সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ ও ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে মশিউর রহমানকে ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বরাবর আবেদন করেছেন জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের বেশকজন নেতা। সেই আবেদনে মশিউর রহমান রনির বিরুদ্ধে কমিটি গঠনের নামে অর্থ আদায় সহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ তোলা হয়। তাকে আওয়ামীলীগের এজেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা মারধরের অভিযোগও তোলা হয়।
তবে রনির বিরুদ্ধে যে ৮ জন নেতা অভিযোগ করেছেন তাদের মধ্যে দুএকজন বাদে বাকিরা কেউই রাজনীতিতে সচল ছিলেন না। জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের রাজনীতিতে যাদের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ মুলত তারাই রনির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে। রনির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি মিডিয়াতে প্রকাশিত হওয়ার পর খোদ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন- অতীতে সক্রিয রাজনীতিতে অভিযোগকারীদের ভুমিকা কি? কমিটি না হওয়ার ব্যর্থতা রনির একার নয়। এই ব্যর্থতা কমিটির পদে থাকা সকলের। তাহলে ছাত্রদল থেকে সকলকে অব্যাহতি দেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। মশিউর রহমান রনির কাছে জানতে চাইলে অভিযোগকারীর একজনের নাম বললে সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন- অভিযোগকারীদের তো রাজনীতিতে দেখিইনা। তাদের ভুমিকা রাজনীতিতে কতটুকু ছিল?
জানাগেছে, মশিউর রহমান রনির অব্যাহতি চেয়ে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবু, সিনিয়র সহ-সভাপতি রাফিউদ্দীন রিয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মাগফুর ইসলাম পাপন এবং জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, রাকিব হাসান রাজ, নাজমুুল হাসান বাবু, মেহেদী হাসান, সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান মানিক।
এদের মধ্যে রাফিউদ্দীন রিয়াদ ও শেখ মাগফুর ইসলাম পাপনকে মহানগর ছাত্রদলের কমিটি গঠনের কোন দ্এুকটি কর্মসূচিতেও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন নেতাকর্মীরা। যার মধ্যে রাফিউদ্দীন রিয়াদ কমিটিতে পদ পাওয়ার পর তিনি রাজনীতি করেছেন আড়াইহাজার গিয়ে। পাপনের ছায়াও দেখা যায়নি রাজপথের আন্দোলনে মিটিং মিছিলে। সেক্রেটারি বাবু কিছুটা সক্রিয় থাকলেও তিনি গ্রুপিংয়ের কারনে ওই অভিযোগে স্বাক্ষর করতে পারেন বলে কর্মীদের দাবি।
এ ছাড়াও জেলা ছাত্রদলের যে ৫ জন অভিযোগ করেছেন তাদের মধ্যে মাঝে সাজে বিএনপির কর্মসূচিতে দেখা যায় রফিকুল ইসলাম রফিক ও রাকিব হাসান রাজকে। তাও তারা দুজন জেলা ছাত্রদলের কোন কর্মসূচিতে ছিলেন না। তারা তাদের অনুগামী নেতাদের কর্মসূচিতে বেশি সক্রিয় ছিলেন না। জেলা বিএনপির কর্মকান্ডেও কিছুটা এই দুজনকে দেখা গেলেও বাকি ৩ জন মেহেদী হাসান, বাবু ও মানিকের ছায়াও দেখা যায়নি বিএনপির কিংবা জেলা ছাত্রদলের রাজপথের আন্দোলনে। যার ফলে এসব নেতাদের অভিযোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় তারা রনিকে চাপা ফেলে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন। যেখানে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন সেক্রেটাাির খায়রুল ইসলাম সজীব। এমনটাই অভিযোগ মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের।
এদিকে জানাগেছে, গত ২৩ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তরে এই আবেদনপত্র জমা দেয়া হলেও তা ১০ আগস্ট রবিবার মিডিয়াতে প্রকাশ করেন ছাত্রদলের নেতারা। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর এই আবেদন করা হয়।
আবেদনে উল্ল্যেখ করা হয়- গত ২০১৮ সালের ৫ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটির অনুমোদন করা হয় যা চলতি বছরের একই তারিখে দুই বছর মেয়াদ পূর্ণ করেছে। কেন্দ্র ঘোষিত ছাত্রদলের সকল কর্মসূচি পালনে মশিউর রহমান রনিকে সহযোগীতা করেছেন আবেদনকারী। কিন্তু রনির কাছ থেকে কোন ধরণের সহযোগীতা করেননি এবং অসাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যে কারনে জেলার থানা/পৌর/কলেজ কমিটিগুলো গঠন করা সম্ভব হয়নি।
তারা আবেদনে আরও দাবি করেন- ছাত্রদলের কমিটি গঠনের জন্য বলা হলে রনি তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টা করেন। সে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্ব পাওয়ার পর তার অসাংগঠনিক কার্যক্রম আরো বেড়ে যায়। সে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের পদ পদবীর লোভ দেখিয়ে অর্থ আদায় করছে। জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আওতাধীন প্রতিটি ইউনিটে কমিটি গঠনে রনি বাধা সৃষ্টি করায় কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়।
আবেদনে আরো অভিযোগ তোলা হয়- মশিউর রহমান রনি একজন আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তার আপন মামাতো ভাই হাবিবুর রহমান রিয়াদ প্রধান নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও আরেক মামাতো ভাই আশরাফুল ইসমাঈল রাফেল প্রধান জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তার মামা মতিউর রহমান প্রধান ফতুল্লা থানাধীন এনায়েতনগর ইউনিয়নের বৃহত্তর ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি। রনি ছোটবেলা থেকেই এই মামার বাসায় বড় হয়েছেন এবং এখনও এই মামার বাসায় বসবাস করছেন। রনির বাড়ি রূপগঞ্জে হলেও তিনি সেখানে থাকেন না।
আরও অভিযোগ করা হয়- মশিউর রহমান রনির আপন মামাতো ভাই মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ প্রধান ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসমাঈল রাফেল প্রধানকে দিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সময় হামলা নির্যাতন করা হয়েছে। সেই ভয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা রনির অসাংগঠনিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায়না। যেই তার বিরুদ্ধে কথা বলেছে সেই হামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
আরও অভিযোগ করা হয়- আওয়ামীলীগ এজেন্ট মশিউর রহমান রনি আজ ছাত্রদলের সকল ইউনিটকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। তাই ছাত্রদলের ভবিষৎ চিন্তা করে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলকে দালালদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ থেকে ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে অব্যাহতির দাবি জানাচ্ছি।
তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রদল সভাপতি মশিউর রহমান রনি বলেন, গত ২৩ জুলাই কেউ যদি কেন্দ্রে কোন আবেদন করে থাকে তাহলে সেটা তো আমার হাতে আসার কথা। আমি তো এখনও এমন কিছু পাইনি। আর যেহেতু পাইনি সেখানে তারা কি লিখেছে দেখিনি তাই এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্যও নাই।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদল নেতাদের ওই আবেদনের বিষয়ে জানতে মহানগর ছাত্রদল সভাপতি সাহেদ আহমেদকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।