সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশি বেশক’জন নেতা নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। যাদের মধ্যে অন্যতম উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান। আওয়ামীলীগের সমর্থনে একবার নির্বাচন করলেও আওয়ামীলীগের বিরোধের কারনে জয়ের দ্বারে কাছে গিয়েও হয়েছেন পরাজিত। পরেরবার তিনি দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে মনোনয়নই পাননি। বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে রাজপথের এই ত্যাগী নেতা এবারও তার মনোনয়ন অনিশ্চয়তায় ফেলেছেন নিজেই। বিএনপি জামাতের আমলে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। রাজপথে ছিল তার কঠোর ভুমিকা। কিন্তু আওয়ামীলীগ ক্ষমতার ১৪ বছরেও তার ভাগ্যে জুটেনি মুল্যায়ণ।
জানাগেছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পৌর টিপুরদি এলাকায় আওয়ামীলীগ যুবলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি কর্মীসভা করেন গাজী মজিবুর রহমান। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। ওই অনুষ্ঠানের পর স্থানীয় মিডিয়া ও জাতীয় মিডিয়াতেও খবর প্রকাশিত হয় ওই অনুষ্ঠানে পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে গাজী মজিবুর রহমানকে সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু পরদিন রাতেই কায়সার হাসনাত বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন এবং বলেছেন দলীয় প্রধানের মনোনিত প্রার্থীই হবে কায়সার হাসনাতের প্রার্থী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন- এমন খবরটি সত্য কিংবা মিথ্যা যাই হোক ওই কর্মীসভাটিই গাজী মজিবুর রহমানের মনোনয়নের জন্য বড় বাধা হয়ে দাড়াতে পারে। কারন গাজী মজিবুর রহমানকে কায়সার হাসনাত সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন বিষয়টি জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ সত্য বলে ধরেই নিয়েছেন। কারন ওই কর্মীসভাটিই প্রমাণ করে দেয় গাজী মজিবুর রহমানের প্রতি কায়সার হাসনাতের সুদৃষ্টি রয়েছে। পরে তিনি সমর্থনের বিষয়টি অস্বীকার বা মিথ্যা দাবি করলেও তা ধপে টিকছেনা।
জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের অনেকের সঙ্গে আলোচনা করে জানাগেছে, সোনারগাঁও পৌর নির্বাচনে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়েন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান। এমপি শামীম ওসমানের কলকাঠি নিয়েই নাড়ানাড়া করেন সোনারগাঁয়ের স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। মুলত খোকার সুবিধার্থে পৌরসভাটি নিয়ে শামীম ওসমানের দৃষ্টি থাকে। এই দুই এমপির সমর্থনের বাহিরে গিয়েও নৌকা প্রতীকে এনেও জয়ী হতে পারেননি গত নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী।
কায়সার হাসনাত মুলত জেলা পর্যায়ে জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর বলয়ে রাজনীতি করেন। মেয়র আইভী শামীম ওসমানের রাজনৈতিক চিরপ্রতিদ্বন্ধি। ফলে কায়সার হাসনাতের সমর্থন নিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে গাজী মজিবুর রহমান মাঠে নামলেও গত নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী ফজলে রাব্বীর পরিনতি তাকেও ভোগ করতে হতে পারে।
এদিকে গত নির্বাচনে এমপি শামীম ওসমান ও এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর মধ্যে রাজনৈতিকভাবে নির্বাচনের পূর্বেই মনোনয়ন যুদ্ধ চলে ভেতরগতভাবে। কারন নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার আগেই পানাম আমিনপুর মাঠে বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমানের হাতে নৌকা প্রতীকে তুলে দিয়েছিলেন শামীম ওসমান ও স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। যে কারনে সাদেকুর রহমান যোগ্য প্রার্থী সেটা প্রমাণ করতে ভেতরগতভাবে সাদেকুর রহমানের পক্ষেই ছিলেন প্রভাবশালী দুই এমপি। শেষ পর্যন্ত এমপি নজরুল ইসলাম বাবু ও সাবেক এমপি কায়সার হাসনাতের জোরালো সমর্থনেও বিজয়ী হতে পারেননি ফজলে রাব্বী।
এবার যে কজন মনোনয়ন প্রত্যাশি রয়েছেন তাদের বেশির ভাগ নেতাই এখন এমপি শামীম ওসমানের আর্শিবাদ পেতে কাজ করছেন। কেউ কেউ মনোনয়ন নিয়ে আসার জন্য শহর কেন্দ্রীক হচ্ছেন আবার কেউ কেউ চিন্তা করছেন এমপি শামীম ওসমান ও এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সমর্থন থাকলে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও বিজয় সন্নিকটে। যাদের মধ্যে একমাত্র গাজী মজিবুর রহমানই ব্যতিক্রম। তিনি তার ত্যাগের বিনিময়ে এবারও বঞ্চিত হওয়ার দশায় নিজেকে নিয়ে গেলেন। মনোনয়নের আগেই তিনি কায়সার হাসনাতকে নিয়ে মিটিং করে বাকিদের কাছে বিরাগভাজন হয়ে গেলেন।
আবার অনেকেই জানিয়েছেন- জেলা আওয়ামীলীগ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিই এখন সোনারগাঁয়ে। সোনারগাঁয়ে সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামকে কোণঠাসা করে রেখেছে জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ। যেখানে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বের লড়াইয়ে নিজেরাই হিমশিম খাচ্ছেন সেখানে তাদের উপর ভর করে নির্বাচনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য গাজী মজিবুর রহমানের জন্য বিরাট ঝুঁকি। যার মধ্যে অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বীর সঙ্গে মাহফুজুর রহমান কালামের সুসম্পর্ক রয়েছে। যদিও গত নির্বাচনে কালাম ভেতরগতভাবে ফজলে রাব্বীর পক্ষে ছিলেন না। এবার কায়সার-কালাম বলয় থেকে গাজী মজিবুর রহমান থাকলেও জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে গাজী মজিবুর রহমানের নাম প্রস্তাব যাবেনা সেটা প্রায় নিশ্চিত।
অন্যদিকে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগীর আহম্মেদ ও কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ঝরা নিজেদের মত করেই কাজ করছেন। নাসরিন সুলতানা ঝরা শীর্ষ নেতাদের ছত্রছায়ার দিকে না গেলেও তিনি মাঠ গুছানোর কাজে ব্যস্ত। ছগীর আহম্মেদ মাঠ গুছানোর সঙ্গে সকল বলয়ের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রেখে যাচ্ছেন। ফজলে রাব্বী এবার জেলার প্রভাবশালী দুই এমপি শামীম ওসমান ও এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর দিকেই বেশি ঝুঁকেছেন। তবে নির্বাচনী মাঠে এখনও নামেননি বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান। যদিও তিনি কয়েকমাস আগেও মিডিয়াতে বলেছিলেন আবারো নির্বাচন করবেন। এখন দেখার বিষয় কি ঘটতে যাচ্ছে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সোনারগাঁও পৌর নির্বাচনে। এবারও কি বিদ্র্রোহী প্রার্থী নাকি নৌকার হবে জয়? নাকি অন্য কোন দলের প্রার্থীর বিজয়?