সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল এখনও ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে তফসিল ঘোষণার আগেই পৌরসভা নির্বাচনে বেশ ফ্যাক্টর হয়ে ওঠেছেন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি ছগীর আহাম্মেদ। বিশেষ করে যখন ছগীর আহাম্মেদকে নিয়ে মাঠে নেমেছেন সিআইপি ফেরদৌস ভূঁইয়া মামুন, তখন জাতীয়পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ও তার সহধর্মিনী মেয়র প্রার্থী ডালিয়া লিয়াকতের প্রধান প্রতিদ্বন্ধি হয়ে ওঠেছেন ছগীর আহাম্মেদ। সিআইপি মামুন ভুঁইয়া তার বক্তব্যে যখন বলেছেন, ‘এমপি শামীম ওসমান আমাদের বটগাছ, এমপি সেলিম ওসমানও ছায়া দিয়েই রাখেন। আমরা তাদের নিচেই আছি, তাদের দলেই আছি, তাদের ছায়াতলেই আছি।’ তার এমন বক্তব্যে ধারণা করা যায় ওসমান পরিবারের আর্শীবাদ ছগীর আহাম্মেদের দিকেই ঝুকছে কিনা।
কারন হিসেবে কেউ কেউ সান নারায়ণগঞ্জকে বলছেন, বেশকটি অনুষ্ঠানে সিআইপি ফেরদৌস ভূঁইয়া মামুন ও এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের বিষয়টি পৌরবাসীর মাঝে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যে কারনে পৌরসভার প্রতিটি এলাকায় ছগীর আহাম্মেদের প্রচারণা হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মামুন ভুঁইয়ার আহ্বানে তার বাড়িতে মতবিনিময় সভায় কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি সেটাই প্রমাণ করেছে। বিশেষ করে মামুন ভুঁইয়ার সমর্থনের কারনেই ছগীর আহাম্মেদ এখনই ফ্যাক্টর হয়ে ওঠেছেন পৌর নির্বাচনে। ওই মতবিনিময় সভা থেকে সিআইপি মামুন ভুঁইয়া তার বক্তব্যে অনেকটা স্পষ্ট করেছেন তিনিও ছগীর আহাম্মেদের জন্য নৌকা প্রতীকের দাবি তুলেছেন। তিনি এও বলেছেন, ছগীর আহাম্মেদ নৌকা প্রতীক পেলে তিনি পৌরবাসীকে নিয়ে নির্বাচনী নামবেন।
পৌরবাসীর সূত্রে জানাগেছে, আগামী পৌরসভা নির্বাচনে পৌর নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে ডালিয়া লিয়াকতের নাম ঘোষণা করেছেন বর্তমান পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান ভূঁইয়া ও সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মোল্লা। ফলে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন সেটা প্রায় নিশ্চিত। তবে সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকেই বলেছেন এখানে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লায়ন শফিকুল ইসলাম নয়ন ও উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর রুমা আক্তারের নাম শোনা গেলেও তারা এখনও নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় নামেননি। বেশ সম্ভাবনা রয়েছে গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেনকেই আবারো মনোনিত করা হতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ছগীর আহাম্মেদ ছাড়াও নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন আরো তিনজন হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশি। তারা হলেন গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী, কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বদরুন্নেছা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাসরিন সুলতানা ঝরা, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও ২০১১ সালে আওয়ামীলীগের দলীয় সমর্থিত মেয়র প্রার্থী গাজী মজিবুর রহমান। নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি এই ৪ জনই যার যার অবস্থান থেকে এখনই সর্বোচ্চ চেষ্টায় নেমেছেন। তারাও হাল ছাড়ছেন না। প্রতিটি মনোনয়ন প্রত্যাশির যার যার দিক থেকেই শক্ত লবিং রয়েছে। শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে জুটবে নৌকা প্রতীক সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে পৌরবাসীকে। একই সঙ্গে ডালিয়া লিয়াকতের শক্ত প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী কে হতে যাচ্ছে সেটাও দেখার অপেক্ষায় পৌরবাসী।
অন্যদিকে গত ২৩ অক্টোবর পৌরসভার গোয়ালদি এলাকায় সিআইপি মামুন ভুঁইয়ার বাড়িতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘সোনারগাঁয়ে প্রবাসী ঢুুকে গেছে, একজন থানাবাসী প্রবাসী, আরেকজন পৌরবাসী প্রবাসী, ওয়ান ভোট ওয়ান ক্যান্ডিডেট। বিষয়টি পৌরবাসীর পেইন হচ্ছে।’ মামুন ভুঁইয়ার এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
এরপর গত ৩১ অক্টোবর শনিবার রাতে পৌরসভার রয়েল রিসোর্টে পৌর নাগরিক কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সহধর্মিনী ডালিয়া লিয়াকতের নাম ঘোষণা করেন বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান। ওই সময় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা তার বক্তব্যে ফেরদৌস ভুঁইয়া মামুনকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, অংহকার করবেন না, অহংকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না, বহু জমিদার দেখেছি, বহু সিআইপি দেখেছে খোকায়, নারায়ণগঞ্জে জন্ম আমার, যেখানে দেশের বেস্ট বেস্ট ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেন, সেখানে রাজনীতি করেছি, বহু সিআইপি আমাকে সালাম দিয়ে কথা বলে, আমাকে সিআইপিগিরি যেনো না দেখান, আমাকে সিআইপিগিরি যেনো না দেখায়।’
৬ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে পৌরসভার গোয়ালদি এলাকায় ফেরদৌস ভুঁইয়া মামুনের বাসায় কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে তিনি এই মতবিনিময় করেন। ওই সভায় মামুন ভুঁইয়া বলেন, কয়েকদিন আগে একটি রেস্টুরেন্টে মিটিং হচ্ছিল যার কিছু ভিডিও আমি দেখেছি, এক ভদ্রলোক জনপ্রতিনিধি তিনি বলতেছিল সিআইপিরা আমাকে সালাম দিয়ে কথা বলে, আসলে সিআইপির ইলাভোরেশন (পূর্ণাঙ্গ রূপ) কি মে বি সে হয়তো জানেনা। সিআইপি হতে হলে কারো পায়ে ধরে, হাত-পা ধরে কান্না করে সিআইপি হওয়া যায়না। সিআইপি হতে হলে সিআইপির মত যোগ্যতা লাগে। তো একজন সিআইপি সম্পর্কে কথা বলতে হলে ভেবে চিন্তে বলা উচিত, আবার ভয় দেখায় তিনি নারায়ণগঞ্জে এই করবে সেই করবে।
সিআইপি মামুন ভুঁইয়া আরও বলেন, আমাদের একটি ব্যবসায়ীদের সংগঠন আছে বিকেএমইএ, সেই সংগঠনের নেতা হলো আমাদের প্রাণপ্রিয় এমপি সেলিম ওসমান সাহেব, তো উনার কাছে বিষয়টি আমি শেয়ার করবো, এখনও করিনি, ইনশাহআল্লাহ করবো। তারপরে আমরা নারায়ণগঞ্জে ব্যবসা করি, যেখানে শামীম ওসমান সাহেব আমাদের বটগাছ, উনি সব সময় আমাদেরকে ভালবেসে কথা বলে, আমরা উনাদের নিচেই আছি, উনাদের সাথেই আছি, উনাদের দলেই আছি। সোজা কথা উনারা আমাদেরকে সব সময় ছায়া দিয়েই রাখেন। সেলিম ওসমান সাহেব আমাদেরকে ছায়া দিয়েই থাকেন, সেখানে এমন কোন ব্যক্তি জন্মায় নাই, সে নারায়ণগঞ্জে আমাদেরকে ছিড়ে ফেললো খাইয়া ফেললো, হুমকি ধমকি হুংকার এগুলো আমরা সহ্য করি না। আমরা এ সমস্ত হুংকারকে প্রশ্রয় দেইনা। আপনারা নির্ভয়ে ভোট দিবেন। গত দুই নির্বাচনে আপনারা যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছেন সেভাবেই ভোট দিতে পারবেন, এর কোন ব্যতয় ঘটবে না।