সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার বিএনপির রাজনীতি বলয় ভিত্তিক দীর্ঘদিন যাবত চলছে। একদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর অন্যদিকে সেক্রেটারি আজহারুল ইসলাম মান্নান। এবার করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খন্দকার আবু জাফরের একটি পোস্ট নিয়ে তুমুল সমালোচনা করছেন মান্নান অনুগামী নেতাকর্মীরা। এর আগেও আরও দুইবার মান্নান অনুগামীদের সমালোচনায় পড়েছিলেন জাফর।
জানাগেছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পান খন্দকার আবু জাফর ও আজহারুল ইসলাম মান্নান। তাদের দুজনকেই মনোনয়ন দাখিল করতে বলা হলেও মনোনয়ন দাখিল করেননি জাফর। এ বিষয়ে জাফর মিডিয়াতে বলেছিলেন, ‘যে ব্যক্তি নমিনেশন শব্দটি সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারেনা সেই ব্যক্তির ড্যামী প্রার্থী হয়ে নমিনেশন দাখিল করার কোন মানেই হয়না। তাই দাখিল করিনি।’ এ ছাড়াও সম্প্রতি মিডিয়াতে জাফর বলেছিলেন, মান্নান যদি তার নামটি লিখতে পারে তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দিব।’ এই দুটি বক্তব্য নিয়ে মান্নান অনুগামীদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন জাফর।
এবার গত ৪ জুন ফেসবুকে জাফর লিখেছেন, সোনারগাঁও বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের জানানো যাচ্ছে যে, আমাদের থানায় বিএনপির কোন নেতাকর্মী করোনায় মারা গেলে আমার নাম্বারে জানাবেন।’ জাফরের এই পোস্ট নিয়ে তুমুল সমালোচনা করেন নেতাকর্মীরা। তারা দাবি করেন- নেতাকর্মীদের মৃত্যুর পর তাকে জানানোর কারন কি? এ নিয়ে যে যার মত করে জাফরের প্রতি নানা প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তবে পরক্ষনেই জাফর আরেকটি পোস্টে লিখেছেন, ‘অযথা কথার বিকৃত অর্থ সঠিক নয়। তথ্য সংগ্রহের জন্যই অনুরোধ জানানো। সবাইকে এমনকি আমার শত্রুকেও করোনা থেকে আল্লাহ ভাল রাখুক।’
অন্যদিকে নেতাকর্মীদের সূত্রে, সোনারগাঁয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিমের রাজনীতি প্রায় শেষ। আওয়ামীলীগ সরকার আমলে সোনারগাঁয়ে বিএনপির রাজনীতির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান। তিনি একই সঙ্গে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি পদেও রয়েছেন। তবে দীর্ঘদিন যাবত চরম বিরোধ উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফরের সঙ্গে। বেশ বেকায়দায় ছিলেন খন্দকার আবু জাফর। যার দরুণ গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো মনোনয়ন বঞ্চিত হন জাফর। তবে এবার সোনারগাঁয়ে বিএনপির রাজনীতিতে মান্নানের নিয়ন্ত্রণে ভাটা পড়েছে। যদিও তার মানতে নারাজ মান্নানের নেতাকর্মীরা। তবে করোনা পরিস্থিতিতেই দেখা গেল জাফর বলয় পোক্ত হতে যাচ্ছে। মান্নান বলয় ছেড়ে জাফরের দিকে ঝুঁকেছেন বিএনপির বেশকজন নেতা। অনেকেই আড়ালে থেকে জাফরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন মান্নানের চারপাশে থাকা বেশকজন। তারা মনে করছেন আবারো জেলা বিএনপিতে আসতে পারে মামুন মাহমুদ। আর জাফর ও মোশারফের সঙ্গে মামুন মাহমুদের সম্পর্ক ভাল।
এবার গত ২১ মে সোনারগাঁও উপজেলার দুটি স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীরা গরীব অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। পৌর এলাকায় খন্দকার আবু জাফরের সঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি মামুন মাহামুদ ছাড়াও উপজেলা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশকজন নেতা ছিলেন। কিন্তু সনমান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে প্রয়াত বিল্লাল হোসেন ও আজহারুল ইসলাম মান্নানের পক্ষে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। যদিও মান্নান সেখানে ছিলেন না। এই করোনা পরিস্থিতিতে জাফরের সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত ছিলেন পরবর্তীতে তাদের মধ্যে দু’চারজন বাদে বাকিরা কেউই মান্নানের সঙ্গে কোন কর্মসূচিতে আসেননি। যদিও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা দুলছেন দুদিকেই। কখনও জাফরের সঙ্গে কখনও মান্নানের সঙ্গে।
স্থানীয়দের সূত্রে আরও জানাগেল, সোনারগাঁয়ে বলয় ভিত্তিক রাজনীতিতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হলেও খন্দকার আবু জাফর সুবিধা করতে পারছিলেন না। সোনারগাঁয়ের রাজনীতি থেকে মান্নানকে মাইনাস করে যখন উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন প্রায় চূড়ান্তের দিকে তখন জেলা বিএনপির কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। জেলা বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে প্রায় ম্যানেজ করে নিয়েছিলেন জাফর ও মোশারফ হোসেন। তাদের সঙ্গে আরও রয়েছেন বজলুর রহমান, রফিকুল ইসলাম বিডিআর ও মোমেনদের মত লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়ার মত নেতা। জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত হলেও হাল ছাড়েনি তারা। এবার করোনা পরিস্থিতিতেও তারা একজোট হয়েছেন মান্নানের বিরোধী জোট হিসেবে। যেসব নেতারা মান্নানের বিশ^স্থ হিসেবে পরিচিত তাদেরকেও এবার জাফর বলয়ের অনুষ্ঠানে দেখা গেল।
গত ২১ মে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের উদ্যোগে অসহায় মানুষের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেন অধ্যাপক মামুন মাহামুদ ও খন্দকার আবু জাফর। এতে সভাপতিত্ব করেন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক শাহজাহান মিয়া। যদিও পৌর বিএনপির কমিটি গঠনের পর থেকেই কমিটির নেতারা ভোল পাল্টে মান্নানের দিকে পিঠ দিয়েছেন। বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে যখন মান্নানের ঘনিষ্ঠজন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম টিটুকেও জাফরের সঙ্গে কর্মসূচিতে দেখা গেল। মান্নানের বিশ^স্থ পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির রফিক রয়েছেন দেশের বাহিরে। এমন পরিস্থিতিতে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
এ ছাড়াও মোশারফের উদ্যোগে আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে মামুন মাহামুদ ও জাফরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শফি উদ্দিন ভূঁইয়া, পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম (বিডিআর), উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সেলিম হক, বিএনপি নেতা বজলুর রহমান, মোক্তার হোসেন মিন্টু, গাজী শামসুর রহমান মন্টু, ইঞ্জিনিয়ার মোমেন খাঁন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওয়াহিদ-বিন-ইমতিয়াজ বকুল, সোনারগাঁ পৌরসভা বিএনপি নেতা মোঃ আলমগীর হোসেন, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব কাউন্সিলর মোঃ মোতালিব মিয়া, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ আলম মুকুল, সোনারগাঁ পৌরসভা বিএনপি নেতা কাউন্সিলর ফারুক আহমেদ তপন, মোঃ ছাফির উদ্দিন মজনু, লায়ন শফিকুল ইসলাম নয়ন, মোঃ আজিজুর রহমান আজিজ, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম চয়ন, সহ-সভাপতি হারুনুর রশিদ মিঠু, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাদ্দাম হোসেন, থানা মহিলা দল নেত্রী ও সাবেক মহিলা কমিশনার রুমা আক্তার, সালমা আক্তার ও শ্রমিকদল নেতা আব্দুর রাহিম।
এদের বেশির ভাগই মান্নানের সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন এবং জাফরের বিরোধীতা করেছেন। তবে এবার তারা এক জোট হয়েছেন। এখানকার অনেকের পদও মিলেছে মান্নানের ইশারায়।
তবে একই দিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান ও সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে ৭’শ গরীব অসহায় দুস্থ দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছিল।
১ মে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়ন ফতেপুর গ্রামে মরহুম বিল্লাল চেয়ারম্যানের বাড়িতে মরহুমের কন্যা বিউটি আক্তারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলে- নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান ভূইয়া মাসুম।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, সনমান্দি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবুল হোসেন, সনমান্দি ইউনিয়ন বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক সেলিম হোসেন দিপু, সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আলী, আমীর হোসেন প্রমূখ।