সোনারগাঁয়ে আইনজীবীকে গুলিবর্ষণ, আইনজীবীর বিরুদ্ধেই কাউন্টার মামলা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এক আইনজীবীকে গুলিবর্ষণ করে হত্যাচেষ্টা চালিয়েছিল ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী। ওই মামলার পর গুলিবর্ষণকারীদের পক্ষ নিয়েছেন সোনারগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মনির। গত কয়েক বছর ধরে সোনারগাঁও থানা পুলিশের বেপরোয়া আচরনে একের পর বির্তক সৃষ্টি হচ্ছে। এর আগে এক ব্যবসায়ীকে রাতের আধারে এনে থানার ভেতরে নির্যাতন চালিয়েছেন সাবেক ওসি মোর্শেদ আলম ও এসআই সাধন চন্দ্র বসাক। ওই ঘটনায় আদালত সহ পুলিশের বিভাগীয় মামলা চলছে। এমন বির্তক শেষ না হতেই এবার নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন ওসি মনিরুজ্জামান।

এই ঘটনায় সোনারগাঁও থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান, তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আহসান উল্লাহ ও এসআই আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছেন ওই আইনজীবী।

রিট মোশনে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার মোহাম্মদ মিকাইল বাদী হয়ে বাংলাদেশের পক্ষে বিবাদী করা হচ্ছে স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের আইজিপি, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও পুলিশ সুপার, নারায়ণগঞ্জকে। হাইকোর্টে রিট মোশনের নথিপত্রের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে যা হাইকোর্ট বিভাগ খোলার প্রথম কার্যদিবসেই ফাইলিং করা হবে বলে জানান তিনি।

ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের পেরাব এলাকায় আইনজীবী খন্দকার মোহাম্মদ মিকাঈলের ১২বিঘা পুকুরে র্দীঘদিন যাবৎ মাছ চাষ করছিলেন। পুকুর আরো বড় করতে তিনি খনন কাজ শুরু করেন। গত ৭ মার্চ শনিবার দুপুরে পেরাব এলাকার ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসী মোঃ রিয়েল মোল্লা, ফয়সাল, সালাউদ্দিন, ফারুক ও মোহাম্মদ আলী সহ ৮-১০ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী পুকুরের খননকৃত মাটি জোড়পূর্বক ইট ভাটায় নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে আইনজীবী ও তার পরিবার বাঁধা দিলে সন্ত্রাসীরা আইনজীবীর কাছে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় মোঃ রিয়েল মোল্লা, ফয়সাল আইনজীবীকে মারধর করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আইনজীবীকে হত্যার উদ্যেশে প্রকাশ্যে ২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।

তবে এ ঘটনায় আইনজীবীরর মামলা গ্রহণ করতে গড়িমসি করে থানা পুলিশ। মুলত আগেই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ম্যানেজ হয়ে যায় থানা পুলিশ। গত ৭ মার্চ শনিবার রাতেই আইনজীবী বাদী হয়ে তালতলা তদন্ত কেন্দ্র ও সোনারগাঁও থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর মামলা নিতে তালবাহা শুরু করে থানা পুলিশ। এখন পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে চাপ দেয় বাদীকে।

ঘটনার পরে পুলিশ মামলা নিতে অনেকটা বাধ্য হয়। সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীর মামলা নেয়। যার নং-২৯(৩)২০২০। মামলা নিলেও পুলিশ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেপ্তারে কোন আগ্রহ দেখায়নি।

অন্যদিকে গত ২৩ মার্চ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীকে প্রকাশ্যে গুলির ঘটনায় অভিযুক্ত আসামি মোঃ রিয়েল মোল্লা, ফয়সাল, সালাউদ্দিন ও ফারুক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন খন্দকারের আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করেন। আদালতে বাদী পক্ষের আইনজীবীরা সন্ত্রাসীদের জামিনের বিরোধীতা করে যথাযথ যুক্তি তুলে ধরেন। এমন পরিস্থিতিতে আসামিদের আইনজীবী আপোষ মীমাংসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জামিন আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।
এদিকে ২৩ মার্চ জামিন না পেয়ে ৩নং আসামিকে ভিকটিম করে তার ভাইকে বাদী করে আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেছে সোনারগাঁ থানা পুলিশ। মামলা নং-৪০(৩)২০২০।

তবে, আইনজীবী খন্দকার মোহাম্মদ মিকাইল জানায়, ২৩ মার্চ সকালে আসামিরা আদালতে জামিন আবেদন করেন। ২৩ মার্চ বিকেলেই আমার বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দায়ের হলো। আজ আমরা আদালত থেকে সাঁজানো মামলায় জামিন নিলাম।

তিনি দাবি করেন- আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় যে সময়ে ঘটনা দেখানো হয়েছে তখন আমি কোর্টেই ছিলাম। ওইদিন জামিন শুনানী ও হাজিরায় আমার স্বাক্ষর রয়েছে। এমনকি ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজেও আমাকে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে দেখা যাবে। এ বিষয়ে আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। আমার মৌলিক অধিকার রক্ষায় সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আমি উচ্চ আদালতে রীট করবো।

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, আমরা রিটটি রেডি করে ফেলছি। মহামান্য হাইকোর্ট খোলার দিনই ফাইল করবো ইনশাল্লাহ। এই ওসির বিরুদ্ধে পূর্বেও হাজতে থাকা আসামির জমি রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ রয়েছে। সোনারগাঁও থানা পুলিশ আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে একটি হাস্যকর মামলা নিয়েছেন।

তিনি বলেন, আইনজীবী খন্দকার মিকাইলকে গুলি করলো মার্চের ৭ তারিখে। ওই মামলার ৩নং আসামিকে ভিকটিম করে ৮ তারিখের ঘটনা দেখানো হলো। ২৩ মার্চ তারা জামিন না পেয়ে ওই দিনই মামলা দায়ের করলো। যেদিন অ্যাডভোকেট মিকাইল কোর্টে ছিল, সিসিটিভি ফুটেজ সহ একাধিক প্রমাণ রয়েছে। এছাড়াও একজন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা বুঝাই যায় সাঁজানো। এ ঘটনা পুরো বেআইনি এবং কুড়িগ্রামের ডিসির কর্মকান্ডের পূণরাবৃত্তি মাত্র। আশা করি আমরা ন্যায়বিচার পাবো।

রিট মোশনে যা চাওয়া হচ্ছে:

হাইকোর্ট বিভাগে করা রীটে চারটি ডিরেকশন চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে-

১. আইনজীবীর বিরুদ্ধে করা মামলার সকল নথিপত্র হাইকোর্টে তলব ও সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান, তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আহসান উল্লাহ এবং উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলামকে স্ব-শরীরে হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে ব্যাখা চাওয়া।

২. আইনজীবীর বিরুদ্ধে করা মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নীচে নয় এমন একজন কর্মকর্তা দ্বারা তদন্ত করা।

৩. এই মামলায় পুলিশ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়টি দুদকের পরিচালকের নীচে নয় এমন কর্মকর্তা দ্বারা তদন্ত।

৪. উল্লেখিত তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং আইনজীবীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। এই চারটি ডিরেকশন চাওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। রীট মোশনটি শুনানী করবেন ড. বশির আহম্মেদ। মহামান্য হাইকোর্ট চারটি ডিরেকশন দিবে বলে আশাবাদী খন্দকার মিকাইলের আইনজীবীর।

কাউন্টার মামলা গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করে এ বিষয়ে সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান মনির মিডিয়াতে বলেন, অভিযোগ দুই পক্ষই করেছিলো। আগে ওনারটা (আইনজীবী) নিয়েছি এবং পরে ওদেরটা (গুলিবর্ষণকারী) নিয়েছি।