সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
১ সেপ্টেম্বর গেল বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। নারায়ণগঞ্জের প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিএনপির বিভিন্ন বলয়ের নেতাদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। একইভাবে রূপগঞ্জেও পালিত হয়। কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে তখনি যখন গত জুন মাসে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়ার জন্মদিন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলেরা সপ্তাহব্যাপী উদযাপন করলেও বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীই পালন করেননি তারা! বিশেষ করে জেলা যুবদলের নেতাকর্মীরা দিপু ভুঁইয়ার জন্মদিন পালনে ছিলেন অগ্রগামী। যে কারনে নেতাকর্মীরা বলছেন- এসব কর্মীদের কাছে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর চেয়ে দিপু ভুঁইয়ার জন্মদিনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জানাগেছে, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার তার শহরের মাসদাইরের বাসভবনে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা করেছেন দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে। রূপগঞ্জেও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি নাসির উদ্দীন নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছেন। কিন্তু জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছিলেন না।
গত জুন মাসে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়ার জন্মদিন পালন করেছিলেন জেলা যুবদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। একইভাবে রূপগঞ্জের ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরাও দিপু ভুঁইয়ার জন্মদিন পালন করেছিলেন। কিন্তু ওই জন্মদিনের সপ্তাহখানিক আগেই ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী। দুএকটি দোয়া মাহফিল করলেও যেভাবে দিপু ভুঁইয়ার জন্মদিন যুবদল নেতারা পালন করেছিলেন সেভাবে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী পালনেও দেখা যায়নি। তার উপর ওই সময় ছিল মহামারি করোনার ব্যাপক প্রভাব। দিপু ভুঁইয়ার সঙ্গে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের জন্মদিন পালনেও ছিল যুবদল নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসব।
নেতাকর্মীদের সূত্রে এখানে আরও উল্লেখ্যযে, দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে ছিলেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত একটি কর্মসূচিতেও জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত শহরের কর্মসূচিতে ছিলেন না দিপু ভূঁইয়া। রূপগঞ্জেও দু’একবার দেখা যায়নি। অথচ তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য রয়েছেন ও জেলা বিএনপির সদস্য পদেও ছিলেন।
গত ৩০ মে তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী পালনেও তাদের এতটা কর্মকান্ড চোখে পড়েনি। বনে জঙ্গলে যে যেখানে পেড়েছেন জন্¥দিনের কেক কেটে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে চলছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্টীকার বানিয়ে পোস্ট করে জন্মদিনের শুভেচ্ছার ঝড় তুফান। দলের প্রতিষ্ঠাতার শাহাদাতবার্ষিকীর চেয়েও যুবদলের নেতাকর্মীদের কাছে স্থানীয় নেতাই হয়ে ওঠেছিলেন সর্বেসেরা।
বিএনপিরই বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরাই বলছেন- তখন ছিল করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। এ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দুই বিএনপি নেতা জন্মদিন পালনের উল্লাসে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় সচেতন মহলে। প্রতি বছরের মত এবার এই দূর্যোগের মুহুর্তে জন্মদিনের উৎসব পালন করা কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল সে প্রশ্ন খোদ বিএনপি নেতাকর্মীদের কন্ঠে।
জানা যায়, গত ৬ জুন ছিল রূপগঞ্জ বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপুর জন্মদিন আর গত ৯ জুন ছিল দিপু ভুঁইয়ার ঘনিষ্ঠ কর্মী জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের জন্মদিন। দেশের সেই সময় চরম ক্রান্তিকালে এ দুই বিএনপি নেতার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে উল্লাসে মেতে উঠেছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন স্থানে কেক কেটে আনন্দ উৎসব করে তারা পালন করে এ দুই নেতার জন্মদিন। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও পালনের ছবি আপলোডের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় তখন। যুবদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে রূপগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগেও এমন উৎসব পালন করা হয়েছিল।
দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন না করার বিষয়ে বিষয়ে জানতে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যুবদল ছাত্রদল সহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছেন।
তবে ২০১৫ সালের একটি ঘটনা টেনে এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ্য দাবি করে তিনি বলেন, এর আগেরবার আমাদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে আমার ও দিপু ভাইয়ের গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছিল। বাড়িঘরও ভাংচুর করা হয়েছিল। এবারও সে রকম তথ্য আমাদের কাছে ছিল। এ কারনে থানা পুুলিশের বাধার কারনে আমরা সে রকমভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে পারিনি।
এ কারনেই মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া ও গোলাম ফারুক খোকন বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেননি বলে দাবি করেছেন তিনি। তবে জন্মদিন পালনের হিড়িক থাকলেও অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকায় তারা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেননি সেই বিষয়টি কতটা যুক্তিসংগত সেটা অনুুমেয়। আবার একই সঙ্গে যেসব নেতাকর্মীরা তাদের দুজনের জন্মদিন পালন করেছিলেন সেইসব কর্মীদেরও সে রকমভাবে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে দেখা গেল না।