সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনি আব্দুল মাজেদের লাশ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দাফন করা হয়েছে। তীব্র বাধার মুখে মাজেদের নিজ ভিটা ভোলায় দাফন করতে না পেরে মাজেদের শ^শুর বাড়ি সোনারগাঁয়ের শম্ভুপুরা ইউনিয়নে লাশ দাফন করা হয়। বিষয়টি সকালে জানাজানি হলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত সহ উপজেলা আওয়ামীলীগ এই লাশ সেখান থেকে অপসারণ করে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার দাবি তুলেছে।
সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি জানোয়ার মাজেদের লাশ সোনারগাঁয়ের মাটিতে দাফন হতে পারে না। বরিশালের পাপ বরিশালে পাঠানো হোক। অন্যথায়, স্বাধীনতার স্বপক্ষের সোনারগাঁয়ের বিপ্লবী জনতা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদকে সোনারগাঁয়ে দাফন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি মিডিয়াতে বলেন, খুনি মাজেদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সারাবাংলার জাতিকে হত্যা করে কলঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জাতির সাথে বেঈমানি করেছে। সেই বেঈমানের কবর এদেশে হতে পারে না।
আওয়ামীলীগের এই নেতা বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর সহচর হিসেবে সোনারগাঁয়ে তার দাফন মেনে দিতে পারি না। আমি সোনারগাঁয়ের সন্তান, স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে এ দেশ ও দেশের মাটিকে রক্ষা করতে যুদ্ধ করেছি। কোন খুনিকে এ মাটিতে কবর দেয়ার জন্য যুদ্ধ করেনি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাবো সোনারগাঁয়ের পবিত্র মাটিতে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন দেশ প্রেমিককে খুন করা খুনির দাফন সোনারগাঁয়ে হতে পারেনা। প্রশাসন রাতের আধারে আমাদের না জানিয়ে তার লাশ দাফন করেছে। আমরা যদি জানতাম তাহলে কখনই খুনি মাজেদকে সোনারগাঁয়ের মাটিতে দাফন করতে দিতাম না। এখন আমি ও আমার মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানাবো খুনি মাজেদের লাশ সোনারগাঁ থেকে উত্তোলন করে অন্যত্র দাফন করার হোক।
এ ছাড়াও রাতের বেলা লাশ দাফনের পর সকালে প্রশ্ন রেখে উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও পিরোজপুুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম মিডিয়াতে বলেছেন, আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই-খুনি মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তার মৃতদেহ কেন রাতের আঁধারে আমাদের সোনারগাঁও উপজেলায় দাফন করা হলো?
তিনি বলেন, যেহেতু এই খুনির শ্বশুরের গ্রামের বাড়ি আমাদের সোনারগাঁ এলাকায় সেহেতু তার মরদেহ সোনারগাঁয়ে গোপনে দাফনের ফলে জাতির পিতার আর্দশের সৈনিকেরা তা মেনে নিতে পারছে না। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সোনারগাঁ উপজেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, সহ সকল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো প্রতিবাদ জানিয়ে এই লাশ অন্যত্র সরিয়ে ফেলার দাবি তুলেছেন।
তিনি বলেন, আমি নিজেও এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি বিনীতভাবে, সরকারকে অনুরোধ করবো, এই খুনির লাশ, সোনারগাঁ থেকে অবিলম্বে অপসারণ করে, আমাদের এ কলঙ্ক থেকে মুক্ত করুন। প্রয়োজন হলে মেঘনা নদীতে ফেলে দিন, তবুও আমাদের সোনারগাঁয়েরঁ মাটি অপবিত্র করবেন না।
এদিকে রবিবার সকালে শম্ভুপুরা যান নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম। তিনি সেখানে জড়ো হলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাও জড়ো হোন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন এই লাশ এখান থেকে অন্যত্র সরাতেই হবে। নতুনা এই লাশ মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়া হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনির লাশ এখানে রেখে কলংকের মুখে থাকতে চাইনা। আমি কলংকমুক্ত থাকতে চাই।
অন্যদিকে জানাগেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের খুনি সেই আব্দুল মাজেদের লাশ সোনারগাঁয়ে দাফন করা হয়েছে। লাশ দাফনে মাজেদের এলাকা ভোলায় স্থানীয়দের কঠোর আপত্তি থাকায় তার শ্বশুর বাড়ি সোনারগাঁয়ের শম্ভুপুরা ইউনিয়নের নবীনগর গোরস্থানে দাফন করা হয়। বিষয়টি সকালে প্রকাশিত হলে সোনারগাঁয়ের মানুষ লাশ উত্তোলন করে সরিয়ে নেয়ার দাবি তুলেছেন।
জেল কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানায়, আবদুল মাজেদের লাশ তার শ্বশুরবাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকায় দাফন করা হয়। রবিবার ভোরে মাজেদের লাশ তার শ্বশুর বাড়ি সোনারগাঁ উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের হোসেনপুরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে শনিবার বিকেলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি বরখাস্ত ক্যাপ্টেন মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর তার লাশ ভোলার মাটিতে না পাঠানোর দাবি জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য। শনিবার বিকেলে তার নির্বাচনী এলাকা লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ দাবি জানান তিনি।
প্রায় সাড়ে চার দশক আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণের দায়ে ক্যাপ্টেন (চাকরিচ্যুত) আব্দুল মাজেদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় ১১ এপ্রিল শনিবার দিবাগত রাত ১২ টা ১মিনিটে। কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এই ফাঁসি কার্যকর করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নতুন স্থাপিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এটিই প্রথম ফাঁসি। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলায় মোট ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর হলো। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। রায় কার্যকরের আগেই ২০০১ সালের জুনে জিম্বাবুয়েতে মারা যান আজিজ পাশা। পলাতক রয়েছেন খন্দকার আব্দুর রশিদ, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেহ উদ্দিন।
এর আগে শুক্রবার বিকালে কারা কর্তৃপক্ষ মাজেদের পরিবারের সদস্যদের কাছে মোবাইলে ফোন করে শেষ দেখা করার তথ্য জানায়। শুক্রবার সন্ধ্যার পর মাজেদের স্ত্রী ডা. সালেহা বেগম, মাজেদের এক ভাই, এক বোন ও একজন ভাতিজাসহ ৫ জন কারাগারে দেখা করেন।
গত ৮ এপ্রিল মৃত্যুর পরোয়ানা পড়ে শোনানোর পর সব দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান আব্দুল মাজেদ। প্রাণভিক্ষার আবেদনটি নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি বাতিল করে দেয়ার পর সেই চিঠিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়।