সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
আমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদ থাকাকালীন সময়ে চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর। সেই দায়িত্ব পালন করে তিনি বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ফিরেছিলেন পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণে। জনগণ তাকে ভালবেসেই অন্ধের মত ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন বারংবার। ভাই আবু নূর মোহাম্মদ বাহাউল ছিলেন জাতীয়পার্টির এমপি। পরবর্তীতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। জাতীয়পার্টিকে পল্টি দিয়ে নৌকায় ওঠে মনোনয়ন আনলেও বাহাউলের ভাগ্যে জুটেনি বিজয়।
অর্থাৎ দল পাল্টানো তাদের পুরো স্বভাব। বাহাউলের আমলে সাদেকুর রহমান গা ভাসিয়েছিলেন জাতীয়পার্টির হয়েই। কখনও কখনও দাবি করতেন আওয়ামীলীগার তিনি। পৌরবাসী মনে করেন বর্তমানে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সাদেকুর রহমান বেশ মেধাবী ও জনপ্রিয়। শারীরিক অসুস্থ্যতার কারনে তাকে সরে যেতে হলো। গত দশটি বছর পৌরসভাকে চালিছেন ঠেলাগাড়ি ভ্যানগাড়ির মত ধাক্কা মেরে মেরে। সঙ্গে তার কিছু খলিফার উত্থান তো ছিলই।
ইতিমধ্যে মেয়র সাদেকুর রহমানের এক খলিফা লগি শাহীন পড়েছে এবার যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামির তালিকায়। বিএনপি ও আওয়ামী ঘরনার ক’জন অঘোষিত পৌরসভার মেয়রের রূপে বসেছিলেন হাটু ঘেরে। যারা এবার ক্ষমতার স্বাদ নিতে মেয়র সাদেকুর রহমানকে সাইজ করতে পল্টি দিতে আগেই জাতীয়পার্টিতে ঢুকে পড়েছেন। এবার তাদের নাচানাচি জাতীয়পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী ডালিয়া লিয়াকতকে নিয়ে।
৩ অক্টোবর শনিবার রাতে মেয়র সাদেকুর রহমান আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না জানিয়ে তার মেয়র প্রার্থী হিসেবে ডালিয়া লিয়াকতের নাম ঘোষণা করেন। কিন্তু কদিন আগেও সাদেকুর রহমান বলেছিলেন তিনি আবারো নির্বাচন করবেন। এমনকি এই ঘোষণার কয়েক ঘন্টা পূর্বেও স্থানীয় লোকাল মিডিয়াকে জানিয়েছিলেন তিনি নির্বাচন করবেন। কিন্তু হটাত করে কি ঘটে গেল তিনি নির্বাচন থেকে সরিয়ে গিয়ে ডালিয়া লিয়াকতকে সমর্থণের ঘোষণা দিলেন? জেলা পর্যায়ের কোন প্রভাবশালী তাকে কোন ধরণের চাপ কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে বসিয়ে দিয়েছে কিনা এমনটা পৌরবাসীর কেউ জানাতে পারেননি।
জানাগেল- শনিবার রাতে মেয়র সাদেকুর রহমানের বাস ভবন গোয়ালদী এলাকায় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা সহ অন্যান্য জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীদের (যারা আগে বিএনপি ও আওয়ামীলীগার ছিল) সামনে তিনি এ ঘোষণা দেন। ঘোষণার সময় মেয়র সাদেকুুুর ডালিয়া লিয়াকতের মাথায় হাত দিয়ে তাকে দোয়া করে বলে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে তার প্রার্থী ডালিয়া লিয়াকত জানান। এর আগে সাদেকুর রহমানের পা ছুয়ে সালাম করেন ডালিয়া লিয়াকত যার পরিচয় তিনি এমপির সহধর্মিনী। যে ভিডিওটি সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে সংরক্ষিত এবং ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে ভিডিওটি।
গত বুধবার মেয়র সাদেকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মৃত্যুর আগে তিনি নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়ে মেয়র নির্বাচন করে মরতে চান। সে সময় তিনি আরো বলেছিলেন, তিনি নৌকা প্রতীক না পেলেও পৌর নির্বাচনে অংশ নিবেন। সেই ঘোষণার দুই দিন পরই তিনি সিদ্বান্ত বদলে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে ডালিয়া লিয়াকতকে প্রার্থী ঘোষণা করেন।
জানাগেছে, গত নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পূর্বে আমিনপুর মাঠে স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ও নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান সাদেকুর রহমানের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়ে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা দেন। কিন্তু নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মনোনিত হোন অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিশাল অংশ ও জাতীয়পার্টি প্রকাশ্যে মেয়র সাদেকুর রহমানের পক্ষে কাজ করলে নির্বাচিত হোন মেয়র সাদেকুর রহমান।
এর আগের নির্বাচনে তিনি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন ছিল না। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ছিলেন গাজী মজিবুর রহমান। ওই নির্বাচনে বিএনপি-জামাত সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন সাদেকুর রহমান। তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে বৈঠকও করেন সাদেকুর রহমান।
পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে সাদেকুর রহমানকে বিএনপি-জামাত সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে সেই বিএনপি জামাত সমর্থিত প্রার্থী ও পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাদেকুর রহমান এবার তার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলেন জাতীয়পার্টির নেত্রী ডালিয়া লিয়াকতকে যিনি লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন।
এদিকে আগামী পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন বেশকজন আওয়ামীলীগ নেতা। এমনটা সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগীর আহম্মেদ ও বদরুন্নেছা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাসরিন সুলতানা ঝরা। একই সঙ্গে গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেন সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন তিনি এবারও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। দলের দুঃসময়ে তিনি এবারও ধানের শীষ প্রতীকের ঝান্ডা হাতে নিতে চান।