সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
মরণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের নেতৃত্বাধীন ‘ টিম খোরশেদ-১৩ বনাম কোভিড-১৯’ এর প্রত্যেক্ষ কার্যক্রমের তিন মাস ও করোনা সাসপেক্ট ও পজিটিভ মৃতদেহ দাফন ও সৎকার করার ২ মাস পূর্ণ হয়েছে গত ৮ এপ্রিল। গত ৩ মাসে টিম খোরশেদ নিন্ম লিখিত কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
সচেতনতা সৃষ্টিঃ
টিম খোরশেদ-১৩ মধ্য জানুয়ারি থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা ও ডেংগু সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে প্রচারণা শুরু করে। বাংলাদেশে প্রথম বারের মত গত ৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জে দুইজন করোনা পজিটিভ সনাক্ত হওয়ার দিন থেকেই টিম খোরশেদ প্রত্যেক্ষভাবে করোনা প্রতিরোধে কাজ শুরু করে। ৯মার্চ ২০ হাজার লিফলেট ও মাস্ক মহানগরীতে বিতরণ শুরু করে ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। টিম লিডার খোরশেদ জুম্মার নামাজে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বক্তব্য রাখে।
স্যানিটাইাজার ও লিকুইড সোপ তৈরী ও বিতরণঃ
সচেতনামূলক কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে ১৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনায় একজনের মৃত্যু ঘটে। ফলে সারাদেশের মত নারায়ণগঞ্জেও করোনা ভীতি ছড়িয়ে পরলে বাজারে স্যানিটাইজারের চাহিদা বাড়ায় একদিনেই সংকট সৃষ্টি হওয়ায় টিম খোরশেদ ১৯ মার্চ থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফর্মুলা অনুযায়ী স্যানিটাইজার বানানো শুরু করে। ২৮ মার্চ ৫০ এমএলের ৬০ হাজার বোতল স্যানিটাইজার ও ১০ হাজার বোতল ২৫০ এলএলের লিকুইড হ্যান্ড ওয়াস সোপ তৈরী ও বিতরণ করে। এ সময় প্রায় ৮০টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তি টিম খোরশেদের কাছ থেকে ফর্মূলা নিয়ে সারা জেলায় কমপক্ষে ৩ লক্ষ স্যানিটাইজার রৈী করে বিতরণ করে।
করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ দাফন ও সৎকারঃ
করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে মৃতদেহের দাফন ও সৎকার নিয়ে অমানবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। আত্মীয় স্বজন, বন্দু, প্রতিবেশীরা, এমনকি পরিবারের লোকজনও যখন মৃতদেহ সৎকার ও দাফনে অনীহা জানাতে শুরু করে তখন ৩০ মার্চ এই টিম নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, নাসিক মেয়র ও সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করে তারা করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ গোসল, জানাযা, দাফন ও সৎকার করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে।
৭ এপ্রিল টিম খোরশেদ নারায়ণগঞ্জে করোনা পরীক্ষার জন্য ল্যাব স্থাপনের জন্য আবেদন জানান। ৮ এপ্রিল প্রথম করোনা সাসপেক্ট আফতাবউদ্দিনের দাফনের মাধ্যমে শুরু করে ৮ জুন পর্যন্ত ৭৪ জনকে দাফন ও সৎকার করেন। এর মধ্যে ৩২ জন কোভিড গজিটিভ, ২৪ জন সাসপেক্ট ও ৮ জন স্বাভাবিক ভাবে মৃত্যুবরণকারী মৃতদেহ দাফন ও সৎকার করে।
টেলি মেডিসিন সেবাঃ
”টিম খোরশেদ টেলি মেডিসিন” সেবার একমাস পূর্ণ
করোনা ভীতি দূর করে সচেতনতা সৃষ্টি,গাইনী,দন্ত ও ডায়াবেটিকসের সাড়ে ৯ হাজার রোগী সেবা প্রদান। ১৪ মে টিম খোরশেদ ও টাইম টু গিভ এর যৌথ উদ্যোগে করোনার শুরুতে চালু হওয়া ”টিম খোরশেদ টেলি মেডিসিন” সেবার একমাস পূর্ণ হয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল ৫ জন মানবিক চিকিৎসককে নিয়ে শুরু হওয়া টিমের এখন সদস্য সংখ্যা এখন ১০ জন। গত ৫৬ দিন মানবিক চিকিৎসকবৃন্দ বিনামূল্যে প্রায় ৯৪১২ জন কে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে।
মানবিক চিকিৎসকগণ হটলাইনের কল ট্রান্সফারের মাধ্যমে প্রতিদিন ১২ ঘন্টা ফ্রী সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ২১৫ থেকে ২৫০ জন তাদের সেবা গ্রহন করে থাকে। ৮ জুন পর্যন্ত ৫৬ দিনে ৯৪১২ জনকে সেবা দিয়েছে টিম খোরশেদের মানবিক চিকিৎসকবৃন্দ। নারায়ণগঞ্জ মহানগরী ও জেলার বাইরে থেকেও অনেক ফোন আসে ও সেবা দান করা হয়। টিম খোরশেদ ও টাইম টু গিভ জানায় আপাতত জুন মাসের শেষ পর্যন্ত টিম খোরশেদ টেলিমেডিসিন সেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে প্রয়োজন হলে সময় সীমা বৃদ্ধি করা হবে। টেলি মেডিসিন সেবায় বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছা শ্রম দিচ্ছেন মানবিক চিকিৎসক ডা. ফারজানা ইয়াসমি স্নিগ্ধা, ডা.পঞ্চমী গোস্বমী, ডা.ফরহাদ জেনিথ, ডা.আরিফুল আলম, ডা.খাদিজা রহমান, ডা.তাসকিয়া আজিজ, ডা.মাহফুজ, ডা.গাজী মোহাম্মদ ফয়সাল আহমেদ প্রমুখ।
এক মাস পূর্তি উপলক্ষে নতুন যোগ দিয়েছেন রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালের কার্ডিওলজী বিভাগের প্রধান ও দেশের উদিয়মান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ খালেদ মোহাম্মদ ইকবাল ও ডেন্টাল সার্জন ডাঃ তাবাসসুম ফেরদৌসী।
হটলাইন ম্যানেজমেন্ট ও সমন্বয়ের দায়িত্বে আশরাফুজ্জামান হিরা, ডক্টরস টিম লিডার ডা.ফরহাদ জেনিথ, সহ- সমন্বয়কারী আরাফাত নয়ন খান বাবু।
টিম খোরশেদ-১৩ এর প্রধান সমন্বয়কারী ও টিম লিডার এবং টাইম টু গিভ এর এডমিন প্যানেলের সদস্য কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও টাইম টু গিভ এর মুখপাত্র আহমেদ জিদান বলেন, আমরা আমাদের মানবিক চিকিৎসকদের প্রতি নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও স্যালুট জানাই। তাদের নিরলস চেষ্ঠায় কয়েক হাজার মানুষ বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা ও বয়স্ক মানুষ –ডায়েবেটিকস সহ অন্যান্য রোগে সেবা পেয়েছে। করোনা ভীতি দূর করে সচেতনতা সৃষ্টি করতে টিম খোরশেদ টেলিমেডিসিন টিমের ভ’মিকা প্রশংসীয়।
বিনামূল্যে সবজী বিতরণঃ
বিভিন্ন জেলা থেকে কম মূল্যে সবজী কিনে এনে মহানগরবাসীর মধ্যে ১০দিন বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। ১০ মে থেকে শুরু ২০ মে পর্যন্ত ১০ হাজার পরিবারের মধ্যে ৯৫ মন সবজি বিতরণ করা হয়েছে। ১২জুন থেকে পুনরয়ি সবজী বিতরণ শুরু হয়ে জুনের শেষ পর্যন্ত বিতরণ চলবে।
ভর্তূকী মূল্যে ঈদ সামগ্রী বিক্রিঃ
মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করে সহযোগিতার লক্ষে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের সামাজিক অবস্থান রক্ষা করে সহযোগিতা ও তাদের জীবন যাত্রার মান ধরে রাখার জন্য টিম খোরশেদ-১৩ ও টাইম টু গিভ যৌথ উদ্যেগে পরীক্ষামূলকভাবে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিক্রি চালুৃ করেছে। ১৫ মে অর্থাৎ ২১ রমজান থেকে শুরু করে ২৮ রমজান পর্যন্ত প্রায় ১৭০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী ভতুর্কি মূল্যে বিক্রয় করা হয়েছে। ১৭০০ প্যাকেটে ৩০% হারে ৩ লক্ষ ৬ হাজার টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। ভতুর্কির অর্থ সংগঠনের সদস্যরা বহন করেছে।
বাজার মূল্যের ৬৪১ টাকার পণ্য ৪৬০ টাকায় প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি গ্রাহক ১৮১ টাকা ভর্তুকি পপেয়েছেন। প্যাকেজে ২ কেজি পোলাও চাল, ১ কেজি চিনি, ১ লিটার তীর সয়াবিন তেল, ২০০ গ্রাম ফ্রেস ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার, ১০ টি ডিম, ১ প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই, ২ প্যাকেট কুলসুন টিকন সেমাই ছিল।
টিম খোরশেদ-১৩ এর প্রধান সমন্বয়কারী ও টিম লিডার এবং টাইম টু গিভের এডমিন প্যানেল সদস্য ও নাসিক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ জানান ১২ জুন থেকে পুনরায় ভর্তূকি মূল্যে খাদ্য বিক্রি শুরু হবে।আগ্রহী গ্রাহকরা হট লাইন ০১৭৮০-৩৪৪৮৪২ নম্বরে ফোন করে অর্ডার করলে পরবর্তী ২৪ বা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হোম ডেলিভারী দেওয়া হবে।
ঈদ উপহারঃ
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে দল-মত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ১৩নং ওয়ার্ডে ৬,৭০০ পরিবারকে ঈদ উপহার সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বাড়ী বাড়ী পৌছে দেওয়া হয়েছে।
ভর্তূকী মূল্যে ডিম বিক্রিঃ
ঈদের পর থেকে দরিদ্র মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য ভর্তূকি দিয়ে ৩ টাকা পিস অর্থ্যাৎ ১২ টাকা হালি ডিম দেয়া হবে।
সরকারী ও বেসরকারী ত্রাণ বিতরণঃ
এছাড়াও সরকারি ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করা ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাক্তি এবং সংগঠনের সহায়তায় ওয়ার্ডবাসীকে দীর্ঘ মেয়াদি খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে ঞবধস কযড়ৎংযবফ-১৩ াং ঈড়ারফ ১৯. এর ত্রাণ বিতরন টিম।
প্লাজমা ডোনার সংগ্রহঃ
টিম খোরশেদ ও টাইম টু গিভ এর সম্বনয়ে আমরা প্লাজমা ডোনার ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা ২ জনকে প্লাজমা ডোনেট করেছি।
টিম সদস্যদের করোনায় আক্রান্তঃ
টিম খোরশেদ এর সদস্যদের মধ্যে এই পর্যন্ত ৫ জন করোনায় আক্রান্ত হন। এর মধ্যে আমাদের প্রধান টিম লিডার মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, মহিলা টিম লিডার আফরোজা খন্দকার লুনা, আইটি ডিপার্টমেন্টের সদস্য ইয়াছির সুলতান, ত্রাণ ডিপার্টমেন্টের সদস্য মোঃ সোনা মিয়া ও প্যাকেজিং ডিপার্টমেন্টের সদস্য মোঃ সাগর হাওলাদার। বাকী সকল সদস্য এখন পর্যন্ত সুস্থ আছে এবং টিম খোরশেদের সকল কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ চলমান রেখেছেন।
টিম লিডারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ
টিম লিডার ও প্রধান সমন্বয়কারী ও টাইম টু গিভ এর এডমিন প্যানেল মেম্বার মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের নেতৃত্বে প্রায় ৫০ জনের একটি টিম গত তিন মাস যাবত করোনা মোকাবেলায় দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে।
টিম লিডার ও প্রধান সমন্বয়কারী ও টাইম টু গিভ এডমিন প্যানেল মেম্বার মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ গত দুই মাসে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়ার জন্য টিমের সকল সদস্য, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যম, শুভাকাংক্ষী ও নাসিক ও নাসিক মেয়র, আইডিয়া পার্টনার টাইম টু গিভ এরং নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান করায় ইপিলিয়ন ফাউন্ডেশন, ফকির ফ্যাশন লিঃ,মডেল ড্যি ক্যাপিট্যাল, ইউ ক্যান, রোটারী পরিবার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এবং টিম খোরশেদের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ ও আমাকে ”বীর বাহাদুর উপাধি” ঘোষণা করায় সদরের সাংসদ সেলিম ওসমান এর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সমালোচনাকারীদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, যত বাধা আসুক না কেন সদবলে আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের করোনা প্রতিরোধে কার্যক্রম অব্যহত থাকবে ইনশাল্লাহ।