সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
এমনিতেই নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কর্মকান্ড বেতাল। তার উপর এমন করোনা পরিস্থিতিতে ঘি ঢেলে দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। এই করোনা পরিস্থিতিতেও নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কর্মকান্ড টালমাতাল। সর্বশেষ ৪ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাজ দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার খোরাক জুগিয়েছেন সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। আবার জেলা বিএনপির কমিটি রয়েছে বিলুপ্ত আর মহানগর বিএনপির কার্যক্রমে আদালতের রয়েছে স্থগিতাদেশ। মহানগরের সভাপতি আবুল কালামের ছায়াও নাই করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের পাশে, সেক্রেটারি এটিএম কামাল এখন আমেরিকা থেকে ভিন্ন স্টাইলে বক্তব্য দেন বিএনপির কর্মকান্ডে। একইভাবে বিএনপির অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর দশা নাজেহাল।
সূত্রমতে, গত ২৬মার্চ থেকে করোনা সংক্রমন ঠেকাতে সরকারি বেসরকারি সহ সকল আয়ের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের ঘন্টা খানিক পর জানতে পারলেন জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি এবং কোন কার্যক্রমের বিষয়ে কেন্দ্রে যোগাযোগের নির্দেশনা দেয়া হয়। এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এলাকা নিয়ে গঠিত হওয়ায় গঠনতন্ত্রের ৪ অনুচ্ছেদের নিয়ম ভঙ্গ করায় আদালতে বিএনপি নেতা গোলজার খানের দায়েরকৃত মামলায় মহানগগর বিএনপির কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। যদিও সেই আদেশ মানছেনা বিবাদী পক্ষ।
এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমনের আহ্বানে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করতে আসেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ অনুগামী উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি হাবিবুর রহমান হাবু সহ তার নেতাকর্মীরা দাবি করেন কেন্দ্রীয় নেতা আড়াইহাজারে আসছেন সেটা তারা জানেন না। এর জন্য দায়ী করেন তারা সুমনকে। এমনটা দায়ী করে তারা সুমনকে আড়াইহাজার বিএনপি থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। সম্প্রতি আড়াইহাজারে দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা মারধরের শিকার হয়েছেন নজরুল ইসলাম আজাদ- এমনটা দাবি করেছেন স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবু। আজাদের অভিযোগ তাকে স্থানীয় সরকারি দলের নেতাকর্মীরা হামলা করেছেন। কিন্তু এমপি বাবু বলেছেন- আজাদের পাওনাদাররা তার প্রতি চরম ক্ষুব্দ ছিল। যে কারনে তারা তাকে পেয়ে হামলা করেছেন। সেখানে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা হামলা করেনি। তবে আজাদ রহস্যজনক কারনে আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেননি।
অন্যদিকে নেতাকর্মীরা অভিযোগ তুলছেন- দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে চলেছেন খোদ কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা রিজভী। দলের শৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে যে সাংগঠনিক এলাকায় শীর্ষ স্থানীয় নেতা কর্মসূচি পালনে যাবেন অবশ্যই স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে যোগাযোগ করেই যাবেন। কিন্তু তিনি পরবর্তীতে আরও দুই দফায় রূপগঞ্জে মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন ও নাসির উদ্দীন নামের দুই বিএনপি নেতার আহ্বানে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করতে আসেন। যেখানে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন কর্মসূচিতে হুট করে কেন্দ্রীয় নেতা এসে পড়ছেন আর বিবাদ সৃষ্টি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে।
সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির কার্যক্রমেও একই দশা। এখানে তুমুল বলয় ভিত্তিক রাজনীতি। করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি আজহারুল ইসলাম মান্নানের অনুগামী নেতাকর্মীরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার মাস্ক ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে আসছিলেন। তবে স্বশরীরে মান্নান সর্বশেষ ঈদের আগে মাঠে নামেন। তার অনুগামী নেতাকর্মীরা সব সময় দাবি করেছেন মান্নানের পক্ষে ও তার নির্দেশে এসব কার্যক্রম করা হচ্ছে। কখনও দাবি করা হয়নি উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে কার্যক্রম করা হচ্ছে। কারন উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফরের সঙ্গে চরম বিরোধ। সর্বশেষ ২১ মে আবু জাফরও জেলা বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে নিয়ে সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোশারফ হোসেনের উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন সোনারগাঁও পৌর এলাকায়। তবে মান্নান সেখানে উপস্থিত না থাকলেও যেখানে মান্নান অনুগামী বেশকজন নেতার উপস্থিতির কথা শোনা যায়। এ নিয়ে চলে সমালোচনা। এরি মাঝে ৪ জুন ফেসবুকে খন্দকার আবু জাফর পোস্ট দিয়ে জানান- সোনারগাঁয়ে বিএনপির কোন নেতাকর্মীরা মারা গেলে যেনো তাকে জানানো হয়। এমন বিষয়টি নিয়ে মান্নান অনুগামীরা তুমুল সমালোচনা করছেন ফেসবুকে। তবে জাফর পরক্ষণেই তার বক্তব্যকে ভিন্নভাবে নেয়া হয়েছে দাবি করে আরেকটি পোস্ট দেন।
দূর্যোগ ও মহামারিতে নিজেদের বিলিয়ে দেয়ার লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বেচ্ছাসেবক। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য লক্ষ্য বাস্তবায়নে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল। জেলা কমিটির সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম ও সেক্রেটারি মাহবুব রহমানের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সোনারগাঁয়ে একটি কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেলেও তারপর আর তাদের হদিস পাওয়া যায়নি অসহায় মানুষের পাশে। একই অবস্থা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশা ও সেক্রেটারি সাখাওয়াত ইসলাম রানার। আবুল কাউসার আশা তার নাসিকের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনী এলাকায় শুধুমাত্র খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে সেটাও প্রচার করেছেন তার পিতা সাবেক এমপি আবুল কালামের পক্ষে বিতরণ! অসহায় মানুষের সাখাওয়াত ইসলাম রানার কোন ভুমিকাই দেখা যায়নি।
এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ ও সেক্রেটারি মমিনুর রহমান বাবু। ঈদের পূর্বে পরপর দুটি ওয়ার্ডে একই দিন দুই স্থানে সাহেদ অনুগামীদের একটি এবং আরেকটি অনুষ্ঠানে মমিনুর রহমান বাবুকে উপস্থিত দেখা যায়। মহানগর ছাত্রদলের শীর্ষ বেশকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেছেন সভাপতি ও সেক্রেটারির মধ্যে ভেতরগত বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। তবে সেটা কি নিয়ে তা বলতে পারেনি কেউ। মাস্ক, স্যানিটাইজার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণও দেখা গেছে পৃথক পৃথকভাবে সভাপতি ও সেক্রেটারি কার্যক্রম। একইভাবে জেলা ছাত্রদলের পূর্ব বিরোধ আরো জোড়ালো হয়েছে এই করোনায়। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনির বাড়ির সামনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হলেও সেখানে সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীব সহ ১২ জনের কমিটির ৮ জনই উপস্থিত ছিলেন না।
এমন করোনা পরিস্থিতিতে জনগণের মাঝে একবারও দেখা পাওয়া যায়নি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলমকে। অধ্যাপক মামুন মাহমুদ সিদ্ধিরগঞ্জে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে জনগণের মাঝে দেখা গেলেও জেলা বিএনপির শীর্ষ অন্যান্য অনেক নেতাদের ভুমিকাই ছিল না।
তবে করোনা পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের অসহায় মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে দাড়িয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। যেখানে তৈমূর আলম খন্দকার রূপগঞ্জকে প্রাধান্য দিয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন এবং সাখাওয়াত হোসেন খান মহানগরীর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও সদর থানার প্রতিটি এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। প্রাথমিকভাবে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীবকেও অসহায় মানুষের পাশে দেখা যায়। এদিকে করোনার উপসর্গ ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিদের লাশ দাফন করায় সবার দৃষ্টি এখন মহানগর যুবদলের সভাপতি কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের দিকে।