সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানা পুলিশের সাবেক ওসি মোর্শেদ আলম ও বরখাস্তকৃত এসআই সাধন চন্দ্র বসাক উপজেলা যুবলীগের নেতা জাহিদুল ইসলাম স্বপনকে কোন রকম মামলা কিংবা অভিযোগ কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া বেআইনিভাবে ধরে এনে থানার ভেতরে রাতভর মারধর করেছিলেন। পরে পুলিশই তার চিকিৎসা করে ছেড়ে দেন। রীতিমত টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন মোর্শেদ ও সাধন। ইতিমধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও হয়েছে। বিভাগীয় মামলা হওয়ার পর বরখাস্ত হয়েছেন সাধন। এমন বিষয়টি বিতর্ক শেষ না হতেই একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি করছেন বর্তমান ওসি মনিরুজ্জামান।
গত ৭ মার্চ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এক আইনজীবীকে গুলিবর্ষণ করেছিল স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। ঘটনায় অনেক তালবাহানার পর মামলা গ্রহণ করে পুলিশ। ওই মামলার ১৬দিন পর ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে কাউন্টার মামলা গ্রহণ করে সোনারগাঁও থানা পুুলিশ। এ বিষয়ে কোর্ট খোলা হলেই উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন ওই আইনজীবী। শুধু এই ঘটনাই নয় এর আগেও একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, ভাংচুর হামলার অভিযোগ মামলা গ্রহণ করেছিলেন এই ওসি মনিরুজ্জামান মনির।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এক আইনজীবীকে গুলিবর্ষণ করে হত্যাচেষ্টা চালিয়েছিল ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী। ওই মামলার পর গুলিবর্ষণকারীদের পক্ষ নিয়েছেন সোনারগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মনির। গত কয়েক বছর ধরে সোনারগাঁও থানা পুলিশের বেপরোয়া আচরনে একের পর বির্তক সৃষ্টি হচ্ছে। এর আগে এক ব্যবসায়ীকে রাতের আধারে এনে থানার ভেতরে নির্যাতন চালিয়েছেন সাবেক ওসি মোর্শেদ আলম ও এসআই সাধন চন্দ্র বসাক। ওই ঘটনায় আদালত সহ পুলিশের বিভাগীয় মামলা চলছে। এমন বির্তক শেষ না হতেই এবার নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন ওসি মনিরুজ্জামান।
এই ঘটনায় সোনারগাঁও থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান, তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আহসান উল্লাহ ও এসআই আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছেন ওই আইনজীবী।
রিট মোশনে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার মোহাম্মদ মিকাইল বাদী হয়ে বাংলাদেশের পক্ষে বিবাদী করা হচ্ছে স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের আইজিপি, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও পুলিশ সুপার, নারায়ণগঞ্জকে। হাইকোর্টে রিট মোশনের নথিপত্রের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে যা হাইকোর্ট বিভাগ খোলার প্রথম কার্যদিবসেই ফাইলিং করা হবে বলে জানান তিনি।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের পেরাব এলাকায় আইনজীবী খন্দকার মোহাম্মদ মিকাঈলের ১২বিঘা পুকুরে র্দীঘদিন যাবৎ মাছ চাষ করছিলেন। পুকুর আরো বড় করতে তিনি খনন কাজ শুরু করেন। গত ৭ মার্চ শনিবার দুপুরে পেরাব এলাকার ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসী মোঃ রিয়েল মোল্লা, ফয়সাল, সালাউদ্দিন, ফারুক ও মোহাম্মদ আলী সহ ৮-১০ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী পুকুরের খননকৃত মাটি জোড়পূর্বক ইট ভাটায় নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে আইনজীবী ও তার পরিবার বাঁধা দিলে সন্ত্রাসীরা আইনজীবীর কাছে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় মোঃ রিয়েল মোল্লা, ফয়সাল আইনজীবীকে মারধর করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আইনজীবীকে হত্যার উদ্যেশে প্রকাশ্যে ২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।
তবে এ ঘটনায় আইনজীবীরর মামলা গ্রহণ করতে গড়িমসি করে থানা পুলিশ। মুলত আগেই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ম্যানেজ হয়ে যায় থানা পুলিশ। গত ৭ মার্চ শনিবার রাতেই আইনজীবী বাদী হয়ে তালতলা তদন্ত কেন্দ্র ও সোনারগাঁও থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর মামলা নিতে তালবাহা শুরু করে থানা পুলিশ। এখন পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করতে চাপ দেয় বাদীকে।
ঘটনার পরে পুলিশ মামলা নিতে অনেকটা বাধ্য হয়। সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীর মামলা নেয়। যার নং-২৯(৩)২০২০। মামলা নিলেও পুলিশ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেপ্তারে কোন আগ্রহ দেখায়নি।
অন্যদিকে গত ২৩ মার্চ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীকে প্রকাশ্যে গুলির ঘটনায় অভিযুক্ত আসামি মোঃ রিয়েল মোল্লা, ফয়সাল, সালাউদ্দিন ও ফারুক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন খন্দকারের আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করেন। আদালতে বাদী পক্ষের আইনজীবীরা সন্ত্রাসীদের জামিনের বিরোধীতা করে যথাযথ যুক্তি তুলে ধরেন। এমন পরিস্থিতিতে আসামিদের আইনজীবী আপোষ মীমাংসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জামিন আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।
এদিকে ২৩ মার্চ জামিন না পেয়ে ৩নং আসামিকে ভিকটিম করে তার ভাইকে বাদী করে আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেছে সোনারগাঁ থানা পুলিশ। মামলা নং-৪০(৩)২০২০।
তবে, আইনজীবী খন্দকার মোহাম্মদ মিকাইল জানায়, ২৩ মার্চ সকালে আসামিরা আদালতে জামিন আবেদন করেন। ২৩ মার্চ বিকেলেই আমার বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দায়ের হলো। আজ আমরা আদালত থেকে সাঁজানো মামলায় জামিন নিলাম।
তিনি দাবি করেন- আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় যে সময়ে ঘটনা দেখানো হয়েছে তখন আমি কোর্টেই ছিলাম। ওইদিন জামিন শুনানী ও হাজিরায় আমার স্বাক্ষর রয়েছে। এমনকি ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজেও আমাকে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে দেখা যাবে। এ বিষয়ে আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। আমার মৌলিক অধিকার রক্ষায় সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আমি উচ্চ আদালতে রীট করবো।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, আমরা রিটটি রেডি করে ফেলছি। মহামান্য হাইকোর্ট খোলার দিনই ফাইল করবো ইনশাল্লাহ। এই ওসির বিরুদ্ধে পূর্বেও হাজতে থাকা আসামির জমি রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ রয়েছে। সোনারগাঁও থানা পুলিশ আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে একটি হাস্যকর মামলা নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আইনজীবী খন্দকার মিকাইলকে গুলি করলো মার্চের ৭ তারিখে। ওই মামলার ৩নং আসামিকে ভিকটিম করে ৮ তারিখের ঘটনা দেখানো হলো। ২৩ মার্চ তারা জামিন না পেয়ে ওই দিনই মামলা দায়ের করলো। যেদিন অ্যাডভোকেট মিকাইল কোর্টে ছিল, সিসিটিভি ফুটেজ সহ একাধিক প্রমাণ রয়েছে। এছাড়াও একজন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা বুঝাই যায় সাঁজানো। এ ঘটনা পুরো বেআইনি এবং কুড়িগ্রামের ডিসির কর্মকান্ডের পূণরাবৃত্তি মাত্র। আশা করি আমরা ন্যায়বিচার পাবো।
রিট মোশনে যা চাওয়া হচ্ছে:
হাইকোর্ট বিভাগে করা রীটে চারটি ডিরেকশন চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে-
১. আইনজীবীর বিরুদ্ধে করা মামলার সকল নথিপত্র হাইকোর্টে তলব ও সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান, তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আহসান উল্লাহ এবং উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলামকে স্ব-শরীরে হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে ব্যাখা চাওয়া।
২. আইনজীবীর বিরুদ্ধে করা মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নীচে নয় এমন একজন কর্মকর্তা দ্বারা তদন্ত করা।
৩. এই মামলায় পুলিশ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়টি দুদকের পরিচালকের নীচে নয় এমন কর্মকর্তা দ্বারা তদন্ত।
৪. উল্লেখিত তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং আইনজীবীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। এই চারটি ডিরেকশন চাওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। রীট মোশনটি শুনানী করবেন ড. বশির আহম্মেদ। মহামান্য হাইকোর্ট চারটি ডিরেকশন দিবে বলে আশাবাদী খন্দকার মিকাইলের আইনজীবীর।
কাউন্টার মামলা গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করে এ বিষয়ে সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, অভিযোগ দুই পক্ষই করেছিলো। আগে ওনারটা (আইনজীবী) নিয়েছি এবং পরে ওদেরটা (গুলিবর্ষণকারী) নিয়েছি।
এর আগে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধি নারীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা গ্রহণ করেছিলেন ওসি মনিরুজ্জামান। স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছিলেন- যে নারী নিজেই চলাফেরা করতে পারে না, সেই নারী কিভাবে অপরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যাচেষ্টা চালাবে? স্থানীয়দের অভিযোগ বাদী পক্ষের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে বৃদ্ধা নারীকে দণ্ডবিধির ৩০৭ ও ৩২৬ ধারার মত অভিযোগের মামলায় ফাঁসিয়েছে পুুলিশ।
মামলা সূত্রে, গত ২৬ ডিসেম্বর উপজেলার পশ্চিম সনমান্দি এলাকার মৃত লাল মোহাম্মদ বেপারীর ছেলে রেজু মিয়া সোনারগাঁ থানায় তিনজনকে অভিযুক্ত করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে রেজু মিয়া দাবি করেন- আলমদি দক্ষিনপাড়া খৈতেরভুলুয়া এলাকার জয়না মিয়ার ছেলে শরীফ হোসেন, জয়না মিয়ার স্ত্রী রেনু বেগম ও নান্নু মিয়ার ছেলে জামালের সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে রেজু মিয়ার মেয়ে রাজিয়া আক্তারের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ হয়। তর্কের এক পর্যায়ে ২৪ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজিয়া আক্তারের বাড়িতে প্রবেশ করে ধারালো দা, কাঠের ও বাশের লাঠিসোটা সহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে উপরোক্ত বিবাদী সহ অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জন মিলে হামলা চালিয়ে মারধর করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়- রেনু বেগম রাজিয়া বেগমের গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এই হামলা করা হয় বলেও অভিযোগ আনা হয়। বাড়িঘর ভাংচুরেরও অভিযোগ করা হয়। যার মধ্যে রেনু বেগম নিজেই লাঠি হাতে চলাফেরা করেন।
আসামি হওয়া বৃদ্ধা শারীরিক প্রতিবন্ধি রেনু বেগম তার শারীরিক প্রতিবন্ধির ভাতা কার্ড দেখিয়ে দাবি করেন তিনি নিজেই হাটতে পারেন লাঠি হাতে কষ্ট করে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে পুুলিশ মামলা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
গত ৩০ ডিসেম্বর সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করলে রেনু বেগম ও রিক্সাচালক জামালের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। আদালতে বৃদ্ধা শারীরিক প্রতিবন্ধি নারীর যাবতীয় কাগজপত্র আদালতে তুলে ধরেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফিরোজ মিয়া।
একজন বৃদ্ধা শারীরিক প্রতিবন্ধি কিভাবে দন্ডবিধির ৩০৭, ৩২৬, ২২৩, ২২৪ ধারায় আসামি হয় এবং যেখানে হত্যাচেষ্টা, গুরুত্বর জখমের ধারায় রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই সময় সোনারগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেছিলেন, রেনু বেগমকে তো আসামি করেছে বাদী। আমরা করিনি। এটা বাদীকে জিজ্ঞাসা করেন।
কেউ অভিযোগ দায়ের করলেও তো আগে অভিযোগের তদন্ত হয় তারপর মামলা রুজু করা হয়- এমনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাদী কাউকে আসামি করলে পুলিশের কিছু করণীয় থাকে না। তাছাড়া ভিকটিম গুরুত্বর জখম হয়েছে। সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেছিলেন, আমরা তো ওই নারীকে গ্রেপ্তার করিনি। মামলা তদন্ত হবে। তদন্ত শেষে যদি কারো সম্পৃক্ততা না পাওয়া যায় তাহলে তাকে অব্যাহতি দেয়া হবে।
অন্যদিকে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের নির্দেশে সোনারগাঁ থানার সাবেক (সেকেন্ড অফিসার) এসআই সাধন চন্দ্র বসাককে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা রুজ করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়। পুলিশ সুপার মামলা রুজু করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবাস চন্দ্র সাহাকে বিভাগীয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করেছেন। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের বিভাগীয় মামলা নং-০৪/২০২০ রুজু করে ইতিমধ্যে মামলার স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য দিতে সমন পাঠিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
জানা গেছে, সোনারগাঁ থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মোর্শেদ আলম ও সেকেন্ড অফিসার এসআই সাধন বসাকের বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের সিকিউরিটি সেলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন উপজেলা যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম স্বপন। পুলিশ হেডকোয়াটার্স স্বপনের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে পিবিআই, নারায়ণগঞ্জ ও পুলিশ হেডকোয়াটার্সের একজন উধ্বর্তন কর্মকর্তার সমন্বয়ে দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায়। তদন্তকালীন সময়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয় মিথ্যা স্বাক্ষী, উপাত্ত দিয়ে তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন।
এখানে উল্লেখ্যযে যে, সোনারগাঁ থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মোর্শেদ আলম ও এসআই সাধন বসাক অনৈতিক সুবিধা পেয়ে বিগত ৮ অক্টোবর গভীর রাতে পদ, পদবী ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে দত্তপাড়ার বাগান বাড়ী থেকে কোন প্রকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, অভিযোগ বা মামলা না থাকা সত্ত্বেও আটক করে যুবলীগ নেতা ও সাবেক এমপির এপিএস জাহিদুল ইসলাম স্বপন, তার বায়রা আনিছুর রহমান আলমগীর এবং ভাগিনা বাবুলকে। আটকের পর তাদেরকে থানায় নিয়ে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা। শুধুমাত্র একটি পক্ষ থেকে বেআইনী সুবিধা পেয়ে এ কাজ করেন সোনারগাঁ থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মোর্শেদ আলম ও এস আই সাধন বসাক। পরে স্বপন পুলিশের অব্যাহত নির্যাতনে মারাত্মক অসুস্থ্য ও জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পুলিশ। হাসপাতাল থেকে পুণরায় থানায় নিয়ে রশিতে ঝুলিয়ে মারাত্মক মারধর করে এবং ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পুরো ঘটনাটির অডিও রেকর্ডও প্রকাশিত হয়। ঘটনাটি প্রমানিত হওয়ায় সাধন বসাককে সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়।
এ বিষয়ে মামলারবাদী জাহিদুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমি কিছুটা হলেও ন্যায়বিচার পেলাম। আশা করি, বিভাগীয় মামলায় অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা চূড়ান্তভাবে শাস্তি পাবে।