সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ বিএনপি থেকে সরে যাচ্ছেন শিল্পপতি নেতারা। যারা শুধুমাত্র এমপি মন্ত্রী হওয়ার লোভেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন যখন নস্যাত তখন তারা দল ছাড়ছেন ধীরে ধীরে। একই সঙ্গে যেসব আমলা বিএনপিতে প্রবেশ করেছিলেন তারাও দল ছাড়ছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ দলের পদ পদবী ছেড়ে দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাচ্ছেন। নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা বাঁচাতে এবং মামলা মোকদ্দমার জামেলা এড়াতে দলীয় পদ পদবী ছেড়েছেন তারা। এরি ধারাবাহিকতায় রয়েছেন আরো বেশকজন নেতা। অনেক পার্টটাইম রাজনীতিকও এক সময় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে এলাকায় প্রচার প্রচারণা করতে দেখা গেলেও তাদের ছায়াও দেখা যায়না এখন।
নারায়ণগঞ্জের সুপরিচিত শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে ছিলেন। তবে তিনিও মাঠের রাজনীতিতে ছিলেন না। ছিলেন এমপি মন্ত্রী হওয়ার রাজনীতিতে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী। নির্বাচিত সরকারের প্রথম সংসদ অধিবেশন শুরু হয়েছিল ১৯ মার্চ ১৯৯৬ সালে এবং অধিবেশন স্থায়ী ছিল চার কার্যদিবস ২৫ মার্চ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। ৩০ মার্চ ১৯৯৬ সালে সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। সংসদ স্থায়ী ছিল মাত্র ১২ দিন। সেই মোহাম্মদ আলীর রাজনীতি সেখানেই শেষ। যদিও ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বিএনপির নেতা হিসেবেই নারায়ণগঞ্জের অনেক কিছু নিয়ন্ত্রন করতেন। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশে তার বক্তব্য একজন আওয়ামীলীগের হিসেবেই দেখা যায়।
জানাগেছে, এক সময় বাম ছাত্র রাজনীতিতে ছিলেন কাজী মনিরুহজ্জামান মনির। তিনিও একজন শিল্পপতি। বিজেএমইএ এর নেতা ছিলেন এক সময়। পরবর্তীতে জেলা বিএনপির সেক্রেটারি হয়েছিলেন ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর। তারপর ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পান। এর আগে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্যও হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হরতাল অবরোধের মত কোন কর্মসূচিতে রাজপথে ছিলেন না কাজী মনির। ২০১১ সালে বিএনপির ডাকা হরতালে নিজের কারখানা খোলা রাখায় রূপগঞ্জের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাজী মনিরের কারখানা ভাংচুর করেছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিজেএমইএর এর এক প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন কাজী মনির। যে প্রতিবাদ সভাটি মুলত বিএনপির বিরুদ্ধে করা হয়। খালেদা জিয়াকে আগুন সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ওই সভায়। যদিও বেশকটি মামলার আসামি হয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এমপি হতে পারেননি একবারও।
শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম এমপি হওয়ার অনেক স্বপ্ন নিয়ে কল্যাণপার্টিতে যোগদান করেছিলেন। কল্যাণ পাটির কেন্দ্রৗয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিএনপিতে আসেন শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। ওই নির্বাচনে শুধুমাত্র ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে লড়াই করেন নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগের সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে পরাজিত হোন। যদিও তিনি দাবি করতেন তিনিই নির্বাচিত হয়েছিলেন কিন্তু কবরী পাশ করানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দুই মেয়াদে। যদিও তার আমলে আন্দোলন সংগ্রাম হরতাল অবরোধে নামতে নেতাকর্মীদের প্রতি তার নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ জেলায় তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির একজন ডোনার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি। নির্বাচনের পর তিনি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতির পদ ছেড়েছেন। তবে তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদ ছাড়েননি। কিন্তু তার অনুগামী নেতাকর্মীদের দিয়েই ফতুল্লায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
শিল্পপতি মুহাম্মদ সফর আলী। ২০০১ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে মনেনায়ন পেয়েছিলেন। মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণাতেও নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র ২১ দিন পূর্বে আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপিতে যোগদান করেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। ওই সময় সফর আলীর মনোনয়ন বাতিল করে গিয়াসউদ্দীনকে চূড়ান্ত মনোনিত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয় বিএনপি। তারপর থেকে বিএনপির রাজনীতিতে সরব ছিলেন না তিনি। পরবর্তীতে ২০১২ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক হন সফর আলী ভুইয়া। কিছুদিন রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামেও দেখা যায় তাকে। কিন্তু তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হলে আবারো তিনি রাজনীতি থেকে নীরব হয়ে যান। তারপর থেকে তিনি আর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় নেই।
ওয়ালিউর রহমান আপেল। যুবদলের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক মহা পরিচালক তিনি। ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে নিজেকে জাহির করেন। এলাকায় গণসংযোগ ও পোস্টার ব্যানারে ছিলেন সরব। দলের আন্দোলন সংগ্রাম কিংবা বিএনপির একটি মানববন্ধনেও তাকে দেখা যায়নি। কিন্তু এলাকায় নিজেকে প্রচার করতেন তিনি হয়ে যাচ্ছেন এমপি, তারপর মন্ত্রী। আবার দাবি করতেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বন্ধু। আপেল চাইলেই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি হতে পারেন। এলাকায় গণসংযোগ করতে গেলে বেগম খালেদা জিয়াকে ভাবি সম্বোধন করে বলতেন, ভাবি আমাকে সোনারগাঁয়ে কাজ করতে বলেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর এলাকায় গণসংযোগ কিংবা ব্যানার পোস্টারের রাজনীতিতেও নেই ওয়ালিউর রহমান আপেল। মুলত মৌসুুমী রাজনীতিকদের মধ্যে একজন।
দেশের শীর্ষ ধনীদের মধ্যে একজন ছিলেন গুলবক্স ভূঁইয়া। সেই গুলবক্স ভূঁইয়ার নাতি মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া। এক সময় কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হয়েছেন। ২০১৪ সাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে নিজেকে দাবি করতেন। মাঝে সাঝে রূপগঞ্জে বাধাবিহীন কর্মসূচিতে দেখা গেলেও হরতাল অবরোধ কিংবা পুুলিশি বাধা দেয়ার মত কর্মসূচিতে দেখা মিলেনি দিপু ভুঁইয়ার। বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে বিএনপির কিছু অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে তার অনুগামী নেতাকর্মীদের ঢুকিয়েছেন। গত নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন দিপু ভুইয়া। বেগম খালেদা জিয়া গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকলেও দিপু ভুইয়া নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কোন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- তিনি এমপি হতে পারেননি। বিএনপির রাজনীতি করে তুবও কটি মামলার শিকার হয়েছেন। তাই তিনিও বিএনপির রাজনীতিতে সরব থাকতে চাচ্ছেন না। যেকোন সময় তিনি বিএনপি ছাড়ার ঘোষণা দিতে পারেন।