সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে রেখে জেলা কমিটির জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপিতে একটি খসড়া কমিটি জমা দেয়া হয়েছে। এমন খবর মিডিয়াতে প্রকাশিত হওয়ার পর চরম ক্ষেপেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। কারন আসনভিত্তিক রাজনীতিতে গিয়াসউদ্দীন হলেন শাহআলমের চিরপ্রতিদ্বন্ধি। আর সেই গিয়াসকে নিয়ে এবার মাঠে নেমেছেন তৈমূর আলম। ফলে কমিটি গঠনে এখন তৈমূর আলমের বাধা শাহআলম। বিভিন্ন সূত্র থেকে এমনটাই জানাগেল।
জানাগেছে, ২০০১ সালে তৈমূর আলম খন্দকারের আপন ছোট ভাই সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় গিয়াসউদ্দীনকে আসামি করেছিলেন তৈমূর আলম। ওই সময় সভা সমাবেশে গিয়াসকে ‘খুনি’ আখ্যায়িত করতেন তৈমূর। ওই মামলার চার্জশিট থেকে গিয়াসউদ্দীনকে অব্যাহত দেয় তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরবর্তীতে চার্জশিটের বিরুদ্ধে না রাজি দেন তৈমূর। ২০১১ সালের নির্বাচনে তৈমূরের পক্ষে নির্বাচনে নামাতে সমঝোতায় চার্জশিটের বিরুদ্ধে না রাজি প্রত্যাহার করে নেন তৈমূর। এখন তৈমূর আলমের রাজনীতিতে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন গিয়াস!
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদে বেশ জোড়ালো আলোচনায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। এমন আলোচনার পর তিনিও মাঠ গুছানোর চেষ্টায় নেমেছিলেন। কিন্তু তার প্রতি চরম ক্ষুব্দ হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। মুলত ফতুল্লা থানা বিএনপির যেসব নেতাকর্মী বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনের অনুগামী সেইসব নেতাকর্মীদের নিয়ে মিটিং করায় তৈমূর আলমের উপর ক্ষেপেছিলেন শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। এবার গিয়াসকে নিয়ে কমিটি জমা দেয়ার বিষয়ে আরো ক্ষেপেছেন শাহআলম। যে কারনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদে তৈমূর আলম খন্দকারের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে মুহাম্মদ শাহআলম।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর এলাকায় বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করেন তৈমূর আলম খন্দকার। যেখানে ফতুল্লা থানা বিএনপির মুলধারার নেতাদের বাহিরে গিয়াসউদ্দীনের অনুগামী নেতাদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতই। শাহআলম অনুগামীও বেশকজনকে ওই অনুষ্ঠানে দেখা যায়। মুলত এর আগে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে একই স্থানে প্রস্তুতি সভা করা হয়। দুটি অনুষ্ঠানেই মনিরুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। অধ্যাপক মনির গিয়াসউদ্দীন অনুগামী এবং শাহআলম বিরোধী।
ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস সহ আহ্বায়ক কমিটির নেতারা ছিলেন না। গিয়াসউদ্দীন এমপি থাকাকালীন সময়ে অনেকটা ম্যাকিং করেই মনিরুল ইসলামকে সভাপতি ও মনিরুল আলম সেন্টুকে থানা বিএনপির সেক্রেটারি করেছিলেন। ২০১২ সালের দিকে মেরী এন্ডারশনে তৎকালীন থানা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ শাহআলম ও সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে ফতুল্লায় নতুন করে রাজনীতি করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মনিরুল ইসলাম ও মনিরুল আলম সেন্টু। তারা দীর্ঘদিন ফতুল্লা থানা বিএনপির নেতৃত্বে না থাকলেও বিএনপির ঘাটি খ্যাত ফতুল্লা থানায় বিএনপির কমিটির বাহিরে একটি বলয় রয়েছে যারা গিয়াসউদ্দীনের অনুগামী। সেই গিয়াসের অনুগামীদের নিয়ে মিটিং করেছেন তৈমূর আলম খন্দকার।
এ বিষয়ে জানাগেছে, তৈমূর আলম খন্দকারের দুটি মিটিংয়ে বেশকজন ফতুল্লা থানা বিএনপির মুল কমিটির নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। ওইসব নেতাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে মুহাম্মদ শাহআলম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদেরকে ওই সময় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- শাহআলমের অনুগামী ফতুল্লা থানা বিএনপির বর্তমান কমিটিকে মাইনাস করার চেষ্টায় নেমে তৈমূর আলম খন্দকার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হতে পারবেন না। শাহআলমের দাবি কমিটির নেতৃত্বে আসতে হলে শাহআলমের সঙ্গে আগে মিটিং করতে হবে।
মুলত নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন ও শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। গত নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন দুজন। জোট দল জমিয়তের প্রার্থী দেয়া হয় এখানে। ২০০১ সালের নির্বাচনে এখানে এমপি হয়েছিলেন গিয়াসউদ্দীন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শুধু ফতুল্লা নিয়ে আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন শাহআলম। যে কারনে গিয়াসউদ্দীনই এখানে মুহাম্মদ শাহআলমের মুল প্রতিদ্বন্ধি। গত নির্বাচনের পর স্থানীয় বিএনপির নেতৃত্ব ছেড়ে দেন শাহআলম। তবে অনেকটা রাতের আধারেই তার লোকজনদের দিয়ে ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন করিয়ে নেন শাহআলম। শাহআলম এখনও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদে বহাল রয়েছেন। ফলে তৈমূর আলম খন্দকার কমিটি পাওয়ার আগেই যখন শাহআলমের অনুগামী থানা বিএনপির কমিটিকে পাস কাটিয়ে গিয়াসউদ্দীনের লোকজন নিয়ে মিটিং করেছেন এখন গিয়াসকে নিয়ে কমিটি জমা দেয়ায় স্বভাবতই শাহআলম ক্ষুব্দ হওয়ার কথা।