সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের সদস্যদের জন্যে সকলের মন থেকে আশির্বাদ করবেন যেনো তারা খুব দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠেন। ওসমান পরিবার হচ্ছে আমাদের রক্ষা কবচ। যে কোন দূর্যোগে এই পরিবার সব সময় আমাদের পাশে থেকেছে। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর থেকে সালমান রুশদির স্যাটানিক ভার্সেস পর্যন্ত এই পরিবার নারায়ণগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষা করে এসেছে।
বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধাণ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকাল দশটায় শহরের পুরাতন কোর্টস্থ জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বক্তব্যের শুরুতে খোকন সাহা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং কিছুদিন আগে প্রয়াত ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্মৃতিচারণ করেন।
খোকন সাহা আরও বলেন, ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মূখার্জি ছিলেন ভারতের প্রথম বাঙ্গালী রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ তার এক শুভাকাঙ্খিকে হারিয়েছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিটি প্রয়োজনে নি:স্বার্থভাবে পাশে থেকেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন প্রণব মূখার্জি। সে সময়ে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলো। তাদের নিরপত্তা এবং থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন এবং বিশ্ব জনমত গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে প্রনব মূখার্জির অবদান অনস্বীকার্য। মহান এই নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করছি এবং তার বিদেহী আত্মার শান্ত কামনা করছি। সেই সাথে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি বাংলাদেশের এই পরম বন্ধুর মৃত্যুতে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করায়। প্রনব মূখার্জির মৃত্যুতে প্রতিটি বাঙ্গালীর হৃদয়ে আজ রক্তক্ষরণ হচ্ছে। মহান এই নেতার প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী।
আওয়ামীলীগের এই নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি স্থানে হিন্দুদের সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। দেওভোগের ঐতিহ্যবাহী জিওস পুকুরের প্রকৃত মালিক লক্ষ্মিনারায়ণ আখড়া। এই পুকুরের টলটলে জলে এক সময় আমরা সাতার কেটেছি। কিন্তু সেই পুকুর আজ দখল হয়ে গেছে। ১৪ নাম্বার দলিল করে নারায়ণগঞ্জের একটি প্রভাবশালী পরিবারের লোকজন প্রায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যের এই সম্পত্তি দখল করে নিচ্ছে। তারা আবার আগামী নির্বাচনে ভোট প্রার্থনাও করবে। এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনারা কি করবেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শ্মশানের জায়গাও এখন চারভাগের একভাগে পরিনত হয়েছে, বাকী তিনভাগই দখল হয়ে গেছে। আমাদের শেষ বিদায়ের স্থান এই শ্মশানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এখন সিটি কর্পোরেশনের। তাহলে এই বেদখলের দায় দায়িত্ব কার উপরে যায় সেটা আপনারাই বিবেচনা করুন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, নারায়ণগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সুখে দু:খে দুটি সংগঠন সব সময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। এ দুটি সংগঠন হলো পূজা উদযাপণ পরিষদ এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। এখানে সংগঠন দুটি হলেও আমাদের কার্যক্রম সব সময় ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু আমাদের মাঝ থেকেই একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এই দুটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মাঝে বিভক্তির সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমি আজকের এই অনুষ্ঠান থেকে তাদেরকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলতে চাই, বিভক্তির চেষ্টা কেউ করলে তার ফল ভালো হবে না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই। ১৯৮৯ সালে অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে এই সংগঠন দাড় করিয়েছিলাম। ১৯৯৩ সালে প্রথম নারায়ণগঞ্জে সম্মেলন আয়োজন করা হয়, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সদ্য প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সিআর দত্ত সে সম্মেলনের প্রধাণ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আমাদেরকে সে সময় এই সংগঠন পরিচালনা করতে অনেক বাঁধার মুখোমখি হতে হয়েছিলো, প্রশাসনও আচরণও নেগেটিভ ছিলো। শত বাঁধার পাহাড় পার হয়ে এই সংগঠনকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে আসতে পেরেছি। তাই যারা আগামী দিনে এই সংগঠনের নেতৃত্বে আসবে তাদের মনে রাখতে হবে, এই সংগঠন করতে হলে জনসেবার মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। কেউ যদি মনে করেন এই সংগঠন করে টাকা রোজগার করবেন, তাহলে তার এখান থেকে দুরে থাকাই ভালো।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র গীতা পাঠ, বাইবেল ও ত্রিপিটক করা হয়। পরে শোক প্রস্তাবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি প্রয়াত সভাপতি মেজর জেনারেল সিআর দত্তসহ প্রয়াত সকল নেতাকর্মীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এসময়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমানের সহধর্মিণী সালমা ওসমান লিপি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক প্রয়াত সাংসদ একেএম নাসিম ওসমানের সহধর্মিণী পারভীন ওসমান সহ ওসমানের পরিবারের সকল সদস্য এবং জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি কমান্ডার গোপিনাথ দাসের রোগ মুক্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা যুব ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনন্দ সেরাওগী সুমনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ভজন দাস ও মহানগরের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট অঞ্জন দাসের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, সম্মানিত অতিথি নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাস, উদ্বোধক বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পস্কজ কুমার সাহা, রাহুল বড়ুয়া, প্রধান বক্তা সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাপন কান্তি বল, বিশেষ অতিথিবৃন্দ নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য পিন্টু পলিকাপ পিউরিফিকেশন, মহানগরের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুণ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম সাহা, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত মন্ডল, যুব ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বলরাম বাহাদুর প্রমূখ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে জেলা যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিসেবে আনন্দ সেরওয়াগী সুমন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ভজন দাস নির্বাচিত হন। মহানগর যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট অঞ্জন দাস এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রিপন কর্মকার নির্বাচিত করা হয়।