দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করলেন সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম। মসজিদের অনুদানের চেকের বিষয়টিও তিনি স্পষ্ট করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি তার বিরুদ্ধে কুচক্রিমহলের ষড়যন্ত্র রয়েছে সেটাও স্পষ্ট করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একের পর এক ঠুনকো অভিযোগের বিষয়ে সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে কোন বিশেষ প্রভাবশালী মহল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরাতে ওঠে পড়ে লেগেছেন।

স্থানীয়রা বলছেন- কিছু লোক বিশেষ সুবিধায় ম্যানেজ হয়ে ঠুনকো অভিযোগের বিষয়গুলো তুলে ধরলেও মানুষের মাঝে অভিযোগগুলোকে বিশ্বাস সৃষ্টি করতে পারছেনা। যে কারনে একটার পর এক ঠুনকো অভিযোগ তুলেই যাচ্ছে। ফলে ষড়যন্ত্রকারীরা হাপিয়ে ওঠেছেন বলেও স্থানীয়দের মন্তব্য। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রশংসনীয় কর্মকান্ডের প্রতি ইর্ষান্বিত হয়ে দিশেহারা কুচিক্রমহল। এবারও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনারগাঁওবাসীর মাঝে নিজের অবস্থান ও অভিযোগের বিষয়ে তথ্য প্রমাণ তুলে ধরেছেন।

অন্যদিকে স্থানীয়রা বলছেন- বিশ্বব্যাপী মহামারি সংক্রমণ রোগ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুল ইসলাম। করোনায় আক্রান্তদের শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখানে গিয়ে ওই রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং নির্দিষ্ট এলাকা লকডাউন করেন। লকডাউনে থাকা পরিবারগুলো ও করোনায় আক্রান্ত পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন তিনি নিজ হাতে। আবার করোনা উপসর্গ নিয়ে কিংবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা লাশ দাফনও করেছেন তিনি।

সেই সঙ্গে গরীব অসহায় দুস্থ দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারগুলোর ঘরে ঘরে গিয়ে নিজ হাতে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। স্থানীয় এমপির সঙ্গেও রাতের আঁধারে এসব পরিবারগুলোর মাঝে চাল ডালের বস্তা হাতে করে নিয়ে গিয়ে বিতরণ করেছেন তিনি। করোনায় প্রাথমিক পর্যায়ে যখন বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব রটানো শুরু হয় তখন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে সেই গুজব রটানো বন্ধ করেছেন তিনি।

আবার করোনায় এক শ্রেণির মানুষ যখন দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয় তখন করোনার ঝুঁকি নিয়ে তিনি হাটে বাজারে গিয়ে হ্যান্ড মাইক নিয়ে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেন এবং দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের কঠোর নির্দেশনা দেন। এসব বিষয়ে বেশকটি ভ্রাম্যমান আদালত জেল ও জরিমানাও করেছেন।

এসব কারনে সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান বেড়ে যায়। পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় সাইদুল ইসলামের নামটি ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের কাছে প্রিয়পাত্র হিসেবে আভির্ভুত হন এই সরকারি কর্মকর্তা। একই সঙ্গে যে কোন সমস্যায় তিনি সোনারগাঁয়ের যে কোন মানুষের দেয়া তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

করোনা পরিস্থিতিতে যখন কৃষকের ধান পাকতে শুরু করলো তখন তিনি কৃষকের ধান কেটে দিতে ছাত্র ও যুব সমাজের প্রতি আহ্বান রাখলেন যে- করোনা পরিস্থিতিতে প্রান্তিক কৃষকেরা শ্রমিক সংকটে পড়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের পাকা ধান কাটতে না পাড়লে সেই ধান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তিনি কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিতে আহ্বান জানান।

তার এমন আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রতিনিয়ত কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন যুব ও ছাত্র সমাজের স্বেচ্ছাসেবী টিম। এতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলোও। সেই সঙ্গে তিনি নিজেও কৃষকের ধান কেটে দিতে কাস্তে হাতে কৃষকের জমিতে নেমে পড়েন। এতে স্বেচ্ছাসেবী টিমের কর্মীরা আরও উৎসাহিত হয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। এসব কাজে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভুমিকা রাখায় মানুষ তাকে ভালবাসতে শুরু করেছেন। নদী দখল, ভূমিদস্যূতাকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। নূনেরটেকের চর কেটে যেসব বালু সন্ত্রাসীদের পকেট ভারি হতো সেইসব চরে তিনি বৃক্ষরোপন করেছেন। এতে বালু কেটে আনা বন্ধ হয়ে যাবে। যার কারনে অন্য একটি পক্ষ তার কর্মকান্ডে চরম ক্ষুব্দ। তার পর শুরুতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাড়ে ৪ হাজার টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। যা নিয়ে সচেতন মানুষের মাঝে রসিকতা শুরু হয়। সর্বশেষ মসজিদের চেকের বিষয় একটি অভিযোগ তোলা হয়।

এদিকে একটি জাতীয় দৈনিকে মসজিদের চেকের বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের ই-পেপারের অংশটুুকু ফেসবুকে পোস্ট করে এ বিষয়ে ১২ জুলাই রবিবার উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম লিখেছেন, “উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে”
(To make cat’s paw of person.)

আচ্ছা ধরুণ আপনি একটি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছেন। এমন সময় দেখলেন আপনার অদূরে এক ছিনতাইকারী একজন নিরীহ লোকের মানিব্যাগ ছিনতাই করে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। মূহুর্তেই আপনি ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করলেন মানিব্যাগ উদ্ধারের জন্য। অনেকটা দৌড়ে ছিনতাইকারীর সাথে ধস্তাধস্তি করে কিছুটা আহত হয়ে আপনি মানিব্যাগটি উদ্ধার করলেন। এরপর বাসস্ট্যান্ডে ফিরে এলেন নিরীহ লোকটিকে মানিব্যাগটি অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। এসে দেখলেন মানিব্যাগ হারানো লোকটিকে ঘিরে অনেক লোকের ভীড়। আপনি ভীড় ঠেলে লোকটির সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। এমন সময় ভীড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ছিনতাইকারীর এক সহযোগী চিৎকার করতে লাগলো “এই যে দেখেন ছিনতাইকারী! এই যে দেখেন তার হাতে মানিব্যাগ”।

এরপর আপনি কিছু বুঝে উঠার আগেই আপনার হাতে মানিব্যাগ দেখে ভীড়ের লোকজন গণপিটুনি দিয়ে আপনাকে অজ্ঞান করে পুলিশে দিয়ে দিলো!

আচ্ছা হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর আপনার অনুভূতি কেমন হবে বলুন তো!!

পরিতাপের বিষয় এই যে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী আমার অনূভুতিও এখন ওই মানিব্যাগ উদ্ধার করতে যাওয়া লোকটির মতই! টাকা উদ্ধারের জন্য আমি নিজেই চেক বাতিল করলাম আর আমাকেই বানিয়ে দিচ্ছেন…???
সংযুক্ত ছবিতে দেখা পত্রিকায় প্রকাশিত খবরটির প্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্যটি আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। কারন আমি সোনারগাঁবাসীর কাছে সত্যিই দায়বদ্ধ।

প্রিয় সোনারগাঁবাসী,

ঈদুল ফিতর এর আগে কোরনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সোনারগাঁ উপজেলায় ৫৯৭টি মসজিদের সম্মানিত ঈমাম মুয়াজ্জিনগণের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে বরাদ্দ প্রদান করেন।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সোনারগাঁ শাখা আমাকে না জানিয়েই তালিকাটি জেলাতে প্রেরণ করে! এটি কেনো করেছে আমার বোধগম্য নয়!!

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রেরিত তালিকা অনুযায়ী চেক প্রস্তুত করার জন্য আমি নিজে তাৎক্ষণিক নির্দেশনা প্রদান করি। প্রস্তুতচেক স্বাক্ষরের সময় আমার কাছে কিছু অসামঞ্জস্যতা ধরা পড়ে যেমনঃ

১. মোট ৮২টি মসজিদের নাম দুইবার করে দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে আমি সেই চেকগুলি নিজের হাতে লাল কালিতে লিখে বাতিল করি।
(৮২*৫০০০= ৪,১০,০০০/- চার লক্ষ দশ হাজার টাকা) এবং অই চার লক্ষ দশ হাজার টাকা বাদ পড়া মসজিদে বরাদ্দ প্রদানের নির্দেশনা দেই। মসজিদের নাম সংগ্রহ করতে এই পেজে একটি স্ট্যাটাসও দেই।

২। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর প্রস্তুতকৃত তালিকা হতে মাননীয় সাবেক সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়,আওয়ামীলীগের বর্ষীয়ান অনেক রাজনীতিবিদের মসজিদের নাম সহ ঐতিহ্যবাহী অনেক মসজিদের নাম কে বা কাহারা কৌশলে বাদ দেয়!!

পরে বিস্তারিত তদন্ত করে জানতে পারি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আল আমিন নামের একজন ফ্লিড সুপারভাইজার কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য এবং আমাকে আওয়ামীলীগের রাজনীতিবিদগনের কাছে বিতর্কিত করার জন্য দুরভিসন্ধিমূলকভাবে এই কাজটি করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রনালয়ে একটি প্রতিবেদন দেই।

হাস্যকর বিষয় এই যে, প্রকাশিত সংবাদটির পত্রিকার প্রতিনিধি আমার ও ফ্লিড সুপারভাইজার এর সাথে কোন কথা না বলেই আমাদের উদ্ধৃতি দিয়ে দিয়েছে!! এর কি কারণ থাকতে পারে? একের পর এক প্রকাশিত খবর অনুযায়ী আমার অবস্থাও এখন ওই মানিব্যাগ উদ্ধার করতে যাওয়া লোকটির মতই!! আমি নিজেই চেক বাতিল করলাম আর আমাকেই বানিয়ে দিচ্ছেন…???

প্রিয় সোনারগাঁবাসী,

এইসব সংবাদ মাধ্যমকে ব্যবহার করা ছাড়াও আরো অনেকভাবেই স্বার্থক্ষুন্ন হওয়া যে সকল কুচক্রীমহল বোকা বানিয়ে সোনারগাঁবাসীকে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করছে- আসুন তাদের জন্য দুহাত তুলে প্রার্থনা করি। মহান সৃষ্টিকর্তা যেনো তাদের মনোবৈকল্যতা দুর করে দ্রুত সুস্থতা দান করেন। আমিন।