বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
অদৃশ্য করোনা ভাইরাসের কারণে মৃত্যুর মিছিলের আতঙ্কে বিশ্বব্যাপী সর্বক্ষেত্রে চলছে মন্দা ভাব। অর্থনীতি, উৎপাদন, শিল্প, ব্যবসা, বাণিজ্য একটি অপরটির সম্পূরক। ফলে করোনা যত দিন চলবে এর চেয়ে বেশী দিন চলবে মন্দাভাব। এমনো দিন আসতে পারে যেখানে সরকার বা মানুষের হাতে টাকা থাকবে, কিন্তু খাদ্য পাওয়া যাবে না। ইতোপূর্বে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় কোন কোন রাষ্ট্র কাগজী নোট ছাপিয়ে ফল পেয়েছে উল্টো, কারণ এতে মুদ্রাস্ফিতি দেখা দেয়, তখন বাজার দর নাগালের বাহিরে চলে যায়। মানুষের প্রাথমিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য যার জন্যই জীবিকা। সব কিছুরই বিকল্প হতে পারে, কিন্তু খাদ্যের কোন বিকল্প নাই। কোন কারণে যদি বাঙ্গালীর খাদ্যের প্রধান উপাদান “ধান” চাষের ঘাটতি ঘটে তখন বিদেশ থেকেও চাউল আমদানী করা দূরুহ হয়ে পড়বে। কারণ পৃথিবী ব্যাপীই চলছে এখন মন্দা ভাব, যা কাটিয়ে উঠার জন্য বড় বড় রাষ্ট্রগুলিই হিমষিম খাচ্ছে।
সরকারের দায়িত্ব নাগরিকের খাদ্যের চাহিদা মিটানো। কিন্তু প্রয়োজন মত খাদ্যেই যদি মজুদ না থাকে তবে সরকার খাদ্যের চাহিদা মিটাবে কি ভাবে? তখন সরকার ব্যর্থ হবে বটে, কিন্তু পিতার সামনে তো সন্তানেরা না খেয়ে মরার করুন দৃশ্য দেখতে হবে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর বিশ্লেষণ মতে করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৭ কোটি মানুষ মারাত্বক খাদ্যাভারের মূখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা করেছে। ফলে প্রকৃতির আচরণ পরিবর্তনের পাশাপাশি নাগরিকদের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। পূর্বে ও বর্তমান খাদ্যাভাস হচ্ছে মানুষ ব্যাঞ্জন অর্থাৎ তরকারী দিয়ে ভাত খাওয়া, এখন ভাত দিয়ে তরকারী খেতে হবে, অর্থাৎ ভাতের পরিমানের চেয়ে তরকারীর পরিমান বেশী হতে হবে। চিকিৎসকদের মতে ভাত জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ কাবোহাইড একটি “চিনি” জাতীয় খাদ্য উপাদান, যা বেশী খেলে ডাইবেটিস ও স্থুলতা রোগের সৃষ্টি হয়। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে বাঙ্গালীদের মত এতো পরিমাণ ভাত কেহ খায় না। “ক্ষনা” নামক একজন পন্ডিত ব্যক্তি কিছু বানী দিয়ে গেছেন যা “ক্ষনার বচন” নামে পরিচিত। “ক্ষনার” একটি “বচন” বা বক্তব্য আজ পর্যন্ত মিথ্যা প্রমানিত হয় নাই। ক্ষনার বচনের মধ্যে একটি বচন হলো “উনা ভাতে দূনা বল, অধিক ভাতে রসাতল।” অর্থাৎ যে কম ভাত খায় তার শরীর দ্বিগুন সবল থাকে এবং যে বেশী ভাত খায় সে যায় রসাতলে। অন্যদিকে সরকারী ত্রাণ বা খাদ্য সহায়তা সঠিক ভাবে বিলি বন্টন না হওয়ায় অভিযোগ ছাড়াও “মূখ দেখে সাহিদারী” অর্থাৎ ত্রাণ বা সরকারী অনুদান নিজেদের লোকদের নিকট বিতরণ, অধিকন্তু রয়েছে সরকারী লোক দ্বারা ত্রাণ চুরির ঘটনার পাশাপাশি কালোবাজারী ও মুনাফা খোরদের ভয়াল থাবা। ফটো শেসনের ত্রাণ নেয়াও অনেক কষ্টকর। পূর্ব থেকে স্লিপ সংগ্রহ করে প্রধান অতিথি আসার অপেক্ষায় রৌদ্রে লাইনে দাড়িয়ে থাকা। অন্যদিকে অনেক পরিবার না খেয়ে থাকে, অথচ লোক লজ্জার ভয়ে ত্রাণের জন্য লাইনে দাড়াতে বা কারো কাছে কোন কিছু চাইতে পারে না। এ মর্মে পবিত্র কোরানশরীফে স্পষ্ট নির্দেশিকা দিয়ে মহান আল্লাহপাক বলেছেন যে, “(দান) অভাবগ্রস্থ লোকদের প্রাপ্য, যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যপৃত যে, জীবিকা সন্ধানে ভূপৃষ্ঠে ঘোরাফেরা করতে পারে না। তারা কিছু চায়না বলে, অবিবেচক লোকরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষন দেখে চিনতে পারবে, তারা লোকদের কাছে নাছোড়বান্দা হয়ে যাচঞ্চা করে না” (সূত্র: সূরা বাক্কারাহ- আয়াত ২৭৩)। বর্তমানে সবচেয়ে খাদ্যভাবে রয়েছে ঐ সকল পরিবার যারা মানুষের নিকট কিছু চাইতে বা যাচঞ্চা করে না বা চক্ষু লজ্জার কারণে কারো নিকট কোন সাহায্য চাইতে পারে না। কোরানিক নির্দেশিকা মোতাবেক দান বা ত্রাণে তাদের অগ্রধিকার রয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, এই শ্রেণীর পরিবারগুলিই এখন ত্রাণ থেকে বঞ্চিত।
যখন মানবজাতি অবিচার, অত্যাচার, ব্যভিচার, অন্যের অধিকার হরন, অশ্লীলতার সীমা লংঘন করছে তখনই আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে করোনার মত গজব নাজিল হয়ে থাকে, একথা জোরে সোরেই আল্লাহপাক আল-কোরানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতিকে বর্ণিত কারণে ধ্বংস করেছেন বলে নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন এবং তিনি একথাও ঘোষণা দিয়েছেন যে, এ ধ্বংসলীলা শুরু ও শেষ হওয়ার দীনক্ষন তিনিই নির্ধারণ করেন। এখানে বিবেচ্য বিষয় ২টি। প্রথমটি হলো – যে কারণে ইতোপূর্বে বিভিন্ন জাতিকে আল্লাহ ধ্বংস করেছেন, সে কারণগুলি বর্তমান বিশ্বে চরমভাবে এখনো বিদ্যমান। দ্বিতীয়ত – যেহেতু ধ্বংস লীলা শুরু ও শেষ হওয়ার দিন ক্ষন তিনি (আল্লাহ) নির্ধারণ করবেন সেহেতু মরন ব্যাধি করোনা থেকে বিশ্ব কখন মুক্তি পাবে তা এখনো আচ করা যাচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা আগামী জানুয়ারি’ ২০২১ সালের কথা বলাবলি করছেন। কিন্তু নির্ভর করার মত আশ্বাস কেহ প্রদান করছেন না। তবে করোনা মৃত্যু যদি এমনিভাবে হতে থাকে ২০২১ সাল আসতে আসতে বিশ্ব সভ্যতা উজাড় হয়ে যেতে পারে। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, পরম করুনাময় আল্লাহ অবশ্যই আমাদের মাফ করে দিবেন। কারণ মাফ করাই আল্লাহপাকের প্রধান বৈশিষ্ট। তবে কায়োমনো বাক্যে পরিষ্কার ভাষায় অপরাধ স্বীকার করে পুনরায় অনুরূপ অপরাধ না করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েই আল্লাহপাকের দরবারে মাফ চাইতে হবে।
সার্বিক বিষয় মাথায় রেখেই আমাদের জীবন যুদ্ধে বেচে থাকার পরিকল্পনা নিয়েই এগুতে হবে। ত্রাণ নিয়ে জটিলতা আমাদের দেশের নতুন কিছু নহে এবং অন্যদিকে একটি পরিবারের খাদ্য পুষ্টি ত্রাণ থেকে কতটুকু যোগান পাওয়া যেতে পারে? অফিস আদালত সবই বন্ধ, দেশবাসী এখন লক ডাউনে আছে চলছে সামাজিক দূরত্ব। করোনার কারণে প্রাপ্ত “অবসর” সময়টি দু ভাবেই কাটানো যায় – (১) আড্ডা মেরে, টিভিতে সিনেমা নাটক প্রভৃতির মাধ্যমে অবসর সময় কাটানো যায় অথবা (২) দেশ ও জাতির এবং নিজেদের পরিবারের জন্য এ করোনা যুদ্ধে কি ভাবে টিকে থাকা যায় তা নিজেদের গন্ডীর মধ্যে থেকেই আমরা পরিবারকে সহায়তা করার জন্য কে কতটুকু “অবদান” রাখতে পারি তার উপায় উদ্ভাবন বা চেষ্টা ফিকিরের মাধ্যমে “অবসর” সময়ের স্বদব্যবহার করা। “যারা অসার ক্রিয়া কলাপ হতে বিরত থাকে” আল্লাহ তাদের “সফলকাম” হিসাবে সূরাহ আল মু’মিনুন এর ৩য় আয়াতে উল্লেখ করেছেন। অথচ আমাদের অনেকেরই সময় কাটে পরনিন্দয় পরচর্চা ও চোগলামী করে যা সৃষ্টিকর্তা মোটেই পছন্দ করেন না। “অবসর” সময়কে আমরা অভিশাপ না আর্শীবাদ হিসাবে গ্রহণ করা ব্যক্তি বিশেষে তার নিজস্ব ব্যাপার। তারপরও প্রতিটি ব্যক্তির নিকট পরিবার, জাতি ও রাষ্ট্রের একটি চাহিদা থাকে, কারণ পরিবার ও রাষ্ট্রই ব্যক্তিটিকে প্রতিপালন করে। স্বরণ রাখা দরকার যে, ইমাম বুখারীর বর্ণনা মতে রসুল (সা:) বলেছেন যে, “সুস্থতা ও অবসরতা” মানবজাতির জন্য অন্যতম নিয়ামত।
বাংলাদেশে পলিমাটির দেশ, আবহাওয়া ও মটির উর্বর শক্তি উৎপাদান সহায়ক, কিন্তু দেশবাসীর চরিত্র বৈচিত্রময়। দাদা যে চাড়া রোপন করে গিয়েছে সে গাছটি নাতি কেটে বিক্রি করে দিয়েছে বা কাঠ বা লাকড়ি হিসাবে ব্যবহার করে নিজে উপকৃত হয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে কর্তনকৃত জায়গায় অনুরূপ একটি গাছের চাড়া রোপন করার উপলব্দি নাতির মাথায় আসে না, ক্ষেত্র বিশেষে তা ভিন্ন হতে পারে। হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন যে, “আগামী কাল্য কেয়ামত হবে জানলেও যদি সূযোগ পাও তবে একটি গাছের চাড়া রোপন কর।” অথচ রাস্তা দিয়ে চলার পথে একটি গাছের চাড়া দেখলে অনেক মানুষ আছে যারা তা মারিয়ে চলে যায়, ঘুনাক্ষরেও তার বিবেক বলে না যে, এ গাছের চাড়াটি একদিন ছায়া, ফল, জ্বালানী, অক্সিজেন ও কাঠ উপহার দিতে সক্ষম হবে। বিষয়গুলি সম্পূর্ণ মানবিক চিন্তা চেতনার উপর নির্ভরশীল, চিন্তাশীল ব্যক্তিরা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অবশ্য অবশ্যই চিন্তা করছেন। তবে চিন্তাশীলের চেয়ে বাক-পটুদের অবস্থান রাষ্ট্রীয়ভাবে সুদৃঢ় বিধায় চিন্তাশীলদের পরামর্শ কোথাও ধোপে টিকে না। অন্যদিকে চিন্তাশীলদের একটি অংশ সরকারের তাবেদারী করে এখন ভোগ বিলাশে ব্যস্ত। যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীন শিক্ষক অধ্যাপন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছিলেন যে, “আমাদের দেশের বুদ্দিজীবিরা এখন চামচাগীরিতে ব্যস্ত।”
চিকিৎসকরা মন্তব্য করছেন যে, ফ্যাট সৃষ্টি করে এমন খাদ্যাভাসের চেয়ে সবজি খাদ্যাভাস স্বাস্থ্যের জন্য অনেক নিরাপদ। গ্রাম অঞ্চলে একটি বাড়ীর আঙ্গিনার চারপার্শ্বে যে পতিত জায়গা থাকে সে মাটিতে অনায়াসেই পরিমিত সবজি চাষ করা যেতে পারে। কিছু সবজি গাছ আছে যা ঘরের চালের নীচে বীজ বপন করলে গাছটি উঠানের জায়গা দখল না করে ঘরের চালে উঠিয়ে দেয়া যেতে পারে। অনেক পরিবারে দেশ প্রেমিক ও সচেতন শিক্ষিত মহিলারা আছেন যারা শহরের বাড়ীর ছাদ ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করে একদিকে পরিবারের সুস্বাস্থ্যের যোগান দিচ্ছেন, অন্যদিকে পরিবারটির অর্থনৈতিক সাশ্রয় হচ্ছে, এ পদক্ষেপে সংশ্লিষ্ট পরিবারটি উপকৃত হলেও লাভবান হচ্ছে জাতি। কারণ প্রতিটি মানুষই জাতির একটি অংশ। একজন মানুষ, একটি পরিবার যখন লাভবান হয়, তখন এটা জাতিরই লাভ, কারণ এতে কিছুটা হলেও জাতির বোঝা লাঘব হয়।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে গণমানুষের অনেক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু যে রাজনৈতিক দলগুলি একবার ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করছে সে দলগুলি সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগীদের ক্ষপ্পরে পড়ে নিজস্ব স্বকিয়তা হারিয়ে গণদাবী বাস্তবায়নের প্রশ্নে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। দলগুলির সাংগঠনিক কার্যক্রম আদর্শ ভিত্তিক না হয়ে তদবীর ভিত্তিক চলছে, মোশাহেবী এবং অর্থের প্রভাবে দলীয় নেতৃবৃন্দ প্রভাবিন্বিত বিধায় জনস্বার্থে রচিত দলীয় ম্যনিফেষ্টো নিয়ে দলগুলি জনগণের গোরদরজায় পৌছার পরিবর্তে ক্ষমতাসীন দল প্রতিপক্ষ দলের প্রতি প্রতিহিংসামূলক আচরণ করে, ফলশ্রুতিতে জনগণের নিকট রাজনৈতিক দলের ম্যনিফেষ্টো নামক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন থেকে জনগণ হচ্ছে বঞ্চিত। [উল্লেখ্য, মরনঘাতি করোনা ভাইরাসের সময়ও জনস্বার্থ বিবেচনা করে রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হতে পারে নাই, কারণ ক্ষমতাসীনদের আত্মগরিমা (ঙাবৎ ঈড়হভরফবহপব), নতুবা প্রতিপক্ষ কর্তৃক গদি খেয়ে ফেলার ভয় (!)] রাজনৈতিক দলগুলির ম্যানিফেষ্টো কার্যকর না হওয়ার অন্যতম কারণ দল থেকে ম্যানিফেষ্টোতে প্রদত্ব কর্মসূচী বাস্তবায়ন হওয়ার জন্য দল থেকে কোন প্রকার চাপ বা মনিটরিং করা হয় না। ক্ষমতায় গেলে দলগুলি আমলা নির্ভর হয়ে পড়ে এবং প্রশাসনের সহায়তায় শুরু করে প্রতিপক্ষের প্রতি অমানসিক ও অনৈতিক নির্যাতন। ফলশ্রুতিতে প্রশাসনিক আমলাদের হয় প্রমোশন, তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মীরা পরিনত হয় কামলায় এবং ক্ষমতার সন্নিকটে যারা থাকে তারা এবং তাদের পালিত সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগীরা হয় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, পাকিস্তানের পূজীপতি ২২ পরিবারের স্থলে বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে ২২ হাজার পূজীপতি পরিবার, ফলশ্রুতিতে গরীব দিন দিন নিঃস্ব হচ্ছে, ধনীক শ্রেণী হয়ে যাচ্ছে আরো ধনী। যে ব্যক্তি ৫-১০ বিঘার জমির মালিক ছিল, সংসারের ঘানি টানতে টানতে জমি বিক্রি করে সে পরিবার হয়ে পড়েছে ভূমিহীন নিঃস্ব, অন্যদিকে যে পরিবার ছিল ২০০ বিঘা সম্পত্তির মালিক সে হয়েছে ৫০০-১০০০ বিঘার সম্পত্তির মালিক। ব্যাংকগুলি পুজিপতি পরিবারের সেবা দাসে পরিনত হয়েছে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষই ব্যাংক লুটের সূযোগ করে দিচ্ছে, ব্যাংক পাহাড়া দেয়ার জন্য সরকারী ঘরনার লোকদের পরিচালক নিযুক্ত করার কারণে স্বনামে বেনামে ব্যাংক লুট করার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় অর্থনীতির সংঙ্গানুসারেই মধ্যবিত্তরা দিন দিনে নিম্ন বিত্ত বা নি:শ্ব এবং উচ্চ অবস্থাশালীরা ধনী শ্রেণীর অর্ন্তভুক্ত হচ্ছে এবং এরই সরল রেখা টেনে গড় পড়তা হিসাব করে সরকার গাল ফুলিয়ে বলছে যে, দেশে মাথা পিছু মানুষের গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বড় মিথ্যাকে যারা যুক্তি দিয়ে খন্ডন করবে সে সকল বুদ্দিজীবিরাও এখন সরকারের তাবেদারী করে টুপাইস ইনকাম করছে, তারাও এখন পাজারো গাড়ীতে চড়ে, কারো কারো ব্যাংক লোন রয়েছে, ইতোমধ্যে অনেকে খেলাপী হয়ে পড়েছেন। মাথাপিছু গড় আয় যদি এতোই বেড়ে থাকে তবে সাগরের মধ্যে বাঙ্গালীদের শলীল সমাধি হচ্ছে কেন? কেনই বা ২৬ জন বাঙ্গালী লিবিয়াতে নৃশংস ভাবে হত্যা হলো? সরকারের বাক পটুরা এর ব্যাখ্যা দিবেন কি? অন্যদিকে দেশের আলেম সমাজ যাকাত, ফেৎরা ব্যতীত হযরত মুহাম্মদ (সা:) রেখে যাওয়া ইসলামিক অর্থনৈতিক দর্শন সম্পর্কে মাথা ঘামায় না বলেই লুটেরাদের আজ পোয়াবার। মসজীদ মাদ্রাসায় মোটা অংকের অর্থ দান করলেই আমাদের দেশের আলেম সমাজের একটি অংশ দাতাকে বেহেস্তে একটি স্বর্ণের বাড়ী বানিয়ে দেয়। বৈধ উপার্জন ছাড়া এবাদত কবুল হয় না, একথা তখন বক্তা বেমালুম ভুলে যান। দাতার অর্থ উপার্জনের উৎস বৈধ কি অবৈধ খোজ নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না বা বৈধ উপার্জনের জন্য উৎসাহ বা কঠোর নির্দেশনা প্রদান করে না। এ বিষয়টি ইসলামী অর্থনীতি দর্শনের পরিপন্থী (উল্লেখ্য, ইসলামিক অর্থনীতির দর্শন সম্পর্কে পরবর্তী লেখাগুলিতে আলোচনার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ)।
সম্প্রতি ৭ই মে ২০২০ তারিখে এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং সংরক্ষিত আসনের এম.পি পারভীন হকের অভিবাবকদের মালিকানাধীন পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ সংক্রান্ত ঘটে যাওয়া ঘটনা, মামলার এজাহার, বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি পর্যালোচনা করলেই ব্যাংক লুট করার জন্য সরকারের সুকৌশল প্রদ্ধতি পাঠকের নিকট পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাছাড়া ফার্মস ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক লোপাট, বিভিন্ন বড় বড় ব্যাংকের লুটের কাহিনীতো আছে। এক ব্যাংকের পাহাড়াদার, অন্য ব্যাংকের বর্গাদার। ক্ষমতাসীনদের সেবা দাসী হিসাবে ব্যাংকিং বিষয়টি এমনি হয়ে দাড়িয়েছে যে, “ওলট পালট করে দে মা লুটে পুটে খাই।”
জনসংখ্যার তুলনায় খাদ্য চাহিদা মিটানোর বিষয়টি মাথায়ই রেখেই বিগত সরকারগুলি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী ম্যানিফেষ্টোতে উল্লেখ করেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, নৈতিকতা, প্রশিক্ষণ ও সরকারের বাস্তবায়ন মূখী রাজনৈতিক সাংগঠনিক পদক্ষেপের অভাবে কাংখিত লক্ষ্যে পৌছা যায় নাই, তবে নাগরিকদের একটি অংশ বৃক্ষ রোপনে উৎসাহী হয়েছে। দ্বিতীয় বিপ্লব বা সবুজ বিপ্লব সম্পর্কে যার একটুও চিন্তা চেতনা ছিল না এমন ব্যক্তি তৎকালিন সরকারের এম.পি/মন্ত্রী হয়েছেন। স্বনির্ভর বাংলাদেশ তথা ১৯ দফা কর্মসূচী বা পরবর্তী সরকারের ১৮ দফা কর্মসূচীতে কি লেখা আছে যে বলতে পারবে না এমন ব্যক্তিও সংশ্লিষ্ট সরকারের এম.পি/মন্ত্রী হয়েছে। ফলে দলীয় ম্যানুফেষ্টু মোতাবেক রাজনৈতিক দলগুলির সাংগঠনিক ভূমিকা যেভাবে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তা বাস্তবায়ন না হলেও সরকারী বাজেট পূরোটাই খরচ হয়েছে।
বঙ্গুবন্ধু শেখ মুজীব নিজে মাটি কেটে তার দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী উদ্ভোধন করে ছিলেন যা ভেস্তে গেছে মর্মান্তিক ১৫ই আগস্টের পরে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ ইং সনের ১ লা ডিসেম্বর যশোরের উলশী যদুনাথপুরের বেতনা নদী স্বেচ্ছাশ্রমে খননের মাধ্যমে স্বনির্ভর আন্দোলনের কর্মসূচী উদ্ভোধন করে জনগণকে উৎবুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, স্বেচ্ছা শ্রমে ৯০০ মাইল খাল খনন করেছেন। জিয়াউর রহমান দেশের যুব শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য উপ-সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে শহীদ জিয়া ১৯৭৭ সালের ১৮/১৯ ফেব্রুয়ারি দু’দিন ব্যাপী শেরে বাংলা নগরে জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গনে একটি যুব সমাবেশের আয়োজন করেন। একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে সমাজ কল্যাণ বিভাগের মনোনীত প্রতিনিধি হিসাবে উক্ত জাতীয় সম্মেলনে একজন তালিকাভুক্ত ডেলিগেট হিসাবে অংশ গ্রহণ করেছি, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নথিতে নিশ্চয় এর রেকর্ড পাওয়া যাবে। পরের বৎসর তিনি যুব মন্ত্রণালয় গঠন করেন। ১৯৮০ সালের ৩০মে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রাম সরকার চালু করার ঠিক এক বৎসর পর একই দিনে শাহাদাত বরণ করেন। জেলায় জেলায় যে যুব কমপ্লেক্স চালু করেন তাহাও পরবর্তীতে উদ্যোগ ও উদ্দোমের অভাবে ফলপ্রসু হয় নাই। উভয় রাষ্ট্রপতিই নিহত হয়েছেন দেশ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্মম বুলেটে। উভয় রাষ্ট্রপতির দলই পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু জনগণ আর সেভাবে উৎবুদ্ধ করা হয় নাই। কারণ একদল আর এক দলকে ঠেকানোর ব্যস্ততা থেকেই এ বাস্তবতা।
এখন জনগণকে অবশ্যই রাজনীতি সচেতনা হয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কিন্তু শুধুমাত্র সরকার বা বিরোধী দলের উপর নির্ভরশীল হয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না। জনগণের একটি অংশ রয়েছে যারা ভাবাবেগে বা অলস জীবন যাপন করে না। নারায়ণগঞ্জ জেলায় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের তীর্তস্থান লাঙ্গলবন্দ এলাকায় দক্ষিনে সরকারী রাস্তার দু পার্শ্বে পতিত জায়গায় ফুলগাছ লাগিয়ে একদল ফুল চাষী জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করতে দেখেছি, অনুরূপ একটি এলাকায় দেখেছি যে, সরকারী রাস্তার উভয় পার্শ্বে সীম গাছের ঝাকা, রাস্তার উভয় পার্শ্বে সরকারী পচা ডোবায় কচুরীপানার স্তুব করে সামান্য কিছু মাটি ফেলে দেখেছি লাউ, কুমড়া গাছ চাষ করতে। বাংলাদেশের মাটি সোনারমত খাটি। দেশে অনেক সরকারী পতিত জমি রয়েছে যা বিনা মূল্যে বা বিনা লীজ মানিতে সবজি উৎপাদন করতে জনগণকে উৎসাহীত করা গেলে খাদ্য ঘাটতি পূরনে সহায়ক হবে। তবে উৎপাদিত কোন ফসলের কোন ভাগ বা অংশ সরকার দাবী না করে তবে প্রান্তিক চাষীরা এ মর্মে বেশী উৎসাহিত হবে। প্রান্তিক চাষীদের পতিত জমি চাহিদা মত বন্টন করার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিতে হবে যাতে করে সরকারী অফিসে যাতায়াতে হয়রানী না হতে হয়। অনুরূপ স্থল পথ, রেল পথের পতিত জমি ও ডোবা, এমনকি নদীর দুই পার্শ্বে পতিত জমি বাৎসরিক বন্টন নামা ভিত্তিতে প্রান্তীক চাষীদের বিনা দাবীতে বর্গা দেয়া হউক, নিম্নবর্ণিত দুটি শর্তে (১) বন্টনকৃত স্থানে শুধুমাত্র সবজি ও মাছ চাষ চলবে ও (২) বন্টনকৃত জায়গার অবস্থান পরিবর্তন বা স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। অন্যদিকে বন্টন নিয়ে চাষাবাদ না করে জমি ফেলে রাখলে একটি টোকেন বা নামে মাত্র জরিমানার বিধান রাখা যেতে পারে। আসুন আমরা সকলেই পরিবার, দেশ ও জাতির জন্য আমাদের মূল্যবান সময় ও চিন্তা চেতনা উৎসর্গ করার ভূমিকাসহ ত্রাণের সাথে ফলমূল, সবজি প্রভৃতির বীজ ত্রাণ গ্রহিতাদের নিকট পৌছে দিয়ে উৎপাদনে তাদের উৎসাহিত করি। নিজেদের বাচার কথা চিন্তা করে প্রতিটি পরিবার থেকে নিজ উদ্দ্যোগেই এ কর্মসূচী গ্রহণ করা উচিৎ, নিজেদের স্বার্থে। তবেই ১৮ কোটি হাত ৩৬ কোটি হাতের শক্তির যোগান দিবে, ফলে সকলেই হবো উৎপাদনের অংশীদার, ইনশাআল্লাহ।
লেখক: তৈমূর আলম খন্দকার
রাজনীতিক, কলামিষ্ট ও আইনজীবী