দুর্নীতিবাজ ইউপি সচিব ইউসুফ বরখাস্তে স্বস্থিতে বন্দর ইউনিয়নবাসী

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এহসান উদ্দীন আহম্মেদের ক্লিন ইমেজকে যখন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন ওই সময়কার সাময়িক বরখাস্ত ইউপি সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ তখন জেলা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের সঠিক তদন্তে দোষী সাব্যস্থ হওয়ায় ওই সচিব ইউসুফকে বরখাস্ত করা হয়। দীর্ঘদিন প্রশ্নের মুখে ছিলেন চেয়ারম্যান এহসান উদ্দীন। সচিব ইউসুফ স্থায়ীভাবে বরখাস্ত হওয়ায় ইউনিয়নবাসীর মাঝে স্বস্থি ফিরেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আলোচিত সেই সচিব স্থায়ীভাবে বরখাস্থ সংবাদে ৮ জুলাই বুধবার ছিল টক অব দ্যা বন্দর। গত ৮ জুলাই দৈনিক পত্রিকা সহ স্থানীয় ও অনলাইন পোর্টালে সংবাদটি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়। দূর্নীতিগ্রস্থ বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব ইউসুফকে স্থায়ীভাবে বরখাস্থ করেছে যা বন্দরের সর্বত্র আলোচনা মুখর ছিল।

স্থানীয়রা বলছেন- বন্দরের চায়ের দোকান, বাজার সহ বিভিন্ন স্ট্যান্ডে লোকমুখে একই কথা সত্যের জয় অবধারিত। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ধামাচাপা দেওয়া যায় না। মিথ্যার জয় খনিকের হলেও সত্যের জয় অব্যশই হয়। অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ইউপি সচিব মোহাম্মদ ইউসুফই এর বাস্তব প্রমাণ। দুর্নীতির দায়ে স্থায়ীভাবে সাবেক সচিবকে বরখাস্থ করে প্রমাণ করলেন সত্যের জয় হবেই। সত্যই সুন্দর- সুন্দরই সত্য আর এটারই প্রমান হল। যদিও একটু বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। একজন দূর্নীতিগ্রস্থ সচিব ও স্থানীয় একাধিক মহলের যোগসাজসে ইউসুফ দুই বার জনগণের ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদকে বেকায়দায় ফেলানোর জন্য যা যা প্রয়োজন সকল কিছুই করেছে। কিন্তু তা ঘুরোবালি।

তারা বলছেন- অবশেষে সত্যের জয় হলো। প্রাথমিক অবস্থায় চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ একটু বিচলিত হলেও কাউকে তা বুঝতে দেয়নি। নিজের ফেসবুক আইডিতে আবেগময় একটি স্ট্যাটাস দেয়। যা সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা দেখা দেয়। তিনি সকলকে আস্থা ও বিশ্বাস এবং ধর্য্য ধরার আহবান জানান। যে সত্যের জয় হবেই ইনশাল্লাহ।

ওই সময় চেয়ারম্যানকে বরখাস্তের পর চেয়ারম্যানের একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস ফেসবুকে ভাইরাল হয়। বরখাস্তের পর চেয়ারম্যানের আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, বন্দর ইউনিয়নবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। হাজারও প্রমাণ হাতে থাকার পরও আজ সত্য প্রতিষ্ঠায় মনে হয় ব্যর্থ হয়ে গেলাম। আমি হাল ছেড়ে দেয়ার মতো মানুষ না। আমি অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করার মানুষ না। আমি দুর্নীতির সঙ্গে আপস করার মতো মানুষ না। আমি মিথ্যা কথা বলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মানুষ না। আমি কারও হক নষ্ট করে অর্থ উপার্জন করার মতো মানুষ না। আমি জীবনে কাউকে এক টাকা ঠকিয়েছি এমন কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবেন না ইনশাআল্লাহ। আস্থা আর বিশ্বাস ছাড়া পৃথিবীতে কোনো প্রতিষ্ঠানই চলতে পারে না। পিতার ওপর পুত্রের আর পুত্রের ওপর পিতার এবং স্বামীর ওপর স্ত্রী আর স্ত্রীর ওপর তার স্বামীর যদি আস্থা-বিশ্বাস না থাকতে তাহলে পৃথিবীতে থেকে সংসার নামক শব্দটি এতদিনে মুছে যেত। একজন কাজের ছেলের হাতে আমার বাচ্চাকে রেখে যাওয়ার পর সে যদি আমার সেই বাচ্চাকে গলা টিপে হত্যা করে তার দায় আমি বাবা নিতে পারিনা। ৩৩ লাখ টাকা আমার পারিবারিক ঐতিহ্য আর সম্মানের প্রেক্ষাপটে খুবই সামান্য, আমার কথা না হয় বাদই দিলাম। বাবার কাছ থেকে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সামান্য জমি বিক্রি করে দিলেই ব্যবস্থা হয়ে যেত। এতে করে প্রকৃত অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, প্রতারক ও বিশ্বাসঘাতক সচিব পার পেয়ে যেত।

পিবিআই এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে এই বিষয়ে ওপর তদন্ত চলছে। আমি আমার ইউনিয়নবাসীকে অল্প কিছুদিন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি প্রার্থনা করছি যাতে আল্লাহ সুবহানাআল্লাহ আমাকে সব ধরনের অন্যায়, দুর্নীতি, বিশ্বাসঘাতকতা আর প্রতারণার বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।’

নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার বন্দর সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব ও বর্তমানে সোনারগাঁও উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ ইউসুফের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ ইউসুফ কে চাকরিচ্যুত করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত ২৮ জুন তারিখের অফিস আদেশে জানান হয়, কর্তব্যে অবহেলা, সরকারি অর্থ ও সরঞ্জামাদি আত্মসাৎ করার অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ)কর্মাচারী চাকরি বিধিমালা /২০১১ এর ৭ম অধ্যায়ে বর্নিত সাধারণ আরএ এবং সুশৃঙ্খল জনিত বিধিমালা ব্যহতের কারণে তার বিরুদ্ধে ৩৮ বিধির অধিনে বিভাগীয় মামলা চালু করা হয়।যেহেতু বিধি ৩৮(ক)(খ) বিধান অনুসারে তাকে অভিযোগের শাস্তির বিষয় উল্লেখ করে কারণ দর্শানো হয়।তার দাখিলকৃত জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বিভাগীয় মামলা তদন্তের নিমিত্তে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) চাকরি বিধিমালা /২০১১ এর বিধি ৩৮(২)(গ) মোতাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ মাসুম বিল্লাহ ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার সারাওয়াত মেহজাবীন, সহকারী কমিশনার আসমা সুলতানা নাসরিন গনের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।তদন্ত কমিটির তদন্তে বন্দর সদর ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র,ক্যাশ বহি, রেজিস্ট্রার,জরুরি নথিপত্র পর্যালোচন করে ইউসুফের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ যথাযথভাবে প্রমানিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ)চাকরি বিধিমালা /২০১১ এর ৩৫(১)খ(ঈ) ধারা অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব ইউসুফ জন্ম সনদ, লাইসেন্স নবায়ন সহ বিভিন্নভাবে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এসব অনিয়মের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় প্রায় ২ বছর সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। এসময় নিজের অপকর্ম আড়াল করতে বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করতে থাকে ইউসুফ। পরে সোনারগাঁও সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নিযুক্ত হয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে বহু অপকর্মের হতো মোঃ ইউসুফ। আর অর্থ বানিজ্যের কারণে অতিষ্ট হয়ে জন্ম নিবন্ধন ও সকল প্রকার সনদ ইস্যুর পাসওয়ার্ড নিজের কাছে সংরক্ষণ করেন চেয়ারম্যান মোঃ জিন্নাহ।

এখানে উল্লেখ্য যে, স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ এই দুই অর্থ বছরের জন্ম নিবন্ধন ও ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসের ট্রেড লাইসেন্স খাতে ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ ও সচিব মোঃ ইউসুফের বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এ ঘটনায় অডিট আপত্তি তোলা হয়।

আরও জানাগেছে, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে জন্ম নিবন্ধন ফ্রি বাবদ ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৩৮০ টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে একই খাতে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তবে শুরু থেকেই অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে নিজের সম্পৃকতার কথা অস্বীকার করে আসছিলেন চেয়ারম্যান। সংবাদ সম্মেলন করে চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ পুরো বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেছিলেন। পুরো টাকাটাই সচিব ইউসুফ দূর্নীতির মাধ্যমে আতœসাত করেছেন। এ ঘটনায় তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি সচিবের বিরুদ্ধে মামলাও করেন এহসান উদ্দিন আহম্মেদ। ওই মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তাধীন আছে।

এ বিষয়ে বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটির তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় চরম দুর্নীতিবাজ সচিব ইউসুফকে চাকরিচ্যুত করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রমানিত হলো সত্যের জয় অব্যশই। মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ধামাচাপা দেয়া যায় না। তার দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি আল্লাহ’র উপর অঘাত বিশ্বাস করে বলেন, আমি প্রার্থনা করছি যাতে আল্লাহ সুবহানাআল্লাহ আমাকে সব ধরণের অন্যায়, দুর্নীতি, বিশ্বাসঘাতকতা আর প্রতারণার বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। অবশেষে সেই ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলো, সত্যের জয় হলো।