সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভার আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশিরা পুরোদমে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গোৎসবেও এসব সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন এবং যার যার সামর্থ অনুযায়ী আর্থিক অনুদান প্রদান করেছেন। ওই সময় আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা দোয়া ও ভোট নিয়ে নিয়েছেন।
কিন্তু বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি কাউকেই দেখা যায়নি পূজা মন্ডপগুলো পরিদর্শন করতে এবং আর্থিক সহায়তা তো দুরের কথা। এ কারনে পৌরবাসীর হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই মন্তব্য করেছেন, বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থীর হয়তো হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটের প্রয়োজন নাই। হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারী বলেন, ‘ভোটের সময় ভোট চাইতে আসলে আমরা সরাসরি বলে দিমু।’
জানাগেছে, ২৫অক্টোবর রবিবার মহা নবমীর দিন সোনারগাঁও পৌরসভার প্রতিটি পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন নাগরিক কমিটির সমর্থিত স্থানীয় জাতীয়পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সহধর্মিনী মেয়র প্রার্থী ডালিয়া লিয়াকত। ওই সময় প্রতিটি পূজা মন্ডপে আর্থিক অনুদান প্রদান করেছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। ওই সময় তার সঙ্গে জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
একই দিন রবিবার সন্ধ্যায় পৌরসভার গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী। আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি পূজা মন্ডপগুলো পরিদর্শন করেন এবং সামর্থ অনুযায়ী তিনি আর্থিক সহায়তাও করেছেন।
গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বঞ্চিত মেয়র প্রার্থী ও আগের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় সমর্থিত মেয়র প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমানও পৌরসভার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন। সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে অনেকেই নিশ্চিত করেছেন গাজী মজিবুর রহমানও হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।
অপর মেয়র প্রার্থী নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ঝরাও পৌরসভার প্রতিটি পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে মসজিদের পাশাপাশি মন্দিরেরও উন্নয়ন করবেন সমানতালে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে তিনিও শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
এ ছাড়াও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ছগীর আহাম্মেদও পৌরসভার প্রতিটি পূজা মন্ডপগুলো পরিদর্শন করেছেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। সেই সঙ্গে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করেছেন। ওই সময় তিনি পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করতে গিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন রাস্তাঘাটের বেহাল দশাও পরিদর্শন করেছেন বলেও সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে অনেকেই নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টিকে দূর্গোৎসবে দেখা গেলেও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি কাউকেই দুর্গোৎসবে পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করতে দেখা যায়নি। কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি বিএনপির কেউ পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করতে গিয়েছেন। এ বিষয়ে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী গত নির্বাচনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভই করেননি। তাকেও কোন পূজা মন্ডপে দেখা যায়নি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে- বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে মোশারফ হোসেন হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন।
এ ছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে ফেসবুকে প্রচারণায় থাকা পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লায়ন শফিকুল ইসলাম নয়ন ও উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি রুমা আক্তারকেও কোন পূজা মন্ডপে দেখা যায়নি। এসব কারনে সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকেই বলেছেন, বিএনপির কি তাহলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটের প্রয়োজন নেই? পৌরসভা নির্বাচনে এমপিতেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট টানতে পারেনা বিএনপির প্রার্থী। কিন্তু সামনে নির্বাচনে এই নির্বাচনকে নিয়েও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের বিমাতাসুলভ আচরণ মেনে নেয়া যায়না।
এদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গোৎসবে নেতাকর্মীদের নিয়ে রীতিমত শোডাউন করে মটর শোভাযাত্রা করে পৌরসভার প্রতিটি পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ হোসানাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমানে গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক উপ-সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনকারী মোহাম্মদ হোসাইনও নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচনে মাঠে পুরোদমে নেমেছেন। তারই অংশ হিসেবে তিনিও পূজা মন্ডপ পরিদর্শন ও আর্থিক অনুদান প্রদান করেছেন।