ভূয়া মানবাধিকার সংগঠনের চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামি, স্বামী স্ত্রী গ্রেপ্তার

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

জাতীয় মানবাধিকার ইউনিট নামের ভূয়া সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের ভুয়া সীল মোহর ব্যবহার করে প্রতারণার দায়ে কথিত চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব-১১)। ওই সময় বিপুল পরিমান ভুয়া সীল ও হয়রানির কাজে ব্যবহৃত নথিপত্র জব্দ করা হয়। ১২ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে র‌্যাব-১১ মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দীন এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, প্রতারিত ও ভূক্তভোগী কর্তৃক প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে ঘটনার সত্যতা পেয়ে র‌্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল গত ১১ মার্চ বুধবার দিবাগত রাতে ডিএমপি, ঢাকার মোহাম্মদপুর হাউজিং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি নামের একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের স্বঘোষিত চেয়ারম্যানকে স্বস্ত্রীক গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন উক্ত কথিত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোঃ জিয়াউল আমিন ওরফে হারুন-অর-রশিদ (৫৩) এবং অর্থ সচিব তার স্ত্রী মোসাঃ দৌলেতুন নেছা (৪২)। অভিযানের সময় প্রতারণা ও হয়রানির কাজে ব্যবহৃত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সীল সহ মোট ৪২টি ভুয়া সীল ও বিপুল পরিমান জাল/উদ্দেশ্য প্রণোদিত নথিপত্র, ১টি লোহার চাকু ও ১টি বাঁশের লাঠি উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব আরও জানায়, মোঃ জিয়াউল আমিন ওরফে হারুন-অর-রশিদ ও তার স্ত্রী মোসাঃ দৌলেতুন নেছার বাড়ী বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানাধীন কালমেঘা এলাকায়। জিয়াউল আমিন ১৯৮২ সালে পাথরঘাটা কেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে। সে ২০০৭ সালে বরগুনা, পাথরঘাটায় একটি হত্যা সংঘঠিত করে পালিয়ে ঢাকায় এসে হারুন-অর-রশিদ থেকে জিয়াউল আমিন নাম ধারণ করে। এরপর কিছু উকিলের সাথে কোর্টে কাজ করার সুবাদে সে আইনী কিছু বিষয় রপ্ত করে ২০১১ সালে ‘জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি’ নামে একটি এনজিও শুরু করে। এই এনজিও’র মাধ্যমে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে প্রতারিত করলে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালে এর লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। কিন্তু লাইসেন্স বাতিল করলেও জিয়াউল আমিন মানবাধিকার ইউনিটির নামে তার প্রতারণার কাজ অব্যাহত রাখে।

এ ছাড়াও এসএসসি পাশ জিয়াউল আমিন একাধারে মানবাধিকার ইউনিটির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলের চীফ কো-অর্ডিনেটর ও হিউম্যান রাইট্স রিভিউ সোসাইটি এর চীফ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে আসছে। এছাড়াও সে মানবাধিকার ইউনিটি নামক অবৈধ সংস্থার চেয়ারম্যানের ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে ছদ্মবেশ ধারন করে বেকার যুব সমাজকে চাকুরীর প্রলোভন, জায়গাজমি ও বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা মেটানোর নামে জনসাধারণের সাথে প্রতারণা করে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিকট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। জিয়াউল আমিন ওরফে হারুন-অর-রশিদ ২০০৭ সালে বরগুনা জেলার পাথরঘাটার চাঞ্চল্যকর দেবরঞ্জন কির্ত্তনীয়া হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামী।

জিয়াউল আমিন এই জাতীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪০টি কমিটি তৈরি করে প্রায় ২ হাজার কর্মী নিয়োগ করে যাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা সদস্য ফি হিসেবে নিয়েছে। জিয়াউল আমিনের প্রধান কাজ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে অন্যায় তদবীর করা। এই তদবীরে কোন কর্মকর্তা অস্বীকৃতি জানালে তার নামে বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ অফিস ও মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করত। জিয়াউল আমিন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সুশীল সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের শতাধিক ব্যক্তিকে নানাভাবে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে আসছে। এছাড়াও একাধিক মহিলাসহ তার নির্ধারিত কিছু এজেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় নিরীহ জনগণের নামে মনগড়া মামলা ও অভিযোগ দায়ের করে আসছে। তার এই মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সংস্থাগুলির অনুমোদন বাতিল করে দেওয়া হয়।

র‌্যাব-১১ এর অনুসন্ধানে জিয়াউল আমিন ওরফে হারুন-অর-রশিদ এর কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এমন শতাধিক ভুক্তভোগীকে পাওয়া গেছে। কোন ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা মামলা করলে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিত, এর ফলে ভুক্তভোগীরা মামলা বা অভিযোগ করার সাহস পেত না।

র‌্যাব জানায়, স্ত্রী মোসাঃ দৌলেতুন নেছা সংগঠনটির অর্থ সচিব হিসেবে জিয়াউল আমিন এর অপকর্মের একান্ত সহযোগী। জিয়াউল আমিন ওরফে হারুন-অর-রশিদ ও তার স্ত্রী মোসাঃ দৌলেতুন নেছার বিরুদ্ধে বর্ণিত ঘটনার সত্যতা পেয়ে র‌্যাব-১১, এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল গত ১১ মার্চ দিবাগত রাতে ডিএমপি ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন মোহাম্মাদীয়া হাউজিং এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্ত আসামিদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।