সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন ভবন বেইলী টাওয়ার লকডাউন করেছে প্রশাসন। বেইলী টাওয়ারে বসবাসরত একজন চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় এই ভবনটি লকডাউন করা হয়।
এর আগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগ বাংলাবাজার আমবাগান বড়বাড়ি এলাকায় করোনার উপসর্গ নিয়ে একজন প্রবীণ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে। ওই এলাকা রাত ১টার দিকে লকডাউন হিসেবে ঘোষণা করেছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক।
জানাগেছে, বসাক চন্দ্র সাহা তিনি অর্থোপেডিক্সের চিকিৎসক। গত ২৩ মার্চ রাতে চিকিৎসক জ্বর আসে। ২৪ মার্চ পর্যন্ত তিনি বাসায় ছিলেন। গত ২৫মার্চ তিনি ডাক্তার দেখাতে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনায় আক্রান্ত সন্দেহ হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে করোনা পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। ডাক্তারদের পরামর্শে তিনি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট পজিটিভ আসে।
ওই চিকিৎসক চাষাড়া বেইলী টাওয়ারের ৮ম তলায় তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে ও স্ত্রী সহ বসবাস করে আসছিলেন। আরেক মেয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। ওই ডাক্তারের সহকারী জানান, স্যারের কয়েকদিন যাবৎ জ্বর ছিল। স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তারা স্যারকে করোনা টেস্ট করাতে বলেন। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার রেজাল্ট পজিটিভ আসে এবং তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে আমরা সবাই নিশ্চিত হয়েছি। এদিকে করোনায় আক্রান্তের খবরটি শনিবার জানাজানি হওয়ার পরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বেইলী টাওয়ারে বসবাসরত অন্যান্য ফ্ল্যাটের ৩৪টি পরিবার।
বেইলী টাওয়ার ফ্ল্যাট ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি রথীন চক্রবর্তী স্থানীয় মিডিয়াতে জানান, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে আমরা সন্দেহ করেছিলাম। শনিবার তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে এবং তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন শুনে সাথে সাথেই আমরা বেইলী টাওয়ারের লিফট ও গ্যারেজ বন্ধ করে দিয়েছি। পুরো ভবনের সবাই নিজেরাই নিজেদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছি। কিন্তু ডাক্তারের দুই মেয়ে ও স্ত্রী বারবার আসা-যাওয়া করেছেন। পুরো ভবনের সবাই আতঙ্কিত। কিছু বুঝতে পারছিনা। আমরা তার বাসার দরজার নিচ দিয়ে চিঠি দিয়ে তাদের বের না হতে বলছি। বেইলী টাওয়ারে করেনায় আক্রান্ত হয়েছেন যার কারণে পুরো ভবনের সবাই দুঃশ্চিন্তায় ও আতঙ্কিত। আমরা কি করবো, না করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
জেলা করোনা ফোকাল পারসন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিডিয়াতে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘ওই ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে আইইডিসিআর থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরে পপুলার হাসপাতালসহ ঢাকার একটি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, শেষে তিনি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে গিয়ে করোনা টেস্ট করান এবং তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এটি জানার পর থেকেই ওই ভবনের সভাপতি নিজেরাই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বাকিদের বলেছেন। আমাদেরও জানিয়েছেন। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করছি। ডা.বসাক ঢাকাতেই আইইডিসিআর এর পর্যবেক্ষণে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছেন। তার পরিবারের সবাই এবং তিনি যেখানে রোগী দেখতেন অর্থাৎ তার চেম্বারের এসিট্যান্টসহ সকলেই হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। আমরা ওই ভবনের ফ্ল্যাট মালিক সভাপতিকে নিজেদের ফ্ল্যাটসহ পুরো ভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা অবলম্বন করতে এবং সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জেলা কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ মিডিয়াতে বলেন, ‘তারা যেহেতু হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন, সেহেতু লকডাউন করার প্রয়োজনীয়তা নেই। আমরাও সতর্ক নজর রাখছি।’