সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতি বলতে হাসনাত পরিবারের রাজনীতিকেই বুঝানো হতো। একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল হাসনাত পরিবারের নিয়ন্ত্রণেই। কিন্তু বর্তমানে বেশ বেকায়দায় থাকা হাসনাত পরিবারের রাজনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বশেষ ভরসা এখন সোনারগাঁও পৌর নির্বাচন। প্রকাশ্যে হাসনাত পরিবার কোন প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান না নিলেও ভেতরগতভাবে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী নৌকা প্রতীক প্রত্যাশি গাজী মজিবুর রহমানের দিকেই তাদের সুদৃষ্টি রয়েছে বলে জানাগেল। বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে গাজী মজিবুর রহমানের ত্যাগ ও রাজপথে তার ভুমিকা থাকায় এবারও হাসনাত পরিবারের উপরই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওঠতে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন হাসনাত পরিবারের অনুগামীরা।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে হাসনাত পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে ধাক্কা দেন জাতীয়পার্টি থেকে আসা সাবেক এমপি আবু নূর মোহাম্মদ বাহাউল হক। নৌকা প্রতীক পেয়ে তিনি নির্বাচন করলেও জয়ী হতে পারেননি। ওই সময় হাসনাত পরিবার নৌকার বিরুদ্ধে ছিলেন বলে নানা অভিযোগ ওঠেছিল। কিন্তু ওই সময় বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে রাজপথে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রামে ভুমিকা রেখে আলোচনায় আসেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত।
যার ফলশ্রুতিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি বৃহত্তর সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁও এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা প্রতীক পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর কায়সার হাসনাতের ভিন্নরূপে আভির্র্ভূত হোন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করেন তিনি। উন্নয়ন তো তেমন করতেই পারেননি, উল্টো নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
কায়সার হাসনাত এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীই তাকে খুঁজে পেতোনা। তিনি থাকতেন আড়ালে, এমন সুযোগে বৃহত্তর আসনে তৈরি হয় সেভেন স্টার নামের সাত জন ব্যক্তির নিয়ন্ত্রিত আসন। সোনারগাঁয়ে কায়সার হাসনাত শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেননি।
যার ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনটি আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামীলীগ। সেই সুযোগে ওই সময় একেবারেই অপরিচিত জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হোন। সেই থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ধস নামতে থাকে। একই সঙ্গে হাসনাত পরিবারের রাজনীতিও বেকায়দায় পড়তে থাকে। তবে সোনারগাঁয়ে লিয়াকত হোসেন খোকা অবস্থান নেয়ার শুরুর দিকে কখনও কায়সার হাসনাত বা কখনও আওয়ামীলীগ নেতা মাহফুজুর রহমান কালামই সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে পোক্ত অবস্থান তৈরি করতে এমপি খোকাকে সহযোগীতা করেছেন। আজকে সেখানে কায়সার হাসনাত ও কালামের রাজনীতিই পড়েছে হুমকির মুখে।
ভিন্নদিকে জানাগেছে, উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে এখানকার রাজনীতিতে নতুন সূচনা হয়। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক ও ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে জেলা আওয়ামীলীগ। এই কমিটির বিরোধীতা করেন কায়সার হাসনাত ও কালাম সহ জেলা আওয়ামীলীগের বেশকজন নেতা। কিন্তু পরবর্তীতে চূড়ান্তভাবে কেন্দ্র থেকে এই কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। এতে আরো বেকায়দায় পড়ে যায় কায়সার ও কালামের রাজনীতি।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সোনারগাঁও আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী দেয়া হয়নি। মহাজোটের প্রার্থী মনোনিত হোন এমপি খোকা। ওই নির্বাচনে বিদ্র্রোহী প্রার্থী হোন কায়সার হাসনাত। কিন্তু নির্বাচনের দুদিন আগে নাটকীয়তায় কায়সার হাসনাতকে বসিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে যা হাসনাত পরিবারের ইতিহাসে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেনি। ওই নির্বাচনে কালাম ছিলেন মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষেই।
ওই ঘটনার পর কেউ কেউ বলেছেন, কায়সার হাসনাত নিজেই হাসনাত পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেননি। এমপি হয়ে মানুষের পাশে থেকে কাজ করলে তিনি থাকতেন সোনারগাঁবাসীর মাথার মুকুট। মানুষের মাঝে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলে এই আসনটি আওয়ামীলীগেরই থাকতো বলে মন্তব্য স্থানীয়বাসীর। তবে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কায়সার হাসনাতের চাচা মোশারফ হোসেনকেই নৌকা প্রতীকে মনোনিত করা হয়। বর্তমানে তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই নির্বাচনে দলের বিরোধীতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হোন মাহফুজুর রহমান কালাম।
এমন পরিস্থিতিতে এবার চলে আসছে সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচন। নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগীর আহাম্মেদ, জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক গত নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী ও কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ঝরা। গত নির্বাচনে এটি ফজলে রাব্বীকে নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন কায়সার হাসনাত। মনোনয়ন নিয়ে আসলেও জয় ছিনিয়ে আনতে পারেননি। তবে এবার প্রকাশ্যে কারো পক্ষে না থাকলেও হাসনাত পরিবারের সুদৃষ্টিতে গাজী মজিবুর রহমান। ভেতরগতভাবে তার পক্ষেই হাসনাত পরিবারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানাগেল।
জেলার শীর্ষ নেতারা বলছেন- পৌরসভা নির্বাচনে যদি হাসনাত পরিবার কোন প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে নৌকা প্রতীক ছিনিয়ে এনে প্রার্থীকে জয়ী করতে পারে তাহলে সোনারগাঁয়ে তাদের রাজনীতি আগের ধারায় ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকবে। এক্ষেত্রে যদি তারা নৌকা প্রতীক আনতে এবং প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হোন তাহলে বর্তমান অবস্থার মতই থাকবে সোনারগাঁয়ে হাসনাত পরিবারের রাজনীতি। যে কারনে পৌরসভা নির্বাচনটি হাসনাত পরিবারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন পৌরবাসী।