সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের মেঘনা শিল্পনগরীর ইসলামপুর এলাকায় ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান টাইগার সিমেন্ট কারখানায় আবারো স্থানীয় প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন। ৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আতিকুল ইসলাম ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অবৈধভাবে দখলে রাখা প্রায় ১৪ বিঘা খাস জমি উদ্ধার করেন।
পরে প্রশাসন দখল মুক্ত করে সরকারী সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। ইউএনও টাইগার সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর ভেতরে দখলে রাখা সরকারী খাস জমি থেকে একটি টিন সেড গোডাউন ও পাথরের স্তুপ অপসারণ করে তা দখলমুক্ত করেন।
এর আগে গত রবিবার বিকেলে টাইগার সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর দখলে রাখা সরকারী সম্পত্তি উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসিল্যান্ড আল মামুন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। ওইদিন সময় স্বল্পতার কারনে ও বুলডোজার বিকল হয়ে পরায় টাইগার সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর ভেতরের অবৈধ দখলে রাখা সকল স্থাপনা উচ্ছেদ না করে অভিযান সমাপ্ত করেন। তবে সরকারি সম্পত্তিতে টাইগার সিমেন্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ যে সকল অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন তা দখলমুক্ত করে দিতে ৩ দিনের সময় বেধে দিয়ে নোটিশ প্রদান করেন উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময়ে দখল ছেড়ে না দেওয়ায় বৃহস্পতিবার পুনরায় এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন।
এদিকে সরকারী সম্পত্তি দখলের পাশাপাশি হাজী সেলিম ব্যাক্তি মালিকানাধীন ১০ জনের প্রায় ৫ বিঘা সম্পত্তি সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে দখলে নিয়ে নেন। এ সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য ৪ নভেম্বর বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে স্বারকলিপি দিয়েছেন ওই ভূক্তভোগী ১০জন ব্যাক্তি। এছাড়াও দেশের প্রভাবশালী শিপইয়ার্ড কোম্পানি আনন্দ শিপয়ার্ড এন্ড স্লিপওয়েজ কোম্পানিরও ১৪ শতাংশ জমি দখল করে নেন সংসদ সদস্য হাজী সেলিম।
ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ভূক্তভোগী আলী ইসলাম জানান, হাজী সেলিম প্রভাব খাটিয়ে তার ২ বিঘা সম্পত্তি দখলে নিয়ে নেয়। এ বিষয়ে একাধিকবার তার মালিকানাধীন টাইগার সিমেন্ট কারখানায় গেলেও আমার জমি ক্রয় করে নেননি হাজি সেলিম। আমি তার বিরুদ্ধে দুটি মামলাও দায়ের করেছি। এছাড়াও আরো ৯ জনের জমি দখল করে হাজী সেলিম।
এছাড়াও ইসলামপুর এলাকায় প্রভাবশালী কামাল হোসেন ওরফে নেতা কামালের দখলে থাকা প্রায় ৩ বিঘা খাস জমি উদ্ধার তৎপরতা চালায় প্রশাসন। ইসলামপুর গুচ্ছগ্রাম এলাকায় কামাল হোসেনের অবৈধভাবে গড়ে তোলা মার্কেট আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই জমিতেও জেলা প্রশাসকের পক্ষে সরকারি সম্পত্তি উল্লেখ করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন।
এসময় অস্থায়ী আওয়ামীলীগ কার্যালয় লিখা সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড অপসারণ করে ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযান পরিচালনার সময় উপস্থিত ছিলেন- পিরোজপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আতাউর রহমান,মোগরাপাড়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন ও ভূমি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যরা।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম জানান, সরকারী ১৪ বিঘা খাস জমি দখলমুক্ত করতে বেঁধে দেওয়া তিনদিন সময় শেষ হওয়ার পর পুণরায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। হাজী সেলিমের দখলে থাকা প্রায় ১৪ বিঘা জমি থেকে একটি টিন সেড গোডাউন ও পাথরের স্তুপ অপসারণ করে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চিহ্নিত করা ওই সরকারি সম্পত্তিতে টিনের দেয়াল স্থাপন করা হবে। এছাড়াও ওই সম্পত্তি সবসময় দখলমুক্ত রাখতে স্থানীয় পিরোজপুর ভূমি কার্যালয়ের মাধ্যমে তদারকি করা হবে।
সম্প্রতি ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম নৌ বাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে একেএকে জমি দখলের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে থাকে। এর পর থেকেই হাজি দখলে থাকা বিভিন্ন সরকারী ওবেসরকারি সম্পত্তি উদ্ধার তৎপরতা চালায় প্রশাসন।