সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের ব্যবসায়ী হেকমত আলীর হত্যার পেছনের রহস্য উদঘাটন করেছে বলে দাবি করেছে পিবিআই। এতে খোলাসা হয়েছে হেকমত আলীর হত্যার রহস্য। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে গ্রেপ্তারকৃত মামলার প্রধান আসামি রফিকুল ইসলাম সবুজ।
এর আগে ভিকটিম নিখোঁজের ৯০দিন পর ড্রামের ভিতর থেকে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
৬ জুলাই সোমবার দুপুর ১২টায় সাইনবোর্ড নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ের অফিস কক্ষে প্রেস বিফ্রিংয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এ.আর.এম আলিফ হোসেন সাংবাদিকদের এ হত্যার পেছনের মূল্য রহস্যের কথা বলেন।
এর আগে, ৪ এপ্রিল রূপগঞ্জে নিখোঁজ হওয়া হেকমত আলীর লাশ ঢালাই এক ড্রামের ভিতর থেকে সংগ্রহ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিকেশন (পিবিআই)।
নিহত হেকমত আলী (৪৫) রূপগঞ্জ থানার কালাদী এলাকার মৃত কদম আলীর ছেলে ও বাদীনি রোকসানা আক্তারের স্বামী।
আসামি রফিকুল ইসলাম সবুজ হলো কেরাবো এলাকার ইয়াকুবের ছেলে ও নিহত হেকমত আলীর ব্যবসায়ের পার্টনার ও সম্পর্কে ছোট খালু।
এ.আর.এম আলিফ হোসেন বলেন, নিহত হেকমত আলী আসামি সবুজের ছোট খালু। নিহতের একটি মোটর সাইকেল পার্টেসের দোকান ছিল। সে দোকানে আসামি বেতনভূক্ত কর্মচারী ছিল। গত ৪ বছর আগে ভিকটিম ভুলতা গাউছিয়ার নর ম্যানশনের নিচ তলায় একটি দোকান ভাড়া নিয়ে মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজ নাম দিয়ে আরেকটি সাইকেলের ব্যবসা শুরু করে। সেই দোকানে আসামী সবুজকে ম্যানেজার হিসাবে নিয়োগ দেয় ভিকটিম।
তারপর ভিকটিম গত আড়াই বছর আগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বড় করার জন্য উক্ত মার্কেটের নিচ তলায় ১৩ ও ১৪ নং দোকান ভাড়া নেয়। সেই দোকানে সবুজ আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে লভ্যাংশের ৪০ শতাংশের পার্টনার হয়।
গত ২ বছর আগে ব্যবসার উন্নতি হতে থাকলে সবুজ তার খালু ভিকটিম হেকমত আলীকে ব্যবসায়িক পার্টনার হওয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে ভিকটিম রাজি হলে সবুজ ব্রাক ব্যাংক ভূলতা গাউছিয়া শাখা থেকে ৫ লাখ টাকা উত্তোলণ করে হেকমত আলীকে দেয় এবং সমানভাবে পার্টনার হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকে। কিন্তু আগের ন্যায় ভিকটিম ব্যবসায়িক লভ্যাংশের টাকা ৬০ শতাংশ টাকা সে নিজে নিতো ও ৪০ শতাংশ টাকা সবুজকে দিতো। এতে সবুজ ও ভিকটিমের মধ্যে বিরোধ ও দ্বন্দের সৃষ্টি হয়।
এছাড়া আসামী সবুজের বাবা মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভিকটিম বিয়ের পাত্রী দেখতে গেলে আসামীর ও তার পরিবারের সাথে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়। ভিকটিম হেকমতের কন্যা হাফসা (৯) কে আসামী সবুজের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আসামী সবুজ নাবালিকা কন্যাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করলে ঘটনার কয়েকদিন আগে ভিকটিম হেকমত আসামী সবুজের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যবসার হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে দিতে আসামীর উপর চাপ প্রয়োগ করে।
তারপর ৪ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে আসামী সবুজ ভিকটিম হেকমত আলীকে ফোন করে তার বাড়িতে আসতে বলে। ভিকটিম সকাল ৯টার দিকে বাড়ীতে আসে। ভিকটিম খাওয়া দাওয়া শেষে আসামীর ঘরে বিশ্রাম করতে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে। তখন আসামী সবুজ পূর্বের ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে তার ঘরে থাকা একটি পুরাতন লাল গামছা রশির মতো পেঁচিয়ে ভিকটিমের মাথার পিছনের দিক দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পরে আসামী তার ঘরে থাকা একটি খালি স্টীলের বড় ড্রাম (গ্রিজের ড্রাম) এর মধ্যে ভিকটিম হেকমতের হাত পা বেঁধে ড্রামটি কাঁত করে তার মধ্যে লাশটি ঢুকিয়ে ড্রামটি দাঁড় করে আসামীর রুমের পাশে থাকা অন্য ষ্টোর রুমের মধ্যে ড্রামটি রেখে দেয়। আসামীর বাড়ীর বাথরুমের কাজ করার জন্য পূর্বের আনা আকিজ সিমেন্টের ৩ বস্তা সিমেন্ট কাঁটার দিয়ে কেটে পুরাতন ভাত খাওয়ার মেলামাইনের প্লেট দিয়ে সিমেন্ট উঠিয়ে উক্ত ড্রামটি ভরে ড্রামটি ষ্টোর রুমের মধ্যেই রেখে দেয়।
পরে ৫ এপ্রিল সকাল ৬টার দিকে আসামী সবুজ ভিকটিমের লাশ নসিমনে তুলে ভুলতা গাউছিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। রুপগঞ্জ ফুশাব সাকিনস্থ পারটেক্স গ্রুপের মালিক এমএ হাশেম সাহেবের দিঘীর (মাছের ঘের) কাছে এসে নসিমন থামিয়ে ড্রামটি নিচে নামায় এবং সুযোগ বুঝে ড্রামটি পুকুরের মধ্যে ফেলে দেয়।
গত ১৪ এপ্রিল ভিকটিম হেকমত আলীর স্ত্রী রোকসানা বেগম বাদী হয়ে ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম সবুজসহ ৪ জনকে আসামী করে রূপগঞ্জ থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পরে গত ১৫ এপ্রিল পুলিশ আসামীর প্রধান আসামী সবুজকে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ও জেলে পাঠায়।
প্রায় ৩ মাস জেলে থাকা অবস্থায় পিবিআই নারায়ণগঞ্জ গত ২৯ জুন আসামী সবুজকে রিমান্ডে আনে। পিবিআই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামী সবুজের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ২ জুলাই আসামী সবুজের দেখানো জাগায় থেকে ভিকটিম হেকমত আলীর পঁচা গলা লাশটি উদ্ধার করা হয়।
গত ৫ জুলাই আসামী রফিকুল ইসলাম সবুজ আদালতে নিজেকে ঘটনার সাথে জড়িয়ে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।