সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন এলাকা গচ্চা দিয়েছে জেলা ছাত্রদল। মহানগর ছাত্রদলের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দিলেও জেলা যুবদল তাদের আওতাধীন দখলে রেখেছে ৫টি ইউনিয়ন। জেলা ছাত্রদলের ছেড়ে দেয়া এবং জেলা যুবদলের নিয়ন্ত্রণে বহাল রাখার বিষয়টি নিয়ে নানা ধরণের আলোচনা চলছে। যদিও এর আগে ওই ৫টি ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছিল মহানগর যুবদল।
নেতাকর্মীদের সূত্রে, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের আওতাধীন এলাকা বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন এলাকায় খবরদারি করেছিল মহানগর যুবদল। ২০১৪ সালের পূর্বে ওই ইউনিয়ন এলাকা জেলা যুবদলের আওতাধীন দাবি করে ব্যানার নিয়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের সমাবেশে যোগদানের সময় ঢাকার কমলাপুর এলাকায় যুবদল নেতা মহিউদ্দীন শিশিরকে মারধর করেছিল মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরা। তারপর থেকে ওই ৫টি ইউনিয়ন এলাকাকে গচ্চা দিয়ে দেয় তৎকালীন জেলা যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন ও সেক্রেটারি শাহআলম মুকুল। কিন্তু জেলা যুবদলের বর্তমান সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু ও সেক্রেটারি গোলাম ফারুক খোকন এই এলাকা ছাড়তে চাননি। এবার ওই ৫টি ইউনিয়নকে জেলা যুবদলের আওতাধীন ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল। ফলে মহানগর যুবদলের অবৈধ খবরদারি সমাপ্ত করা হলো। নেতাকর্মীরা দাবি করেছিলেন-জেলা যুবদলের আওতাধীন এলাকায় মহানগর যুবদলের কমিটি গঠন অবৈধ।
জানাগেছে, গত ২৩ জুলাই কেন্দ্রীয় যুবদল এক চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়ে বিষয়টি পরিস্কার করেছে যে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন এলাকা জেলা যুবদলের আওতাধীন থাকবে। এই ঘটনায় ২৫ জুলাই শনিবার সকালে শোকরানা দোয়া মাহফিল করেছে বন্দর উপজেলা যুবদল। যে যুবদলের কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলেন মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। অথচ সেই কমিটির নেতারাও খোরশেদের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা ঘৃনা প্রকাশ করে শোকরানা দোয়া মাহফিল করলো।
আরও জানাগেছে, ২০১৯ সালের ৫ এপ্রিল ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয় নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের। কমিটি পাওয়ার সাথে সাথেই রাতের অন্ধকারে কাউকে কিছু না জানিয়ে বন্দর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে বন্দর উপজেলা যুবদলের মূল দাবিদার নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল হওয়ায় ঘোষণার মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যে স্থগিত করা হয় খোরশেদের সেই আহ্বায়ক কমিটি।
আর সেই থেকেই বন্দর উপজেলা নিয়ে জেলা ও মহানগর যুবদলের মধ্যে একটা ঠান্ডা লড়াই চলছিলো। অবশেষে ২৩ জুলাই সে লড়াইয়ের অবসান করে দিয়েছেন যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন থেকে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বন্দর উপজেলা যুবদল নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে কেন্দ্রীয় যুবদলের প্যাডে সহ দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত নির্দেশনা পত্র নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবদলের কাছে পাঠানো হয়েছে। আর এর ফলে বন্দর উপজেলা নিয়ে চলমান লড়াইয়ে পরাজয় ঘটলো নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৬ এপ্রিল নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও শাহাদুল্লাহ মুকুলকে সদস্য সচিব করে ৯০ দিনের জন্য বন্দর উপজেলা যুবদলের ১৯ সদস্যের আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সাধারন সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মন্তু। আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক পদে ছিলেন পারভেজ খান, সদস্য- মনিরুল ইসলাম মনু, মোঃ রুবেল মিয়া, বাবুল হোসেন মেম্বার, মোঃ আঃ সাত্তার, মোঃ মামুন ভূইয়া, মোঃ জাহিদ খন্দকার, আল-মামুন প্রধান, মোঃ নুর হোসেন, গোলজার হোসেন ভূইয়া, মোঃ আসাবুদ্দিন, মোঃ শিপন মাহমুদ, মোঃ বর জাহান, সেলিম খন্দকার, কামরুল ইসলাম, জহিরুল খন্দকার জনি, সম্রাাট হাসান সুজন।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদলের রাজনীতিকে আরো সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে জেলা ছাত্রদলের আওতাধীন ৭টি ইউনিয়ন এলাকা এখন মহানগর ছাত্রদলের নিয়ন্ত্রণে। যদিও এর আগে সীমানা সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল এই সংগঠনেও। সেই জটিলতা নিরসন করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। বন্দর থানাধীন ৫টি ইউনিয়ন ও সদর মডেল থানাধীন আরো দুটি ইউনিয়নে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করবে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ ও সেক্রেটারি মমিনুর রহমান বাবু।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক মোল্লা মহানগর ছাত্রদলকে এক চিঠির মাধ্যমে জানান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক কাজে গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছাত্রদল নারায়ণগঞ্জ জেলার অধীন বন্দর থানার ধামগড়, মদনপুর, মুসাপুর, কলাগাছিয়া ও বন্দর ইউনিয়ন ইউনিট সমূহ মহানগর ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
ওইদিন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সেক্রেটারি ইকবাল হোসেন শ্যামল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানানো হয় এবং এদিন থেকেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ ওই সময় বলেছিলেন, ছাত্রদল স্বতন্ত্র সংগঠন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্দেশ মেনে আন্দোলন সংগ্রাম এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবো।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি বলেছিলেন, যেহেতু এই সিদ্ধান্ত দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের। তাই এ বিষয়ে আপত্তি করার কোন কারন নেই। দলকে গতিশীল করতে দলের সকল সিদ্ধান্ত আমরা মেনেই চলবো।
তবে অন্যদিকে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগীরর বাহিরে সদর মডেল থানাধীন গোগনগর ও আলীরটেক ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে জেলা ছাত্রদলের কোন আপত্তি ছিল না। কারন অনেক আগে থেকেই এই দুটি ইউনিয়ন মহানগর নিয়ন্ত্রন করে আসছিল। কিন্তু জেলার আওতাধীন বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন জেলা ছাত্রদল ছাড়তে চায়নি। ইতিপূর্বে ওই ৫টি ইউনিয়ন এলাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের শীর্ষ দুই নেতা পরিদর্শন করেছিলেন। ওই দুই নেতা জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই ইউনিয়নগুলোতে জেলা নাকি মহানগরীর নেতাকর্মী বেশি রয়েছে সেটা যাচাই বাছাই করেই কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এই সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেল।