সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে লকডাউনে প্রায় ২ মাস যাবত বন্ধ থাকা নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারী শিল্পের ধ্বস, এই শিল্পে নিয়োজিত ক্ষুদ্র ও স্বল্প পুঁজি সম্পন্ন মালিকদের আর্থিক সংকটের অবস্থা বিবেচনা, হোসিয়ারী শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় হোসিয়ারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী সীমিত আকারে খোলার অনুমতি চেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর আবেদন করেছে বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশন।
২ মে শনিবার বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম স্বাক্ষরিতে চিঠিতে জেলা প্রশাসক বরাবর এ আবেদন করা হয়।
এছাড়াও বিষয়টি অবগতির জন্য চিঠির অনুলিপি দি ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বর অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট, বিকেএমইএ’র সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন ও নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর প্রদান করা হয়।
আবেদনে দাবি করা হয়- দরখাস্তে নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত নয়ামাটি, উকিলপাড়া (বঙ্গবন্ধু সড়ক), নন্দীপাড়া, লয়েল ট্যাংক রোড (এল.টি রোড), সোহরাওয়ার্দ্দী মার্কেট দেওভোগ), এস.এম.মালেহ রোড (টানবাজার) সহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার অনুমুতি চেয়ে আবেদন করা হয়।
দরখাস্তে বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম আরো উল্লেখ করেন, হোসিয়ারী শিল্পে নিয়োজিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মালিকগণ প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যগুলো আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহায় বিক্রির আশায় ব্যাপকভাবে উৎপাদন করে মজুদ রাখেন। তারা প্রতি বছর এ সকল হোসিয়ারী পণ্যগুলো বিক্রির জন্য এই উৎসবগুলোর প্রহরগুণে থাকেন।
কিন্তু, সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় ২ মাস যাবত বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে মজুতকৃত উৎপাদিত হোসিয়ারী পণ্যগুলো আসন্ন ঈদুল ফিতরে বিক্রি করতে না পারলে হোসিয়ারী মালিকগণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং ব্যবসার মূলধন হারিয়ে অসহায় ও নিঃস্ব হওয়ার আশংকা তীব্রভাবে দেখা দেয়ার উপক্রম হয়েছে। অন্যদিকে তারা আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হওয়ায় হোসিয়ারী শ্রমিকগণ তাদের ন্যায্য মজুরী হতেও বঞ্চিত হচ্ছে।
তাই হোসিয়ারী শিল্পে নিয়োজিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও স্বল্প পুঁজি সম্পন্ন মালিকদের আর্থিক সংকটের অবস্থা বিবেচনা এবং হোসিয়ারী শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষা, গতিশীল উৎপাদন অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণের বিবেচনায় আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহায় উৎপাদিত হোসিয়ারী পণ্যগুলো বর্তমান উদ্ভব পরিস্থিতিতে সরকার কর্তৃক ঘোষিত নির্দেশ অনুযায়ী সীমিত আকারে হোসিয়ারী প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রেখে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করার অনুমুতি চেয়ে সীমিত আকারে প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখার দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আহ্বান জানান বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম।
উল্লেখ্য, শিল্প অধ্যুষিত ও ব্যবসা সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ জেলায় ১৯৫০ দশকে হোসিয়ারী শিল্পের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ডেমরা, কুমিল্লা, পাবনা, গাজীপুর সহ বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত প্রায় ৩ হাজার হোসিয়ারী শিল্প ইউনিট এসােসিয়েশনের সদস্য। এ শিল্পে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ১ লক্ষ শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছে। বৎসরে প্রায় ১৫-১৬ শত কোটি টাকা স্থানীয়ভাবে হোসিয়ারী উৎপাদিত পণ্যের টার্নওভার অর্জিত হয় এবং অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হোসিয়ারী পণ্য দেশের সর্বস্তরের জনগনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে।