সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলের একটি বক্তব্যের বিষয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। ২ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে খানপুর ৩০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট উদ্বোধনকালে
তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে শহীদ বাদলকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘সেলিম ওসমানের থাবা বাঘের চেয়েও ভয়ংকর, বাঘের চেয়েও ভয়ংকর সেলিম ওসমানের থাবা।’ সেই সঙ্গে শহীদ বাদলের পৈত্রিক নিবাস মতলবে হওয়ায় তাকে ইঙ্গিত করে মতলববাদীও আখ্যায়িত করেছেন এবং তাকে মতলবে ফিরে যেতে হবে বলেও মন্তব্য করেন এই এমপি।
আগের দিন বন্দরের এক অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলের একটি বক্তব্যের বিষয়ে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আজকে সকালে একটি পত্রিকায় দেখলাম আমার ছবি দিয়ে নিউজ হইছে। বন্দরে রিলিফ দিতে গিয়ে যিনি নাকি চাষাড়া রেলওয়ের ফ্লাটে থাকতেন। এক এমপি সাবের আশীর্বাদে উনি বলে এখন লেতা (নেতা), উনি নাকি এখন লেতা, এই লেতা বন্দরে গিয়ে বললো সেলিম ওসমান বন্দরের এমপি না, উপজেলা চেয়ারম্যান বন্দরের এমপি। প্রশ্ন থাকবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এমপিশিপ পাল্টাই দিতে পারে! এটা কি করে সে পারে? দুই দিনের জুগিনা ভাতেরে অন্ন বইলেন না। আমরা দেশটা স্বাধীন করেছি, আমরা মুক্তিযোদ্ধা। হাজারবার বলি সেলিম ওসমানের থাবা বাঘের থেকেও ভয়ংকর। বাঘের থেকেও ভয়ংকর।
শহীদ বাদলকে ইঙ্গিত করে এমপি বলেন, আমি ডিক্লোরেশন দিতে পারি আমি কোন সংসদ সদস্য নই। আমি সেইদিন থেকে জনগণের গোলাম, আমার জীবন যতক্ষণ থাকবে আমি জনগণের গোলাম থাকবো। দেখি কোন মতলববাদী আমাকে সংসদ সদস্য থেকে সরাই দেন। উনি কে যে আমাকে সংসদ সদস্য থেকে সরাই দিবেন। উনাকে আবার মতলবে ফিরে যেতে হবে। সেখান থেকে ধানমন্ডি অট্টালিকায় দুই নম্বর স্কুল বানাইয়া কত পয়সার মালিক তিনি হয়েছেন সেলিম ওসমান দেখে দিবেনে। আপনি আওয়ামীলীগ করেন, আর যা মনে করেন তাই।
তিনি বলেন, প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে আওয়ামীলীগের লোকজনও শেখ হাসিনার নেতৃত্ব মানছেনা। চাল চুরি করছে, মেডিকেল কলেজে খাবারের বিল ২০ কোটি এক মাসে খরচ করছে। আমার আপা মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছেন। চুরি বন্ধ করতে হবে। এই সমস্থ হারামিরা যারা নাকি মৃত্যুকেও ভয় পায়না। করোনার মাঝেও ব্যবসা করে বিত্তবান হওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ ছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা গরীব মানুষের পাশে নেই স্থানীয় পত্রিকায় এমন একটি সংবাদে ১৬জন ব্যবসায়ীর ছবি ছাপানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। ওই নিউজের বিষয়ে ক্ষমা না চাইলে ১৬টি মামলা হবে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন এই এমপি। তিনি এও বলেছেন, আমি সাংবাদিকদের সহযোগীতা চেয়েছি, আঙ্গুল ঢুকাতে বলি নাই। একই সঙ্গে এমপি ওই সাংবাদিককে ইবলিশ শয়তানের সঙ্গেও তুলনা করেছেন।
সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বলেছেন, সাংবাদিক ভাইদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম আপনাদের সহযোগীতা চাই। কোন এক বন্ধু সাংবাদিকের একটা পত্রিকায় দেখলাম ১৬জন ব্যবসায়ীর ছবি দিয়ে বলে দিলেন করোনাভাইরাসে তাদের কোন মুভমেন্ট নাই। হে বন্ধু যদি তাদের মুভমেন্ট না থাকতো তাহলে আপনার পত্রিকা চলতো না। আমি আপনারে প্রশ্ন করি আপনি অনেকবার হজে¦ গেছেন, আপনার পাসপোর্টটা সিজ করলেই দেখা যাবে আপনি কতবার হজে¦ গেছেন। যদি ইনকাম টেক্স আপনাকে ধরে উত্তরটা কি দিবেন?
ওই সাংবাদিককে উদ্দেশ্যে করে এমপি আরও বলেন, কতক্ষণ পার্টিদের পেছনে লাগান, কতক্ষণ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে লাগেন। প্রয়োজনে ১৬টা মামলা হবে, আপনি বলতে পারেন না আমাদের মুভমেন্ট নাই। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনা করবে, সাথে সাথে তাদেরকে একই কাজ করতে হবে, সরকারের কোন নির্দেশনা আমাদের কাছে ছিল না, ব্যবসার একটা অংশ করোনা ভাইরাসে খরচ করা হোক। সেই অংশটা অবশ্যই সরকার আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের টেক্স বেড়েছে। আমরা কিভাবে ফ্যাক্টরী চালাবো? দিশা করতে পারছিনা। সরকারের তো দোষ ছিল না। সরকারের অনেক অর্থ ব্যয় হয়ে গেছে। ৪০ লক্ষ শ্রমিক আপনি চালান। আপনি আমার ব্যবসায়ীদের কাছে ক্ষমা চাইবেন। অন্যথায় ১৬টি মামলা আপনার বিরুদ্ধে হবে যেই ১৬টা ছবি আপনি প্রিন্ট করেছেন। আমি সহযোগীতা চেয়েছি, আমি আঙ্গুুল ঢুকাতে বলি নাই।
তিনি কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, সেই যেই হোন না কেন সমাজের মধ্যে, যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন তাকে আমরা সহ্য করতে পারবো না। ইবলিশ মানুুষের রূপেই থাকে, মানুষের সাথেই থাকে। আমাদের অন্যান্য করোনার সৈনিক ডাক্তার নার্স তারা কিভাবে কাজ করছেন, আর আপনারা এসি রুমে বসে নিউজ লিখছেন। এটা হলে আমাদের সাংবাদিকের প্রয়োজন হবে না। আমরা সহযোগীতা চাই।
এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আমরা যখনই ভাল করতে যাবো তখনি বাধার জন্য আল্লাহতালা ইবলিশ শয়তান তৈরি করছেন মানুষকে যেনো ভাল কাজ করতে দেয়া না হয়। এই হাসপাতালে গত ৫ বছর ধরে কাজ করছি। চুরি আর চুরি। এত্ত বড় চুরি আমার জীবনে আমি আর কখনও দেখি নাই। আমি ব্যর্থ। একজন তত্ত্বাবধায়ক এসছেন একজন মহা শক্তি, কখন টেন্ডার হয়, কখন সাপ্লাই হয়, এত্ত বড় একটা চুরি। সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে কমিটি করেছিলাম। আমার মত মানুষকেও বোকা বানানো হয়েছে।
সম্প্রতি বদলি হওয়া পিএ সিদ্দিকুর রহমান সম্পর্কে সেলিম ওসমান বলেন, একজন টাইপিস্ট হাসপাতালের মালিক হয়ে গেলেন। খানপুুরের কজন ছেলে পেলে নিয়ে তিনি বীর বাহাদুর হেয়ে গেছেন। তিনি টাইপিস্ট থেকে তত্ত্বাবধায়কের পিএ হয়ে গেলেন। কোন তত্ত্বাবধায়ক তার জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারতোনা। আমি তার বিচার চেয়েছিলাম। তদন্ত চেয়েছিলাম। কিন্তু তাকে বদলি করা হয়েছে মানে তাকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে। তাকে রাজশাহীতে পাঠিয়ে দেয়া হলো। কেন তার বিচার নারায়ণগঞ্জে হবে না? যার নারায়ণগঞ্জে তিনটি বাড়ি, বিভিন্ন ক্লিনিকে তার শেয়ার রয়ে গেছে।