সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এক আইনজীবীকে গুলিবর্ষণ করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনায় অনেক গড়িমসি শেষে মামলা গ্রহণ করলেও কাউকে গ্রেপ্তার তো দুরের কথা গুলিবর্ষণের সেই অস্ত্রও উদ্ধার করেনি পুলিশ। উল্টো ১৬দিন পর ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে কাউন্টার মামলা গ্রহণ করেছেন সোনারগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মনির। পুলিশের এমন ভুমিকায় আবারো সেই আইনজীবীকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। সেখানে আইনজীবীকে না পেলেও আইনজীবীর ভাইকে পেয়ে হত্যাচেষ্টা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তাকে উদ্ধার করে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আইনজীবী খন্দকার মোহাম্মদ মিকাইলকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২৯ মার্চ রবিবার বিকেলে সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। আইনজীবী মিকাইল ওই স্থানে না থাকায় তার বড় ভাই খন্দকার সোলাইমানকে বেদম মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেছে। সন্ত্রাসীরা খন্দকার সোলাইমানকে মৃত ভেবে চলে গেলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে রূপগঞ্জের ইউএসবাংলা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর অবস্থা আশংকাজনক বলে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করে। বর্তমানে আইনজীবীর বড় ভাইকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতারের আইসিউতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট মিকাইল।
তিনি জানান, নামধারী ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী মোঃ রিয়েল মোল্লা, ফয়সাল, সালাউদ্দিন, ফারুক, মোহাম্মদ আলী, কলতাপাড়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলজার, শাহীন, আলমগীর, রাসেল ও পনির ভূইয়া নামের ব্যক্তিরা দলবদ্ধ হয়ে এ হামলায় অংশগ্রহণ করে। আসামিরা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বলে স্থানীয়রা ভয়ে কিছু বলতে সাহস পায়নি।
অন্যদিকে অ্যাডভোকেট মিকাইলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন বলেন, মিকাইলের মামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশকে একাধিকবার বলা হলেও তারা উল্টো আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে মদদ দেয়। সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান, তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আহসান উল্লাহকে অবিলম্বে বরখাস্তের দাবি জানাই। তা না হলে আইনজীবী সমাজ বসে থাকবে না। সোনারগাঁও থানা পুলিশের কাছ থেকে নূন্যতম আইনি সেবা পায়নি সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার মিকাইল ও তার পরিবার। আমরা সব বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতে যাবো।
আরও অভিযোগ ওঠেছে, মাটি সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম যেন নির্বিগ্নে চালাতে পারে তার দায়িত্বটা নিয়েছেন তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আহসান উল্লাহ, ওসি মনিরুজ্জামান। এছাড়াও সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান, তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আহসান উল্লাহ ও উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম হলো মাটি সন্ত্রাসীদের পকেটের লোক। একজন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীর বিরুদ্ধে মাটি সন্ত্রাসীদের অনুরোধে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়া সাঁজানো ও হাস্যকর মামলা নেয় সোনারগাঁও থানা পুলিশ।
উল্লেখ্য যে, সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের পেরাবো এলাকায় পুকুরের মাটি ব্রিক ফিল্ডে (ইটভাটা) বিক্রি না করায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীর উপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেছিল ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা। গত ৭ মার্চ শনিবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটায় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় আইনজীবী বাদী হয়ে ওই রাতে তালতলা তদন্ত কেন্দ্রে ও সোনারগাঁও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
সোনারগাঁও থানায় করা আইনজীবীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের পেরাব এলাকায় সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার মোহাম্মদ মিকাইল তার ১২ বিঘা পুকুরে র্দীঘদিন ধরে মাছ চাষ করে আসছিলেন। আরো অধিক পরিমানে মাছ চাষের জন্য নিজ পুকুর খনন কাজ শুরু করেন।
চলতি মাসের ৭ মার্চ শনিবার দুপুরে জামপুর ইউনিয়নের পেরাব এলাকার নামধারী ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী মোঃ রিয়েল মোল্লা, ফয়সাল, সালাউদ্দিন, ফারুক ও মোহাম্মদ আলী সহ ৮-১০ জনের একটি দল পুকুরের মাটি খনন কাজে বাধা দিয়ে ওই পুকুরের মাটি জোড়পূর্বক ইট ভাটায় নেওয়ার চেষ্টা করে।
এতে আইনজীবী বাঁধা দিলে সন্ত্রাসীরা মাটির বদলে আইনজীবীর কাছে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় মোঃ রিয়েল মোল্লা, ফয়সাল আইনজীবীকে মারধর করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আইনজীবীকে লক্ষ্য করে ২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার মোহাম্মদ মিকাইল বলেন, পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দেশ্য আমার ভাইকে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে। আমার ভাইয়ের অবস্হা শংকটাপন্ন। আমার বড় ভাইয়ের জন্য একটু দোয়া করবেন।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু বলেনি। একটি মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে আর পুলিশ বলছে তাদেরকে দেখছিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি আসামিদের ধরার জন্য।