সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকেন বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা। মুলত নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার পর আইনজীবীদের আন্দোলন দেখেছে দেশবাসী। তারপর থেকে নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীদের অবস্থান সারাদেশের মাঝেই প্রসংশনীয়। দল ক্ষমতায় না থাকলেও সারাবছরই বেশ আলোচনায় থাকেন বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা। যদিও গত বছর আইনজীবী সমিতির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বিএনপির আইনজীবীরা। তারপর থেকে আগের সেই জৌলুশ ফিরে পাচ্ছেন না এখানকার বিএনপির আইনজীবীরা। তবে এবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠন নিয়ে বেশ তোরজোড় শুরু হয়েছে। তবে দুটি পক্ষ সরাসরি অবস্থান নিলেও একপক্ষ যাচ্ছেন ইলেকশন অপরপক্ষ চাচ্ছেন সিলেকশন।
আদালতপাড়ার রাজনৈতিক সূত্রে- আদালতপাড়ায় বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে দুটি ভাগ রয়েছে। একটি পক্ষের নেতৃত্বে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, অপর পক্ষের নেতৃত্বে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং সাখাওয়াত হোসেন খান মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি যিনি সাত খুনের ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচিত একজন আইনজীবী নেতা। আইনজীবী ফোরামের সদস্য ফরম বিতরণ ও তা পূরণ করার পর কেন্দ্রে দুইভাগে জমা দেয়া হয়। তৈমূর আলম খন্দকার তার বলয়ের ৮৬ জনের ফরম জমা দিয়েছেন। কিন্তু সাখাওয়াত হোসেন খান বলয় থেকে সরকার হুমায়ুন কবির জমা দিয়েছেন ১৫২ জন আইনজীবীর সদস্য ফরম। যেখানে সাখাওয়াত বলয়ে আইনজীবী দিগুণ। অর্থাৎ ভোটাভোটি হলে এতেই ফলাফল অনুমেয়। যে কারনে কেউ ইলেকশন চান আবার কেউ চান সিলেকশন।
জানাগেছে, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের রাজনীতিতে সরে দাঁড়ানোর আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লা। এর আগের কমিটিতে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ফোরামের কর্মকান্ডে সবচেয়ে বেশি খাঁটুনি দিতেন এই খোরশেদ মোল্লা। সেই সঙ্গে সংগঠনের খরচাপাতি যোগানদাতা এবং নিজের পকেট থেকেও করেছেন। কিন্তু এমন অংশগ্রহণমুলক নেতার সংকট তৈরি হয়েছে যখন খোরশেদ মোল্লা ফুললি ফোরামের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন। তিনি সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তিনি আইনজীবী ফোরামের নেতৃত্বে আর আসতে আগ্রহী নন। তিনি তরুণ নেতৃত্ব দেখতে চান। এটার তার কোন রাজনৈতিক কৌশলও নয় বলেও তিনি কঠোরভাবেই জানান।
জানাগেছে, আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠন নিয়ে নানা গুজব রটাতেও ওস্তাদ একটি পক্ষ। সম্প্রতি নিজেরাই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের গুজব রটিয়েছেন আবার নিজেরাই সেই গুজব মাটিচাপা দিয়েছেন। কিন্তু অপর পক্ষের কোন রিএকশন দেখা মিলেনি। মধ্যসারির কিছু নেতাদের মাঝে এই ফোরামের কমিটি গঠনের বিষয়ে আদালতপাড়ায় যে যার মত করে সত্য মিথ্য গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে এর নেপথ্যে একটাই লক্ষ্য তারা সকলেই চান আইনজীবী ফোরামের কমিটি হোক। যদিও একটি পক্ষে বিএনপির আইনজীবীদের দুই গ্রুপের মাঝে সমঝোতা করে কমিটি গঠন করা হোক। আরেকটি পক্ষ চান ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হোক। নীতি নির্ধারকরা চুপসে থাকলেও কে কে প্রার্থী হতে পারেন সে বিষয়ে আলোচনার মাত্রা ১১ অক্টোবর বেড়ে গেছে।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন- সভাপতি পদে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির ও অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ভুঁইয়া। এর মধ্যে গত দুই কমিটিতে সভাপতি ছিলেন সরকার হুমায়ুন কবির যেখানে গত কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন খোরশেদ আলম মোল্লা। আরেক কমিটিতে সেক্রেটারি ছিলেন আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ভুঁইয়া। এদের মধ্যে সরকার হুমায়ুন কবির সভাপতি পদ প্রত্যাশি নিশ্চিত করে সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমি চাই আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠনে নির্বাচন হোক। ভোটের মাধ্যমে আইনজীবীরা আমাকে নির্বাচিত করলে আমি দায়িত্ব পালন করবো। আর যদি অন্য কাউকে নির্বাচিত করে তাহলে আমি তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করবো। তবে এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমত আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর। তিনি সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সামনে আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। এখন যদি ফোরামের নির্বাচন হয় তাহলে নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হবে। আমি চাই সকলের সহাবস্থান এবং ঐক্যবদ্ধ। ফোরামকে ঐক্যবদ্ধ করতে কেন্দ্রীয় যে নির্দেশনা থাকবে সেভাবেই কমিটি করা হোক। আমি সভাপতি পদে আগ্রহী। দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন তাহলে আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি ফোরামকে শক্তিশালী করবো।
এ ছাড়াও সেক্রেটারি পদে আদালতপাড়ায় আলোচনায় রয়েছেন অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির, অ্যাডভোকেট আজিজ আল মামুন ও অ্যাডভোকেট সুমন মিয়া। এদের মধ্যে সেক্রেটারি পদে সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রার্থীতার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন আজিজ আল মামুন ও অ্যাডভোকেট সুমন মিয়া। দুজনেই দলের দায়িত্ব পেলে শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করবেন এবং ফোরামকে শক্তিশালী করতে কাজ করবেন বলেও মতামত ব্যক্ত করেছেন। তবে আজিজুর রহমান মোল্লা ও আবুল কালাম আজাদ জাকিরের প্রার্থীতা নিয়ে আইনজীবীদের মুখে আলোচনায় থাকলেও তারা এখনও এ বিষয়ে মুখ খুলেননি।