সান নারয়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
জমি লিখিয়ে নেয়ার কৌশল হিসেবে আফছার মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে ভূয়া বাদী বানিয়ে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা ভূমি অফিসে মামলা করা হয়েছে যা ভূমি অফিসের নোটিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। মামলায় যাকে বাদী দেখানো হয়েছে তিনি ওই মামলাটি করেননি বলেও দাবি করেছেন। মামলাটির সম্পর্কে জানতে চাইলে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আচরণ ভাবিয়ে তুলেছে আফছার মিয়াকে। মুলত আফছার মিয়ার জমি দখলে নিতেই তাকে ভূয়া বাদী তৈরি করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন আফছার মিয়া।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকার মৃত মামুদ আলীর ছেলে আফসার মিয়া।
লিখিত অভিযোগে আফছার মিয়া উল্ল্যেখ করেছেন- উপরোক্ত বিবিধ মোকদ্দমা (নং-৬৩/২০২০) মামলায় তাকে বাদী/প্রথম পক্ষ দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ ৭১এ নিউজ চাষাড়া জামতলা এলাকার মৃত ডাঃ আক্তারুজ্জামানের ছেলে আখরকুজ্জামান, ডাঃ মোঃ এমরামুজ্জামান, ডাঃ মোঃ আফরাউজ্জামান শাহীন, আরাফাত জাহান, কন্যা ইয়াকুতজাহান রিপা, আক্তার জাহান কনা, প্রফেসর মোঃ ইসরাইলের স্ত্রী মোসাঃ ইসরাত জাহানকে করে বিবাদী (২য় পক্ষ) বানিয়ে কে বা কারা সংশ্লিষ্ট আদালতে বিবিধ মোকদ্দমা নং- ৬৩/২০২০ দায়ের করে।
আফছার মিয়া দাবি করেন- ঘটনাচক্রে উক্ত বিবিধ মোকদ্দমার নোটিশ আমার হস্তগত হয়। উক্ত মোকদ্দমার তারিখ ২২/৬/২০২০ইং ধার্য করা হয়। উক্ত মোকদ্দমার নোটিশ আমার হস্তগত হলে নোটিশটি পড়ে আমি আশ্চর্য্য, হতভম্ব ও শঙ্কিত হয়ে পড়ি।
‘প্রকৃত পক্ষে আমি কদাকস্মিন কালেও বাদী/১ম পক্ষ হয়ে উল্লেখিত বিবাদী/২য় পক্ষগণের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আদালতে কোন প্রকার মোকদ্দমা দায়ের করিনি। নোটিশ প্রাপ্ত হয়ে আমি সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফতুল্লা আদালতে গিয়ে মোকদ্দমাটি সম্পর্কে তথ্য তালাশ অনুসন্ধান করতে চাইলে এবং মোকদ্দমার আরজি আদালত হতে দেখতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং অফিসের পেশকার আমাকে মোকদ্দমা সম্পর্কে কোন তথ্য এমনকি মোকদ্দমার নথিটি পর্যন্ত আমাকে দেখতে দেয়নি।’
‘মোকদ্দমাটি কোন আইনজীবি দাখিল করেছেন তাও দেখতে দেয়নি এবং নথিটি কোথায় আছে এই সম্বন্ধে অফিসের কর্মচারী আমাকে কোন সন্ধান দেয়নি। তবে মৌখিকভাবে আগামী ২০/৭/২০১০ইং তারিখে শুনানীর কথা আমাকে জানায়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস উপরোক্ত বিবাদী/২য় পক্ষগণ প্রতারণার আশ্রয়ে পরস্পর যোগসাজসে অফিসের লোকজনের সহায়তায় আমাকে বাদী/১ম পক্ষ দেখিয়ে ফলস পারসোনিফিকেশন এর মাধ্যমে দ্বিতীয় পক্ষগণকে বিবাদী/২য় পক্ষ দেখিয়ে জঘন্য মিথ্যার আশ্রয়ে আমাকে বাদী/১ম পক্ষ দেখিয়ে উক্ত ভূয়া, জাল, জালিয়াতি, তঞ্চকতা ও প্রবঞ্চনার মাধ্যমে উক্ত মোকদ্দমা দায়ের করে রেখেছে। আমি কদাপিও উক্ত বিবিধ মোকদ্দমা নং- ৬৩/২০২০ এর বাদী নই এবং দ্বিতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে উক্ত মোকদ্দমা দায়ের করিনি।’
‘উক্ত বিবাদী ২য় পক্ষ ডাঃ মোঃ আখরকুজ্জামান গংদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে দ্বিতীয় পক্ষগণের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা মোকদ্দমা চলে আসছে। বিবিধ মোকদ্দমা নং-৬৩২০২০ এর নোটিশে উল্লেখিত সম্পত্তি হতে আমাকে বঞ্চিত করার জন্য ধূরন্দ দ্বিতীয় পক্ষগণ সংশ্লিষ্ট আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজসে বিবাদী/২য় পক্ষগণ উক্ত ৬৩/২০২০নং বিধি মোকদ্দমা আনয়ণ করেছে। মোকদ্দমাটির পশ্চাতে একটি গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকারী দল রয়েছে।’
লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর ভূক্তভোগী আফছার মিয়া সংবাদকর্মীদের কাছে বলেন, ফতুল্লা ভূমি অফিসে এই মামলা আমি দায়ের করেনি। আমার স্বাক্ষর নকল করে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে অবৈধভাবে যোগসাজোস করে আমার বিপক্ষের লোকজন আমার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য মিথ্যা মোকাদ্দমা দায়ের করে ৬৩/২০২০ মামলা দায়ের করেছে। আমি এই মামলার সম্পর্কে কিছুই জানি না। এই সম্পত্তি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ দ্বিতীয় সহকারী জজ আদালত ও জেলা দ্বিতীয় যুগ্ম জজ আদালতে দুইটি মামলা চলমান আছে।
তিনি আরোও বলেন, আমি এই মামলার বিষয়ে ভূমি অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে কর্মকত লোকজন আমাকে এই মামলার নথি দেখায় না এবং কোন আইনজীবী এই মোকাদ্দমা দায়ের করেছে সেটাও দেখায় না।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজস্ব সার্কেল আজিজুর রহমান সংবাদকর্মীদের কাছে বলেন, আমাদের এখানে ৬৩/২০২০ এটা মিস কেইস মামলা চলমান আছে। তাকে মামলার তারিখে আসতে বলা হয়েছে জবাব থাকলে জবাব দিবে। আমরা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মামলার বিবাদীদেরকে নোটিশ করেছি জবাব দেওয়ার জন্য। তারা এসে তাদের এনআরবি সবকিছু নিয়া গেছে।
মামলার বাদী আফছার মিয়ার অভিযোগ এই মামলা তিনি করেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা যদি আফছার মিয়া না করে থাকে তাহলে কে করলো? তাহলে তার পক্ষে কেউ না কেউ মামলাটি ফাইলিং করেছেন। আফছার মিয়া যদি আমার কাছে আসে এবং লিখিত দেয় তাহলে মামলা খারিজ হয়ে যাবে। এটার জন্য সুযোগ আছে। মামলার যে প্রক্রিয়াটা বাদী পক্ষ থেকে যদি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করে তাহলে পরেরদিন সেটা প্রত্যাহার হয়ে যায়।