সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
অঢেল টাকার মালিক জাতীয়পার্টিতে যোগদানকারী এক সময়কার জিয়া পরিষদ সোনারগাঁও থানা শাখার কর্মী রমজান আলী রাজুকে বসানো হয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের মঞ্চের তৃতীয় চেয়ারে! এর আগে বিশেষ সুবিধা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিএনপির বিভিন্ন নেতার দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি তাকে মিটিং মিছিলে রাখার জন্য। কিন্তু কেউ তাকে রাখতে চায়নি। কিন্তু লুফে নিলেন তৈমূর আলম। প্রশ্ন তাহলে কি সেই বিশেষ সুবিধায় সরাসরি মঞ্চের তৃতীয় চেয়ারে? আরও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- তাহলে তৈমূর আলম খন্দকার আবারো জেলা বিএনপির সভাপতি হলে কি অঢেল টাকার মালিক কর্মীরাই বসবেন তার পাশের চেয়ারে? তারাই কি হবেন নেতা?
সবে মাত্র নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় মিডিয়াতে আওয়াজ ওঠেছে জেলা বিএনপির সভাপতি পদে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। এমন আওয়াজে তৈমূর আলম খন্দকারও মাঠ গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে তিনি এবারও পূর্বের মত ভুল করছেন। তিনি দীর্ঘদিন ৭টি বছর জেলা বিএনপির সভাপতি পদে থাকলেও দলের মধ্যে চেইন অব কমান্ড ধরে রাখতে পারেননি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কয়েকশ সিনিয়র নেতাদের অবজ্ঞা করে একজন বিতর্কিত জাতীয়পার্টিতে যোগদানকারী কর্মীকে বসিয়েছেন তার মঞ্চের তৃতীয় চেয়ারে। এমন ঘটনায় সিনিয়র নেতাদের অপমান করা হয়েছে বলে মনে করছেন সিনিয়র নেতারা।
তৈমূর আলম খন্দকারের কথায় ও কাজের মিল পাওয়া গেল না। নারায়ণগঞ্জের বেশকটি মিটিংয়ে তিনি বলেছিলেন- নারায়ণগঞ্জে জাতীয়পার্টি ও আওয়ামীলীগের রাজনীতিও করা যায়। আবার বিএনপির কমিটিতে থেকেও জাতীয়পার্টি ও আওয়ামীলীগের রাজনীতি করা হয়। এমন বক্তব্য দিয়ে তিনি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। কিন্তু সেই তিনিই এবার জাতীয়পার্টিতে যোগদানকারী কর্মীকে নিয়ে মিটিং তো করেছেনই বরং সেই কর্মীকে সরাসরি তার মঞ্চে তুলে তৃতীয় চেয়ারে বসতে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, জিয়া পরিষদ নামের একটি ভুইফোড় সংগঠনের সোনারগাঁও শাখার নেতা ছিলেন রমজান আলী রাজু। বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবেনা এমন শঙ্কা দেখে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয়পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে জাতীয়পার্টিতে যোগদান করেন রমজান আলী রাজু। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নারী ঘটিত সহ নানান বিতর্কিত কর্মকান্ডের ঘটনা।
জাতীয়পার্টিতে ভাল স্থান না পেয়ে আবারো বিএনপিতে ফেরার চেষ্টা করছিলেন রাজু। জেলা যুবদলের বেশকজন নেতাকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ম্যানেজ করে সোনারগাঁয়ে যুবদলের কমিটিতে আসতে চেয়েছিলেন তিনি। একইভাবে আজহারুল ইসলাম মান্নান সহ বিএনপির বেশকজন সিনিয়র নেতার দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিএনপিতে জায়গা করে নিতে। অনেকে বলেছেন- বিশেষ সুবিধা নিয়ে নেতাদের পেছন পেছন ঘুরেছিলেন রাজুু। কিন্তু কেউ তাকে নিয়ে বিতর্কিত হতে চাননি।
কিন্তু তৈমূর আলম খন্দকার তাকে লুফে নিয়েছেন বটে। এমন কর্মী যখন তৈমূর আলমের মঞ্চের তৃতীয় বসতে দেখা যায় তখন তৈমূর আলম খন্দকারের কি কর্মীর সংকট তৈরি হলো কিনা প্রশ্ন থেকে যায়। যদিও ওই অনুষ্ঠানে সিনিয়র প্রবীণ কযেকশ নেতাই উপস্থিত ছিলেন। উল্টো কয়েকশ সিনিয়র নেতাদের মঞ্চের বাহিরে রেখে রাজুকে বসতে দিয়েছেন মঞ্চের তৃতীয় চেয়ারে! যেখানে মঞ্চের দর্শক সারিতে ছিলেন সিনিয়র নেতারা। অথচ এই রাজুর অতীতে কিংবা বর্তমানেও দলের মধ্যে কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ ছিল না। কিন্তু দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার সঙ্গে তৃতীয় চেয়ারে এমন ব্যক্তিকে বসানো নিয়ে রহস্য দেখছেন সিনিয়র নেতারা।
জানাগেছে, ১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মাসদাইরে তৈমূর আলম খন্দকারের বাসায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার মনিরুল ইসলামের সভাপতিতেও ওই অনুষ্ঠানে কয়েকশ সিনিয়র নেতাই উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি নেতা হাজী মোহাম্মদ শাহিন ও সুরুজ্জামানের মত সিনিয়র নেতাদেরও মঞ্চে ঠাই হয়নি। অথচ রাজুকে সেখানে বসানো হয়েছে।
যদিও বিতর্কিত এই কর্মীকে সেখানে বসিয়ে নেতা বানানোর কারন হিসেবে কেউ কেউ বলছেন বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে এমনটা করা হয়েছে। কারন রাজু বিশেষ সুবিধা নিয়ে দীর্ঘদিন বিভিন্ন নেতার পেছনে ঘুরছিলেন তাকে ফের বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার জন্য। কিন্তু কেউ নেয়নি। অনেক নেতাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রাজু সহযোগীতা করবেন, যার বিনিময়ে তাকে বিএনপিতে রাখা হোক। অবশেষে ঠাই পেয়েছেন সরাসরি তৈমূর আলমের মঞ্চে তারই পাশের চেয়ারে।