সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
‘স্বামী কেন আসামী’ সিনেমা দিয়ে আমি পরিচিতি পেয়েছি। সিনেমাটি কোরবানির ঈদে মুক্তি পেয়েছিল। আমি সেদিন দেরি করে নামাজ পড়েছিলাম। নামাজ পড়ে বের হয়েছি তখন দুলাভাই ফোন করে বলল- কিরে! তুই তো স্টার হয়ে গেলি।
আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, ‘স্বামী কেন আসামী’ দেখার জন্য সিনেমা হলের ভেতরে যত মানুষ, বাইরে তার দ্বিগুণ অপেক্ষা করছে! মনে পড়ছে সেইসব দিনের কথা। আমাদের এমন অনেক সিনেমা হয়েছে যেগুলো ২৯ সপ্তাহ ধরে সিনেমা হলে চলেছে।
এখন ঈদের সময় অজুহাত দেখিয়ে বলে- ঈদ করতে মানুষ ঢাকার বাইরে চলে গেছে। তাই দর্শক কম! তখন ঈদে শতকরা ৯০ ভাগ সিনেমার প্রথম দিন থেকেই দর্শক টিকেট পেত না। তখন সিনেমা হলে ক্রাউড ছিল। এফডিসি, কাকরাইল পাড়ায় ভিড় লেগে থাকতো। সবাই ব্যস্ত। ঈদের চার-পাঁচদিন আগেই পেমেন্ট নিতাম। আমার পেমেন্ট ছিল ২০-২৫ হাজার টাকা। একবার ঈদে পেমেন্ট পেলাম ৯৫ হাজার টাকা। এরপর পাঁচ লাখ টাকাও পেয়েছি কিন্তু ঐ ৯৫ হাজার টাকার আনন্দ আজও ভুলতে পারি না। তখন ফরিদী ভাই চার লাখ টাকাও পেমেন্ট পেয়েছেন!
আমি আগে সবাই মিলে ভাগে কোরবানি দিতাম। একবার ভালো পেমেন্ট পেয়ে নিজেই গরু কোরবানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ভাবনা অনুযায়ী গরু কিনতে হাটে গেলাম। গিয়ে আমি নিজেই ‘গরু’ হয়ে গেলাম! সবাই চিনে ফেলেছে। এক পর্যায়ে এতো ভিড় জমে গেল যে সামলানোই মুশকিল। গরু বিক্রেতাদের সমস্যা হচ্ছে। যারা ক্রেতা তারাও বিরক্ত হচ্ছেন। ফলে হাটের ইজারাদাররা আমাকে সরিয়ে নিয়ে গেল। বলল, আপনি স্টেজে বসে থাকুন। আমরা আপনাকে গরু দেখাচ্ছি। এরপর বাজেট শুনে কয়েকটা গরু আমার সামনে নিয়ে এলো। আমি ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনলাম।
জীবনের প্রথম নিজের টাকায় গরু কোরবানি দিচ্ছি। মনে হচ্ছিলো আমি কিছু একটা অর্জন করেছি। পুরান ঢাকার একজন ভালো কসাই ঠিক করলাম। কিন্তু তার খুব চাহিদা। বলল, আমার বাসায় আসতে তার দুপুর গড়িয়ে যাবে। আমি তাতেই রাজি। গরু বাসার নিচে বেঁধে রেখে অপেক্ষায় বসে আছি। সেখানে বিল্ডিংয়ের অন্যদেরও কয়েকটা গরু বাঁধা। সবাই সকাল থেকে কোরবানি দিচ্ছেন। কিন্তু কসাই আসার পর আমার গরু আর খুঁজে পেলাম না। মন খুব খারাপ হয়ে গেল। জীবনের প্রথম কোরবানি। আর গরুটাই হারিয়ে গেল! এদিক-ওদিক খুঁজি কোথাও নেই। বাসার নিচে তখনও একটি গরু বাঁধা ছিল।
গরুটা বেশ বড়। এদিকে বিল্ডিংয়ের সবাই জেনে গেছে আমার গরু হারিয়ে গেছে। সবাই বাসার নিচে জড়ো হলো। যেহেতু সবার কোরবানি দেওয়া হয়ে গেছে, ফলে তারা বলল, এই গরুটাই আমার। কিন্তু আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম এমন গরু আমি কিনিনি। তাদের বুঝিয়ে বললাম। কিন্তু সবাই বলল, যেহেতু সবার কোরবানি দেওয়া হয়ে গেছে, সুতরাং ধরে নিন এটাই আপনার গরু। হুজুরও বলল, অসুবিধা নেই।
আল্লাহর নাম নিয়ে গরু কোরবানি দিলাম। সত্যি কথা বলতে, গরু কাটা দেখলে আমার ভয় লাগে! তারপরও কোরবানি তো দিতেই হবে। গরু কাটার পর অনেক মাংস হলো। পরে প্রতিবেশী একজন বলল, তাদের গরুর মাংস কম হয়েছে। তারাই ভুল করে আমার গরু কোরবানি দিয়ে ফেলেছে।
সূত্র: রাইজিং বিডি