সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপির রাজনীতির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক ছিলেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ১৯৯৮ সালের দিকে বিএনপির রাজনীতিতে আসার পর তৈমূর আলম খন্দকারের উত্থানের দিকেও গেলেও আদালতপাড়ার রাজনীতিতে তার জনপ্রিয়তা দিনকে দিন কমেই যাচ্ছে। তবে এর পেছনের কারন চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তৈমূর আলম খন্দকার। এক সময় তৈমূর আলমের অঙ্গুলী ইশারায় আদালতপাড়ায় বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রন হতো। কিন্তু এখন তার জনপ্রিয়তা বিএনপির আইনজীবীদের মাঝে নিম্নগামী। তৈমূর আলমের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা এখানে রাজনীতি করছেন তাদের নেতৃত্বের দূর্বলতার কারনে তৈমূর আলম বলয়ের আইনজীবীর সংখ্যা কমছে বলে অনেকের দাবি।
এভাবে চলতে থাকলে আদালতপাড়ায় তার নাম নেয়ার মত একজন আইনজীবীও থাকবেন না বলেও মন্তব্য করেছেন বেশকজন আইনজীবী। তারা বলছেন- তৈমূর আলম খন্দকারের নিয়ন্ত্রনে আইনজীবীদের সংখ্যা কেন দিনকে দিন কমেই যাচ্ছে। এর সমস্যা চিহ্নিত করে সেই বিষয়ে তৈমূর আলমকে কাজ করা উচিত। মুলত আদালতপাড়ায় বিএনপির আইনজীবীরা দুইভাগে বিভক্ত। যেখানে সিংহভাগ আইনজীবী তৈমূর আলমের নির্দেশনার বাহিরে চলে গেছেন। তার বলয়ে ৮/১০ জন আইনজীবী সক্রিয় থাকলেও এ কজনের মাঝেই খন্ড খন্ড ভাগ। দিন যত সামনের দিকে যাচ্ছে তৈমূর আলমের বলয়ের আইনজীবীর সংখ্যা ততই কমছে।
আইনজীবীরা বলছেন- আদালতপাড়ায় বিএনপির রাজনীতিতে এখন সকলের উপদেষ্টা হিসেবে থাকা উচিত তৈমূর আলম খন্দকারের। কিন্তু তৈমূর আলম খন্দকার বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হয়ে এখন আদালতপাড়ার গুটিকয়েকজন আইনজীবীর নিয়ন্ত্রক সেঁজেছেন। যেখানে সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের নিয়ন্ত্রণে সিংহভাগ আইনজীবীরা।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠনকল্পে বিতরণকৃত সদস্য ফরমেই প্রমাণিত হয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের জনপ্রিয়তা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের চেয়ে দিগুণ কমেছে। তাও ফরম বিতরণে একপক্ষ টেনেটুনে ফরম পূরণ ও আরেকপক্ষের কাছে স্বেচ্ছায় গিয়ে ফরম নিয়ে পূরণের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানাগেল। যার ফলে আবারো নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় নিজের অবস্থানের জানানি দিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান। তবে এই ফরম কেবল যারা মুলত সরাসরি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারাই ফরমের অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আইনজীবী ফোরামের তালিকাভুক্ত সদস্য ফরম কেন্দ্রে পৃথকভাবে জমা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের নেতারা। যেখানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির দুইভাগে আইনজীবীদের তালিকা কেন্দ্রে জমা দেন। কিন্তু হাস্যকর বিষয় হলো তৈমূর আলম খন্দকার যে ক’জন আইনজীবীর নামের তালিকা কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন তার প্রায় দিগুণ নামের তালিকা জমা দিয়েছেন সরকার হুমায়ুন কবির যিনি সাখাওয়াত হোসেন খানের সঙ্গেই রাজনীতি করছেন।
ঘটনা সূত্রে, করোনার পূর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সদস্য ফরম বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় ফরম বিতরণ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের আইনজীবীদের মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে বিএনপির আইনজীবীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে ফরম বিতরণ করেন। অনেকেই দাবি করতেন নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার রাজনীতিতে তৈমূর আলম খন্দকার ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খানের বলয় রয়েছে।
এদিকে দুইভাগে ফরম বিতরণ ও পূরণ করে কেন্দ্রে জমা দেন তৈমূর আলম খন্দকার ও সরকার হুমায়ুন কবির। যেখানে মাত্র ৮৬ জন আইনজীবীর তালিকা জমা দিয়েছেন তৈমূর আলম খন্দকার সেখানে সরকার হুমায়ুন কবির ১৫২ জন আইনজীবীর নামের তালিকা জমা দিয়েছেন। সরকার হুমায়ুন কবির রাজনীতি করেন সাখাওয়াত বলয়ে।
২১ সেপ্টেম্বর এক প্রাপ্তি স্বীকার পত্রের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মাহবুব এ তথ্য জানান।
ওই পত্রে তিনি জানান, ২১সেপ্টেম্বর অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবিরের কাছ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নারায়ণগঞ্জ ইউনিট থেকে ১৫২টি সদস্য ফরম গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের কাছ থেকে ৮৬টি সদস্য ফরম গ্রহণ করা হয়েছে। মোট ২৩৮টি সদস্য ফরম গ্রহণ করা হয়েছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ নাই।
এর আগে গত ২০১৭ সালের ৭ জুন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটি নারায়ণগঞ্জে ২৮৭জন আইনজীবীকে নিয়ে একটি কমিটি ঘোষণা দেন। কমিটিতে অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবিরকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ফোরামের কেন্দ্রীয় বর্তমান কমিটি সারাদেশের কমিটিগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করে সদস্য ফরম বিতরণের কার্যক্রম শুরু করেন।
কমিটি গঠনের পর তৈমূর আলমের অনুগামীরা দাবি করেছিলেন- ২৮৭জনের কমিটি থেকে উপদেষ্টা তৈমূর আলম সহ ১৪৪ জন আইনজীবী পদত্যাগ করেছেন। যদিও ওই সময় অপর পক্ষের অভিযোগ ছিল- আইনজীবীদের টেনে টেনে কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে পদত্যাগের নাটক সাঁজানো হয়েছে। তবে এখন আইনজীবীরা বলছেন- যদি ১৪৪জন আইনজীবী পদত্যাগ করেও থাকে ধরে নিলাম ১৪৪জন আইনজীবী তৈমূর আলমের পক্ষে ছিলেন। তাহলে ফরম বিতরণের সময় হয়ে গেল ৮৬ জন। এই সংখ্যাতেই প্রমাণিত হয় যে তৈমূর আলমের বলয় থেকে আইনজীবীরা সরে যাচ্ছেন।
২৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় অনশন কর্মসূচি পালন করেছিলেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। ওই অনশনে তৈমূর আলম খন্দকার ও আবুল কালামকে নিয়ে মোট উপস্থিত আইনজীবীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২১ জন। অনেক আইনজীবীরা অনশনের সামনে দিয়ে চলে গেলেও তাদের সঙ্গে অনশনে বসেননি। অনেককে ডেকে এনেও বসানো যায়নি। এখন শুরু হয়েছে আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় সাখাওয়াত অনুগামীরা নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবিতে কর্মীসভা করেছেন। কিন্তু তৈমূর আলম অনুগামীরা নির্বাচনের বিপক্ষে গিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে পদ ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। কারন নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে কমিটি হলে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার রাজনীতি থেকে তৈমূর আলম বলয়ের রাজনীতি বিলিন হয়ে যাবে বলে মন্তব্য অনেক আইনজীবীরা।