গরীবের পাশে মান্নান: বিএনপির এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশি বাকিরা কোথায়?

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার সকল সরকারি ও বেসরকারি সহ সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিম্ম আয়ের মানুষ যেমন রিক্সাচালক, ভ্যানচালক সহ দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের জীবন যাপন দূরহ হয়ে পড়েছে। অসহায় গরীব মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে দাড়াচ্ছেন বিএনপি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দলের ব্যক্তিবর্গ। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যেসব রাজনৈতিক নেতারা এমপি হতে চান এবং এমপি হলে জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার হাজারো প্রতিশ্রুতি দেন সেইসব নেতাদের বর্তমান ভুমিকা। তার ব্যক্তিক্রম হয়নি নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসন থেকে বিএনপির যেসব নেতারা এমপি হওয়ার জন্য নির্বাচনের বছর খানিক আগে জনগণের দুয়ারে দৌড়াতে থাকেন। অথচ এমন পরিস্থিতিতে দুমঠো চাল ডাল নিয়ে গরীব মানুষের পাশে দাড়ানোর মত মন মানসিকতা তাদের ক্ষীণ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই আসন থেকে তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন অধ্যাপক রেজাউল করিম। একজন খেটে খাওয়া দর্জি শ্রমিকের সন্তান রেজাউল করিম আজকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। যা শুধু সোনারগাঁয়ের জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ফলেই সম্ভব হয়েছে। কিন্তু আজকে সেই দূর্ভোগে থাকা জনগণের পাশে রেজাউল করিমের ছায়াও দেখা যাচ্ছেনা। তবে নির্বাচন আসলে মনোনয়ন কিনতে সবার আগে সিরিয়াল ধরেন তিনি। গত নির্বাচনেও মনোনয়ন কিনেছিলেন আবারো এমপি হওয়ার আশায়। তিনি হয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু সোনারগাঁয়ের মানুষের উন্নয়নের কোন পরিবর্তন হয়নি তার দ্বারা।

খন্দকার আবু জাফর। বছরের বেশির ভাগ সময় তিনি কাটান আমেরিকায়। সেই ২০০১ সাল থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করে আসলেও তার ভাগ্যে এমপি হওয়া তো দুরের কথা মনোনয়ন পাওয়ার সৌভাগ্যই হয়নি এখনও। দলের প্রতি তার যথেষ্ট কর্ম থাকরেও আপামর আমজনতার পাশে তিনি দাড়িয়েছেন এমন নজির তিনি রাখতে পারেননি। তিনি সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদেও রয়েছেন। এর আগে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পদে ছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে তাকেও দেখা যাচ্ছেনা। অথচ তিনিও এমপি হতে চান।

আজহারুল ইসলাম মান্নান কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। একই সঙ্গে তিনি সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি পদে রয়েছেন। আওয়ামীলীগ সরকার আমলে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু এত্তসব পেয়ে সোনারগাঁয়ের গরীব অসহায় মানুষের মাঝে স্বশরীরে সাহায্য নিয়ে তাকে দাড়াতে দেখা না গেলেও তার পক্ষ থেকে তার ছেলে জেলা ছাত্রদলের সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীব গরীবের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। তার পক্ষে জেলা শ্রমিকদলের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন।

সেই সঙ্গে মান্নানের পিএস সেলিম হোসেন দিপু প্রায় এক সপ্তাহব্যাপী জীবাণুনাশক স্প্রে, মাস্ক ও স্যানিটাইজার সহ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। উপজেলা যুবদলের নেতাকর্মীরাও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে। মোট কথা মান্নান স্বশরীরে উপস্থিত না থাকলেও তার পক্ষে তার নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে দাড়িয়েছেন সবার আগে। মান্নানের পিএস সেলিম হোসেন দিপু দাবি করেছেন- আমরা মান্নান সাহেবের পক্ষ থেকে নিয়মিত অসহায় মানুষের পাশে আছি এবং সকল মানুষকে সচেতনতায় কাজ করছি। অচিরেই মান্নান সাহেব নিজেও গরীবের মাঝে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করবেন। আমরা তার নির্দেশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল। সোনারগাঁয়ের বারদী ইউনিয়নের সন্তান হলেও তিনি মহানগরীর কেন্দ্রীক রাজনীতি করেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সোনারগাঁ আসন থেকে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন। যদিও তিনি মনোনয়ন পাননি। এর আগে থেকেই তিনি সোনারগাঁ আসন থেকে নির্বাচনের প্রত্যাশা করে আসছিলেন। তবে তিনিও নির্বাচন আসলেই সোনারগাঁয়ে পদচারণা বাড়িয়ে দেন। বিশেষ করে সামাজিক আন্দোলনে তিনি সোনারগাঁয়ে অবস্থান নেন বেশি। বর্তমানে তিনি বছরের বেশির ভাগ সময় থাকেন আমেরিকায়। এখনও রয়েছেন সেখানে। তবে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সোনারগাঁয়ের গরীব মানুষের পাশে দাড়ানোর সময়ে তার কোন উদ্যোগ নেই।

এসএম ওয়ালিউর রহমান আপেল। তিনি কেন্দ্রীয় যুবদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে নিজেকে দাবি করেন। ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তিনি মৌসুমী পাখি মার্কা রাজনীতিকদের মধ্যে অন্যতম। নির্বাচন আসলেই তিনি সোনারগাঁয়ে নেমে পড়েন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বন্ধ হিসেবে এলাকায় জাহির করেন। বেশকবার তার বাড়িতে ফখরুলকে পারিবারিক অনুষ্ঠানে দেখাও যায়। নির্বাচন আসলেই তাকে এলাকায় গণসংযোগে দেখা যায়। দলের আন্দোলন সংগ্রাম তো দুরের কথা একটি মানববন্ধনেও যার ছায়া দেখা যায়নি। এলাকায় গণসংযোগে গেলে জনতার সামনে কথায় কথায় বেগম খালেদা জিয়াকে ভাবি ও মির্জা ফখরুলকে বন্ধ হিসেবে সম্বোধন করেন। মানুষকে বুঝাতে চান তার হাতে মনোনয়ন মুড়ির মোয়া এবং এমপি মন্ত্রী হওয়া হাতের তুড়ি। কিন্তু সেই আপেলকে এক পুটলি চাল ডাল নিয়ে কোন গরীবের মাঝে বিতরণ দেখা গেল না। অথচ ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল। গত নির্বাচনে তিনিও দলের মনোনয়ন পত্র ক্রয় করেছিলেন। তবে আন্দোলন সংগ্রাম কিংবা দলীয় কর্মকান্ডে তার সামান্যতম ভুমিকা না থাকলেও মান্নানের পর সোনারগাঁয়ের অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন কেবল একমাত্র তিনিই। যেখানে রেজাউল করিমের মত ব্যক্তির কোন খবর নেই সেখানে ইমতিয়াজ বকুল ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পৌর কাউন্সিলর ফারুক আহমেদ তপন সহ নেতাকর্মীদের নিয়ে অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন।