সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জে ২৬ অক্টোবর সোমবার বিদায় দেয়া হলো দুর্গতি নাশিনী দুর্গাকে। শেষ হলো বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী বছর ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে ভক্তরা সজল চোখে বিদায় দিয়েছেন দেবী দূর্গা মাকে। পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের শেষ দিনে সকালে মন্ডপে মন্ডপে দশমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে দর্পণ বিসর্জন এবং শান্তিজল গ্রহণের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয় দেবীর শাস্ত্রীয় বিসর্জন।
এ কারণে নারায়ণগঞ্জে পূজা মন্ডপগুলোতে সোমবার সকাল থেকে বিরাজ করে বিদায়ের করুণ সুর। মাকে বিদায় দিতে সকাল থেকেই চলে প্রস্তুতি। পূজা অর্চনা শেষে তৈরি করা হয় বিদায়ের জন্য। তবে এবার করোনার কারণে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ঘিরে আনন্দ মেলা বাদ দেওয়া হয়। দুপুর থেকেই নারায়ণগঞ্জ শহরের পূজা মন্ডপ থেকে প্রতিমাগুলো গাড়িতে করে নেওয়া হয় শহরের ৩নং মাছ ঘাট এলাকাতে।
এসময় শহরে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। খোলা ট্রাক, পিকআপ ভ্যান সহ বিভিন্ন খোলা যানে করে প্রতিমাগুলো নেওয়া হয় ঘাটে। ৩নং মাছ ঘাটে তৈরি করা হয়েছিল একটি অস্থায়ী মঞ্চ। ওই স্থানে বিসর্জন দেওয়া হয় শীতলক্ষ্যার টলমলে পানিতে।
এছাড়া ফতুল্লার প্রতিমাগুলো বুড়িগঙ্গা, সোনারগাঁও ও আড়াইহাজারের প্রতিমা মেঘনায় বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতি বছর দুর্গতি নাশিনী দুর্গা মায়ের পূজা অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনায় উদযাপন করা হয়। সবাই দুর্গা মাকে আহ্বান করে বলে–‘মাগো, তুমি আমাদের দুর্গতি নাশ করে দাও, আমাদের মানসপটে লালিত-পালিত হিংসা বিদ্বেষ-হানাহানি দূর করে দাও। আমাদের শক্তি দাও, আমাদের শান্তি দাও’। পৌরাণিক মতে, দুর্গাদেবী হলেন ব্রহ্মার মানস কন্যা। যখন সংসারে অসুরের রাজত্ব চলছিল, চারদিকে অসুরের জয়, অসুরের দাপটে মানবকূল, মানবকূল ত্রাহি ত্রাহি করছিল, অসুর তাদের আসুরিক বৃত্তি দ্বারা সবার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল, শান্তি-সমৃদ্ধি তার হিংসার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল।
সেই আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল মানুষের ভাল গুণ বা মানবীয় সত্ত্বা। তখন দেবী দুর্গাকে সৃজন করে ব্রহ্মা তাকে সর্বশক্তিতে ভরপুর করে অসুর বিনাশের জন্য মর্ত্যে প্রেরণ করেছিলেন। তখন দুর্গা দেবী তার দিব্যশক্তির দ্বারা আসুরী শক্তি বা অপশক্তিকে (অসুরকে) পরাভূত করে পুণ:শান্তির জন্য সমর্থ হয়েছিলেন। এ ঘটনাকে ভিত্তি করে সেই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে দুর্গা মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তিতে চিন্ময়ী মূর্তির আরাধনা। এটিকে কেন্দ্র করেই প্রথম থেকে পাক-ভারত উপমহাদেশের তান্ত্রিক গোষ্ঠির সদস্যগণ পালন করে আসছে এই শারদীয় দুর্গোৎসব যা অবশেষে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশেষ করে বাংলাভাষা ভাষী ও বাংলা অঞ্চলের হিন্দুরা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হিসেবে করে যাচ্ছেন।