সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুুল আলম খন্দকার খোরশেদের কর্মকান্ডের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও মহানগর যুবদলের শীর্ষ নেতারা। একই অনুষ্ঠানে মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন মন্তুর কর্মকান্ডের কঠোর সমালোচনা করেছেন তারা। সেই সঙ্গে হুশিয়ারি দিয়েছেন ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধেও।
নেতারা বলেছেন, মহানগর বিএনপির কিছু অংশের নেতাদের কুটকৌশলে মমতাজ উদ্দীন মন্তুকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এও বলেছেন, যদি বিবেদ মিটমাট নাও হয় তাহলেও অযোগ্য ও আওয়ামীলীগের দালালদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের কমিটিতে রাখা হবে না।
১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আওতাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের উদ্যোগে সিদ্ধিরগঞ্জের ৮নং ওয়ার্ডের এনায়েতনগর এলাকায় যুবদলের নেতাদের তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণী অনুষ্ঠানে নেতারা এসব কথা বলেছেন।
নেতারা দাবি করেছেন- মহানগর যুবদলের সভাপতি হিসেবে খোরশেদ করোনায় মানবতা দেখিয়ে যুবদলকেও বিশ্বের দরবারে নিয়ে গেছেন। অথচ সেই যুবদলে গুটি কয়েকজনকে নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন মন্তু।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের আয়োজনে প্রতিটি ওয়ার্ডের যুবদলের শীর্ষ নেতাদের হাতে তথ্য সংগ্রহ ফরম তুলে দেন মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রশিদুর রহমান রশু।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল প্রধানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ অপু।
মহানগর যুবদল নেতা মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি শেখ মোহাম্মদ অপু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, সাইফুদ্দীন মাহামুদ ফয়সাল ও থানা যুবদলের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামান হোসেন।
ফরম বিতরণের পূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের আওতাধীন ১০টি ওয়ার্ডের যুবদলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন অতিথিরা। ওই সময় ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারিদের মতামত গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে অতিথিরা বক্তব্য দেন।
এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন- মহানগর যুবদলের প্রচার সম্পাদক জাকির হোসেন মাসুদ, মহানগর যুবদল নেতা গাজী মাসুদ, ৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন, ১নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ইব্রাহীম, ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মইনুর রহমান, ৪নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি সোহেল মাহামুদ, ৭নং ওয়ার্ড যুবদলের জুয়েল, ৮নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি কাজী নূরে আলম সহ অন্যান্যরা।
তবে থানা যুবদলের সভাপতি ও মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন মন্তু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল রানা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রশিদুর রহমান রশু মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আজকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের উদ্যোগে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ। কিন্তু এই থানা কমিটির সভাপতি কি কারনে এই অনুষ্ঠানে আসলেন না সেটা বোধগম্য নয়। তিনি তার বাড়ির সামনের অনুষ্ঠানে না এসে অন্য থানায় গিয়ে কেন ফরম বিতরণ করেন সেটা আমার প্রশ্ন।
তিনি কমিটি গঠনের বিষয়ে বলেন, যখনই কমিটি গঠন শুরু হয় তখনই কালো থাবার প্রভাব পড়ে। ১৪ বছর বিএনপি ক্ষমতায় নাই। সামনে হয়তো সুসময় আসছে। তাই লুটেপুটে খাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হয়তো কেউ কেউ কমিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চান।
তিনি জানান, চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় যুবদলের প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর কমিটির খসড়া তৈরি করে তা কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়। কিন্তু করোনার কারনে কমিটি গঠন আটকে যায়। গত ১০ সেপ্টেম্বর মহানগর কমিটির সুপার ফাইভের সঙ্গে কেন্দ্রীয় যুবদলের মিটিং হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জের নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন নারায়ণগঞ্জে কোন সমস্যা আছে কিনা। সেদিন তারা কেন্দ্রকে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলে কোন বিশৃঙ্খলা নাই।
১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বাসায় ফরম বিতরণের বিষয়ে রশু বলেন, সেদিন সেক্রেটারির উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আর ফোনই রিসিভ করেননি। কি কারনে তিনি সেখানে গেলেন না জানতে পারলাম না। তিনি না যাওয়ার কারনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সেক্রেটারি জুয়েল প্রধানের হাতে তথ্য সংগ্রহ ফরম তুলে দেয়া হয়। অথচ ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দেখলাম তিনি বন্দরে গিয়ে ফরম বিতরণ করেছেন।
মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জরুল হক মুছার উপর হামলার বিষয়ে রশু বলেন, সেদিন মুুছার বিষয়ে কি ঘটনা ঘটেছে সেটা সভাপতি ও আমি সামনেই ছিলাম না। আমরা পরে এসে তাৎক্ষনিক মিটমাট করে দুজনকে রিক্সায় তুলে দিয়েছি। অথচ মিডিয়াতে সভাপতিকে দোষারোপ করা হলো।
রশিদুর রহমান রশু তার বক্তব্যের সময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সেক্রেটারি জুয়েল প্রধানকে বলেন, মহানগর বিএনপির একটি অংশের কুটকৌশলে পড়েছেন সভাপতি মন্তু। আপনি (জুয়েল প্রধান) তাকে বুঝান তিনি যেনো ভুল পথ থেকে ফিরে আসেন। তাকে ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। উনি (মন্তু) একজন সহজ সরল মানুষ। সভাপতি ও সেক্রেটারিকে নিয়ে আপনারা বসে কোন ভুল বুঝাবুঝি থাকলে মিটমাট করুন।
রশু বলেন, এমন বিবেদ দ্বন্ধ মিটমাট না হলেও কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাইলেই কমিটির নেতৃত্ব দেয়া হবে না। ত্যাগীদের মুল্যায়ন করা হবে এবং যারা নির্বাচনে কেন্দ্র পাহাড়া দিতে পারবেন তাদেরকেই পদে রাখা হবে।
প্রধান বক্তা শেখ মোহাম্মদ অপু বলেন, যারা রাজপথের কর্মী ত্যাগী পরীক্ষিত তাদেরকে নিয়েই কমিটি গঠন করা হবে। যারা রাজপথে ছিলেন না, যারা দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন তারা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন না। কারন তাদেরকে নিয়ে দলের কোন উপকার হবে না। সিদ্ধিরগঞ্জের কমিটিতে আশা করি ত্যাগী ও রাজপথের সক্রিয় নেতাকর্মীরা মূল্যায়ন পাবেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সেক্রেটারি জুয়েল প্রধান কঠোর সমালোচনা করে বলেন, মন্তু যুবদলের নেতাকর্মীদের কর্মচারী মনে করেন। যাকে তাকে গালিগালাজ করেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি অশোভন আচরণ করেন। উনার মত সভাপতি ও আমার মত সেক্রেটারি বিএনপি থেকে চলে গেলে দলের কোন ক্ষতি হবে না। কারন আমাদের মত কোটি কোটি নেতাকর্মী বিএনপিতে আছেন।
মুছার ঘটনার বিষয়ে জুয়েল প্রধান বলেন, মুছার সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনার সময় সভাপতি খোরশেদ ও রশু উপস্থিতই ছিলেন না। অথচ খোরশেদকে নিয়ে মিডিয়াতে বক্তব্য দেয়া হলো। খোরশেদ করোনাকালে যে মানবতা দেখিয়েছেন তা সারাবিশ্বে আলোচিত হয়েছে। তিনি মানবতার ফেরিওয়ালী, করোনার হিরো। অথচ তাকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। মানবিক কারনে তিনি ৬মাস কাজ করেছেন।
বন্দরে ফরম বিতরণের বিষয়ে সুপার ফাইভের তিন নেতার কঠোর সমালোচনা করে জুয়েল প্রধান বলেন, বন্দরে কতিপয় কিছু লোকজন নিয়ে সেখানে ফরম বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু যারা মুলধারার রাজনীতি করেন তারাই ছিলেন না। মন্তু যুবদলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন তিনি দলের শৃঙ্খলা ফিরাতে পারেন না। তিনি কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় না। তিনি ভয় পায়। কারন কি?
তিনি মন্তুকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, আমি ছাত্রদলের রাজনীতি করেছি। তারপর যুবদলের রাজনীতি করছি। রাজনীতিতে আমরা ভেসে আসিনি। তাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে সহজ পথে আসুুন। আপনাকে এখণও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের অভিভাবক হিসেবে মানি।
কমিটি গঠনের বিষয়ে জুয়েল প্রধান মন্তুর সমালোচনা করে বলেন, আমি থানা যুবদলের সেক্রেটারি। অথচ তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল রানাকে রেখে কেন্দ্রে খসড়া কমিটি জমা দেন। এটা বাতিল হওয়ার পর তিনি আবার মুছাকে আহ্বায়ক রেখে কেন্দ্রে কমিটি জমা দেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, মিডিয়াকে প্রভাবিত করে সভাপতি খোরশেদকে বিতর্কে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। মুছার উপর হামলার সময় সভাপতি খোরশেদ সেখানে ছিলেনই না। অথচ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হলো। দলে কিছু লোক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।
যুবদল নেতা আক্তার হোসেন বলেন, খোরশেদ মহানগর যুবদলের সভাপতি। তিনি দেশের সম্পদ। তিনি দেশবাসীর কাছে পরিচিত ব্যক্তি। তিনি মহানগর যুবদলকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। তিনি করোনার বীর, মানবতার ফেরিওয়ালা। অথচ তাকে নিয়ে সমালোচনার চেষ্টা করা হয়।