন জেলা যুবদলের সভাপতি টিটু। ফলে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমেই ত্যাগীদের পেছনে ফেলে দিতে শুরু করেছে জেলা যুবদল। এমন কমিটি গঠনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিটি বানিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে।

জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান স্বপনকে আহ্বায়ক ও যুবদল নেতা আশরাফ ভূঁইয়াকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করে সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের ৩২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭মার্চ শনিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন এই কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে ১২ জন ও সদস্য পদে রাখা হয়েছে ১৯ জনকে।

কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে নুরে ইয়াসিন নোবেল, আশরাফুল আলম প্রধান, আশরাফ মোল্লা, পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী চপল, কামাল হোসেন, রাসেল রানা, আব্দুল আলী, কাওসার হোসেন, আমির হোসেন, মোঃ কাওসার ও আবু তাহের।
এ ছাড়াও সদস্য পদে মাসুম রানা, নিজাম উদ্দিন, শাহিন আলম জুবায়ের, আমজাদ হোসেন মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ ইয়াসিন, ইউনুস মিয়া, সুমন মিয়া রান্টু, মোঃ আতাউর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন হিমেল, মকবুল হোসেন, নোবেল মীর, মতিউর রহমান মতি, আমিনুল ইসলাম, খন্দকার রেজাউল, অলিউর রহমান, শাহ আলম ও আল আমিন মোল্লা।

এদের মধ্যে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ ভূঁইয়া যুবদলের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন না। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম তার ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তার বিরুদ্ধে নেই একটি মামলাও। জেল খাটতে হয়নি একদিনও। অথচ এই কমিটির পরের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে ইয়াসিন নোবেল কারাভোগ করেছেন দুইবার। ১৮টি মামলায় আসামি হয়ে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন। অথচ তার নেতা এখন মামলা না খেয়েও আশরাফ ভূঁইয়া। আর ১৮টি মামলার আসামি নোবেলের নেতা এখন তিনি। নোবেল আগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। আশরাফ ভূঁইয়া ওই কমিটিতে যুবদলের সদস্যও ছিলেন না।

এ বিষয়ে যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে ইয়াসিন নোবেল বলেন, আমার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা। আমি দুইবার জেল খেটেছি। যাকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে সে কোনদিন যুবদলের রাজনীতিতেও ছিলোনা। এখন কমিটি এভাবে কেন গঠন করা হলো তা বুঝতে পারছিনা।

তবে আশরাফ ভূঁইয়া দাবি করেছেন- এর আগে তিনি সোনারগাঁও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। যুবদলের কোন কমিটিতে না থাকলেও তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে থেকেই যুবদলের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। তাকে জেল খাটতে হয়নি।

এমনটা কিভাবে হলো জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু বলেন, আসলে নেতৃত্ব ভাগ্যের বিষয়। হয়তো এটা ভাগ্যের কারনে পেয়েছেন।

তবে তিনি পরক্ষনেই বলেন, আমরা কমিটির স্বার্থে একপক্ষ থেকে আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক দিয়েছি যাতে বিরোধ সৃষ্টি না হয়। বিরোধ যাতে না হয় সে কারনে দুই পক্ষ থেকে কমিটি দেইনি। এ ছাড়াও অর্থের বিনিময়ে কমিটি বা কমিটি বানিজ্যের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন।